পিডিবির বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প দ্বিগুণ দরে

0
809

অনলাইন ডেস্ক : মাত্র দুই মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) খরচ করছে ৪২ কোটি টাকা। এই দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ দেখানো হয়েছে ইউনিট প্রতি ১৬ টাকা। অন্যদিকে, সম্প্রতি ভারতের কোম্পানি ‘সিদ্ধান্ত উইন্ড এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড’ ফেনীর সোনাগাজীতে ৩০ মেগাওয়াটের একটি বেসরকারি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য সরকারকে ১১ দশমিক ১ সেন্ট বা ৯ দশমিক ৪৯ টাকা দরে দাম পরিশোধ করবে (প্রতি ডলার ৮৫ দশমিক ৫০ টাকা ধরে)। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে বেসরকারি উৎপাদনকারীর তুলনায় সরকারি উৎপাদনকারীর অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ ৬ দশমিক ৫১ টাকা।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, ‘নেদারল্যান্ডের উইন্ড টারবাইন বিশ্বসেরা। সেখানে প্রতি মেগাওয়াট টারবাইনের দাম পড়ে ৮ থেকে সাড়ে আট কোটি টাকা। অন্য সব খরচসহ ১০ কোটি টাকার বেশি খরচ পড়ার কথা নয়।’ তিনি পিডিবির প্রকল্পটির বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের দেশে রাস্তা হয় দ্বিগুণ দামে। অন্য কাজও বাড়তি দামে করা হয়। তাহলে বায়ু বিদ্যুৎ কেন কমে করা হবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে শুরু থেকেই নতুন খাত দেখিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী, সরকারি উৎপাদনকারীরাও সুযোগ নিচ্ছে। এসব দেখে সস্তায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ খুলছে না।
শুরুতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনেও প্রতি ইউনিটের দর ১৭ থেকে ১৮ সেন্ট দেখানো হয়েছে, এখন যা নেমে এসেছে ১০ সেন্টে। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এই দর নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, সরকারিখাত কম দরে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে একটি উদাহরণ সৃষ্টি হতো। সবাই সেটিই অনুসরণ করতো। কিন্তু ঘটছে এর উল্টো। সরকারি প্রতিষ্ঠান বেশি দরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় দাম কমছে না সহজে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সাধারণত বাতাসের গতিবেগ ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫ মিটার/সেকেন্ড হলেই বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ে। কিন্তু ৫ থেকে ৬ মিটার/সেকেন্ড বাতাসের গতিবেগ হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করা সম্ভব। এখন আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে। একটি টারবাইন দিয়ে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫ থেকে ৬ মিটার/সেকেন্ড বাতাসের গতিবেগ রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু শুরুতেই বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনায় ঝুঁকিতে পড়ছে বায়ু বিদ্যুৎ খাত।
এ প্রসঙ্গে পিডিবির নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পটি উৎপাদনে আসবে। প্রতিটি ৫০০ কিলোওয়াটের চারটি টারবাইন বসানো হবে। কেন্দ্রটি বসাতে পিডিবির নিজস্ব তহবিল থেকে ৪২ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। শুরুতে যে সম্ভাব্যতা জরিপ করা হয়েছে, তাতে দাম ১৬ টাকা প্রতি ইউনিট পড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যমুনা সেতুর সিরাজগঞ্জ পাড়ে উইন্ড মিলগুলো বসানো হচ্ছে। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে জমি ইজারা নেওয়া হয়েছে।’ সেখানে বাতাসের গতিবেগ ৫ মিটার/সেকেন্ড বলে জানান তিনি।