পাইকগাছায় পুকুরে মিললো শিশু শ্রাবনের লাশ : আটক ৪

0
155

পাইকগাছা প্রতিনিধি:
পাইকগাছায় গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় শ্রাবন নামে ৩য় শ্রেনীর ফুটফুটে এক শিশু’র লাশ মিললো পুকুরে। মর্মান্তিক এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খুমেক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। এএসপি (ডি-সার্কেল) মোঃ হুমায়ুন কবির. ওসি মোঃ এজাজ শফী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ নিহত শিশুর মা, সৎ পিতা, মামা-মামী ও নানাকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছেন। বুধবার রাত ৮টার দিকে গড়ইখালীতে বাড়ীর পুকুর থেকে লাশ উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানিয়েছেন, গড়ইখালী বাজারের বাসিন্দা ও স্থানীয় পোষ্ট অফিসের ডাক পিয়ন সাঈদুর গাইনের মেয়ে রতœার সাথে বিগত ২০১১ সালে ঝিনাইদহের মাসুদ রানার সাথে বিবাহ হয়। বিয়ের পর এ দম্পতির শ্রাবন নামে এক শিশু জন্ম গ্রহন করেন। ৩য় শ্রেনীর ছাত্র শ্রাবন নানার বাড়ীতে মায়ের সাথে থাকতেন। জানা গেছে, বিগত সাড়ে ৩ বছর পুর্বে মাসুদের সাথে রতœার ছাড়াছাড়ি হবার পর গড়ইখালীর মৃত খানজাহান সরদারের ছেলে আমিনের সাথে রতœা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এটা ছিল রতœার তৃতীয় বিবাহ। শ্রাবনের মা রতœা জানান, বুধবার দুপুরে পাশের বাড়ীতে আমার ছেলে সহ স্বপরিবারে দাওয়াত খেতে যাই। বৃষ্টি থামার পরপরই আছরের আজানের পুর্ব মুহুর্তে শ্রাবন বাজারে খেলতে যায়। এ সময় রতœা ও তাঁর বাবা সহ বর্তমান স্বামী আামিন গড়ইখালী ইউনিয়ন পরিষদস্থ নির্মাণাধীন নতুন বাড়ীর কাজ দেখভালে যান। রতœার মা যায় হাঁস খুঁজতে। সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ ছিল না।

এ সময়ে শ্রাবনের সন্ধান না পেয়ে স্থানীয় মসজিদের হুজুর মাইকে হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন। খোজাখুঁজি চলে চারিদিকে। এদিকে শ্রাবণের নানার বারান্দায় ১টি ও বসত ঘরে আর ১টি শ্রাবনের নতুন স্যান্ডেল দেখে নানীর সন্দেহ বেড়ে যায়। রাত ৮ টার দিকে বাড়ী সংলগ্ন পানি ভরা পুকুরের ঘাটের নিচে থেকে এ শিশুর গলায় দোলনা বানানো কালো ফিতার ফাঁস দেওয়া মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ সময় পরনে জিন্সের প্যান্ট ও গায়ে গেঞ্জি পরা ছিল। খবর পেয়ে ঐ রাতেই থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা ধারনা করছেন ঘটনার সময় বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা শ্রাবণকে মেরে পুকুরে লাশ ফেলে দিতে পারে। শিশু শ্রাবনের মৃত্যুর পিছনে কি কি কারন থাকতে পারে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন পুলিশ। মায়ের একাধিক বিয়ের কারনে শত্রুতা, শ্রাবনের প্রতি নানা-নানীর অতি যতœ, রতœার নামে নতুন বাড়ী নির্মান সহ কয়েকটি সুত্র ধরে পুলিশী তদন্ত শুরু হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা জানান, শিশু শ্রাবন ছিলেন অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির মানুষ। বিক্ষুব্দ মানুষ শ্রাবন হত্যার বিচার দাবী করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল গাইন বলেন, শ্রাবনের খোঁজাখুঁজি থেকে শুরু করে পুকুর থেকে লাশ উত্তোলন পর্যন্ত সবই প্রত্যক্ষ করেছি। রহস্যময় মৃত্যুর পিছনে পরিবারের কেউ না কেউ হয়তো কিছু না কিছু জানে বলে তিনি মন্তব্য করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম কেরু বলেন, শিশু শ্রাবনের অকাল মৃত্যুর ঘটনায় এলাকার মানুষ ভীষন মর্মাহত ও কষ্টে আছে। তিনি দোষীদের শাস্তি দাবী করেন।

রহস্যজনক মৃত্যু প্রসঙ্গে ওসি মোঃ এজাজ শফী ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা বলে জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই বোঝা যাবে এটা কোন ধরনের মৃত্যু। এএসপি (ডি-সার্কেল) মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ইতোমধ্যে নিহত শিশুর মামা-মামী বাদশা গাইন দম্পতি, সৎ পিতা আমিন সরদার ও মা রতœাকে জিজ্ঞাসাবদের জন্য থানা হেফজতে নেওয়া হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ হয়নি।

খুলনা টাইমস/এমআইআর