পিঠা উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে কেএমপি কমিশনার

0
73

নিজস্ব প্রতিবেদক
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিকাল ৫ টা ১৫ মিনিটে জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ, খুলনা বিভাগের আয়োজনে সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং খুলনা বিভাগীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমী খুলনা জেলা কার্যালয় প্রাঙ্গণে খুলনা বিভাগীয় জাতীয় পিঠা উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পিঠা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম—সেবা উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা বিভাগীয় জাতীয় পিঠা উৎসবের সমাপনী উৎসবে সভাপতিত্ব করেন করেন জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের খুনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ্ আলম।
খুলনা বিভাগীয় জাতীয় পিঠা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার বলেন, “পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশিতে বিষম খেয়ে, আরো উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।” —কবি সুফিয়া কামাল ‘পল্লী মায়ের কোল’ কবিতায় গ্রাম বাংলার পৌষ পার্বণে শীতের পিঠা খাওয়ার শাশ্বত রূপ অঙ্কন করেছেন এভাবেই। আমাদের এই বঙ্গ দেশে হাজার বছর হাজার বছর ধরে পিঠা—পুলির ইতিহাস রয়েছে। অন্নদা মঙ্গল ময়মনসিংহ গীতিকা পাঠ করলেও দেখা যায় সেখানে নানা ধরনের পিঠা পুলির কথা বলা আছে। এই অঞ্চলে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর শাসনের ফলে তাদের কৃষ্টি কালচার এবং বাঙালি কৃষ্টি কালচার মিলে এক বহুত্ববাদী অসাম্প্রদায়িক কৃষ্টি কালচারের উন্মেষ ঘটেছে। হাজার বছর ধরে এখানে সমস্ত ধর্ম এবং জাতি পেশার মানুষ একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা হলো আমাদের বড় শক্তি। আর এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি অন্যতম মুখ্য অংশ হলো পিঠা উৎসব। শীত চলে গেছে এখন বসন্তকালে এই পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বসন্তের সৌন্দর্যময় বর্ণনা কবি সাহিত্যিকগণ তাদের লেখনীতে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। এই বসন্তকালে ভাষা আন্দোলন এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। বাঙালি চেতনার জাগ্রত মহাপুরুষ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ০৭ মার্চ এই বসন্তের দিনে বজ্র কন্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন সেই অমীয় বাণী “এবারের সংগ্রাম সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম”। ক্ষণিক বিনোদনের মাধ্যমে মানুষে মানুষে গড়ে ওঠা সম্পর্কের বড় প্রয়োজন আজ। বর্তমান প্রজন্ম আজ পিঠা পুলির পরিবর্তে নামিদামি রেস্টুরেন্টর ফাস্টফুডে আসক্ত হয়ে হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। আমাদের মা—বোনেরা, নানী—দাদীরা মিলে পিঠা পুলির তৈরি সময় সেগুলোতে তাদের যে স্নেহের পরশ থাকতো ফাস্টফুডে তার বড্ড অভাব। বাঙ্গালির আবহমান সংস্কৃতির অংশ পিঠা উৎসব থেকে আমাদের সন্তানেরা বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য আমাদের সন্তানরা যেন বাঙ্গালি সংস্কৃতিকে ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল ধরণের শ্রেণী বৈষম্যমুক্ত, সাম্যবাদী, উন্নত—সমৃদ্ধ, নিরাপদ, মাদক মুক্ত এবং জঙ্গি—সন্ত্রাসমুক্ত একটি জাতি গঠন আশাবাদ জানিয়ে পিঠা উৎসবের মতো বাঙালির এই সংস্কৃতি সমস্ত জনপদে যত ছড়িয়ে পড়বে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারপর বক্তব্য সমাপ্ত করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. শাহাদাৎ হোসেন দিপু; খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম; অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের খুলনা বিভাগীয় সদস্যসচিব শামীমা সুলতানা শীলু—সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।