পাইকগাছা-কপিলমুনির চায়ের দোকানে ক্যারামের আড্ডায় শিক্ষার্থীসহ যুব সমাজ

0
351

শেখ নাদীর শাহ্:
করোনাকালের দীর্ঘ শিক্ষা বিরতির ফাঁকে পাইকগাছার প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা আসক্ত হয়ে পড়েছে ক্যারাম নামের অভিনব জুয়ায়। করোনায় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এখন বই-খাতা ছেড়ে ঝুঁকে পড়েছে চায়ের দোকানের ক্যারামের আড্ডায়।
উপজেলা সদর থেকে শুরু ১০ টি ইউনিয়রন ও ১ টি পৌর সভার অধিকাংশ চায়ের দোকানে এখন বাড়তি বিনোদন মেটাতে সংযুক্ত হয়েছে ক্যারাম বোর্ড ও টেলিভিশন। ক্যারাম বোর্ড ও টেলিভিশন ছাড়া যেন চায়ের দোকান বড্ড বেমানান। যে সব দোকানে বিনোদনের বাড়তি সংযোজন নেই,সেখানে লোক সমাগমও কম। বাধ্য হয়ে তাই দোকানিরাও দোকান প্রতি ১ থেকে ২/৩ টি পর্যন্ত ক্যারাম বোর্ড সংযোজন করেছে। চায়ের নেশা মেটাতে দোকানে আগত ক্রেতা সাধারণের চেয়ে ক্যারাম বোর্ডের খেলোয়াড়ের সংখ্যাই বেশি। তবে অধিকাংশ বোর্ডে চলছে অভিনব জুয়া। গেম প্রতি বিভিন্ন চুক্তিতে খেলোয়াড়রা খেলা করছেন। এসময় ক্যারামের নির্দিষ্ট হারে ভাড়ার বাইরে তারা চা-সিগারেট,পান,বিস্কুট,ভাঁজার পাশাপাশি কোমল পানীয়, ডিম খাচ্ছেন। গেম শেষ হলেই মিটিয়ে দিতে হয় ঐ বিল। উভয় দিক থেকে লাভবান হওয়ায় দোকানিররাও বেশ আগ্রহের সাথে তাদের সমীহ করেন। সূত্র জানায়, ক্যারামের নিয়মিত খেলোয়াড়দের একটি বড় অংশ জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত। অনেক সময় দোকানির অগোচরে তারা গোপনে চুক্তি ভিত্তিক খেলা করেন। যাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র থেকে শুরু করে ভ্যান চালক ও শ্রমজীবি। যারা বই-খাতা ছেড়ে ও কাজ বাদ দিয়ে সময় কাটান ক্যারামের আসরে। এছাড়া আবার অনেকে আছেন যারা ক্যারামে চান্স না পেয়ে কিংবা শুধু মাত্র সময় কাটানোর জন্য সাথে আনা এ্যানড্রয়েড ফোনে খেলছেন নানা ধরনের গেম। যাদের কেউই মানছেননা ন্যূনতম সামাজিক দূরত্বটুকু। ফলে আসন্ন শীত মৌসুমে মারাতœক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বিস্তিীর্ণ জনপদের সাধারণ মানুষ। এক কথায় স্কুল- কলেজ বন্ধ থাকায় তৃণমূলের অভিভাবকদের নজরদারি হ্রাস পাওয়ার সুযোগে তারা নিজেদের অজান্তেই মেতে উঠেছেন ভয়াবহ জুয়ায়। সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে দেখা যায়, প্রত্যুষে দোকান খোলার সাথে সাথেই তারা ভীঁড় জমান চায়ের দোকানে। সারা দিন বোর্ডে ব্যস্ত থাকায় অনেকে বাড়ি ফেরেন মধ্য রাতে। আবার অনেকে রয়েছেন দুপুরের লাঞ্চ সেরে ফের হাজির হচ্ছেন চায়ের দোকানের বোর্ডে। খোজ নিয়ে জানাযায়, স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশকে ম্যানেজ করে বোর্ড প্রতি ২/৩ শত টাকা চুক্তিতে বোর্ড পরিচালনার পারমিশন নিয়ে তারা ঐ সকল জুয়ার বোর্ড চালান। উপজেলার গদাইপুর, গোলাবাড়ি, কপিলমুনি, নাছিরপুর মোড়, কাশিমনগর (নদী তীরবর্তী চায়ের দোকান), দাস পাড়ার ফুর্তির মোড় ও মানিকতলায় চায়ের দোকানে ক্যারাম বোর্ডে জুয়ার আসর জমজমাট হয়ে উঠেছে। যদিও বরাবরই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে থাকেন। এদিকে ক্যারাম বোর্ডের আসরে লোক সমাগমের বাড়তি সুবিধা নিয়ে কাশিমনগরের একটি দোকানে মাদকদ্রব্য বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। যেখানে ভোর হতে শুরু করে মধ্য রাত অবধি চলে ক্যারামের আড্ডা। এরপর রাত বাড়ার সাথে সাথে বিকিকিনি হয় গাঁজা। প্রতি গেমে সংশ্লিষ্ট দোকানের শ’ শ’ টাকার বিলের পাশাপাশি ১০০/২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বাজিতে হেরে আর্থিকভাবে মারাতœক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন আগতদের একটি অংশ। প্রতিটি দোকানি নামমাত্র পুঁজি বিনিয়োগ করে বোর্ড ভাড়া ও মালামাল বিক্রি থেকে ২/৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এতে দোকানিদের একটি অংশ লাভবান হলেও মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কোমলমতি শিক্ষার্থী ও খেঁটে খাওয়া শ্রমজীবিরা। সচেতন অভিভাবক মহল চায়ের দোকানে ক্যারাম নামের জুয়ার আড্ডা বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।