পাইকগাছায় বিলুপ্তির পথে আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো শিমুল

0
975

শেখ নাদীর শাহ্:
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে রাঙ্গিয়ে ফুটেছে রক্তরাঙ্গা শিমুল ফুল। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতানে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়ায় ফুটন্ত শিমুল ফুলের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সকলকেই বিমোহিত করছে।
তবে খুলনার পাইকগাছায় কালের বিবর্তনে যেন বিলুপ্ত হতে চলেছে ফাগুনের চোখ জুড়ানো খুন রাঙা অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ। মাত্র ক’য়েক বছর আগেও উপজেলার প্রত্যেকটি বাড়ির আঙ্গিনায়,রাস্তার ধারে, পরিত্যাক্ত জমিতে প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেতো। প্রস্ফুটিত প্রতিটি শিমুল গাছ মনে করিয়ে দিত প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনী বার্তা।
শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম “বোমবাক্স সাইবা লিন”। এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। শিমুল গাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হওয়ায় বেশ মোটাও হয়। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেও দেড়শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে শিমুল গাছ। শীত শেষে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। বৈশাখ মাসে প্রাকৃতিকভাবে গাছে ফলগুলো ফেটে বাতাসে তুলার সাথে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই শিমুল গাছের জন্ম হয়।
উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের প্রবীণ ব্যক্তি আলহাজ্জ্ব এরফান আলী মোড়ল জানান, অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে না লাগালেও পূর্বে আমাদের গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। গ্রামের মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত। তাছাড়া শিমুল গাছের ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বালিশ, শীতের লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। অপ্রয়োজনীয় মনে করে কারণে অকারণে কর্তনের ফলে এখন আর আমাদের গ্রামে আগের মত শিমুল গাছ নজরে পড়ে না।
সূত্র জানায়,ম্যাচের কাঠি উৎপাদনে গেওয়ার বিকল্প হিসেবে শিমুল কাঠের প্রয়োজনে সারা দেশের ন্যায় পাইকগাছায়ও শিমুল গাছ উজাড় হচ্ছে। সুন্দরবনের গেওয়া গাছ কর্তন নিষিদ্ধ হলে গত কয়েক বছরে উপজেলায় আশংকাজনকহারে হ্রাস পেয়েছে শিমুল গাছ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মানুষ বন উজাড় করছে। তাছাড়া ইট ভাটা ও টালি কারখানা গুলোতে কাঠের জোগান দিতেও গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। শিমুল তুলার ব্যবহার সাস্থ্যের পক্ষে ভালো হলেও বানিজ্যিকভাবে উপজেলার কোথাও শিমুল গাছ বা তুলার চাষ করা হয়না। বাণিজ্যিকভাবে শিমুল তুলার চাষ করা হলে স্বল্পখরচে যেমন মোটা অংকের অর্থ পাওয়া যাবে পক্ষান্তরে তা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।