পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন

0
359

পাহাড় কেটে ভূমির উপরিভাগ নষ্ট করাসহ মানমাত্রা বহির্ভূত অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নির্গমনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ, অপরিশোধিত বায়ু নির্গমনের মাধ্যমে বায়ু দূষণের প্রমাণ পাওয়ায় চট্টগ্রামের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অন্যদিকে, দুর্ঘটনায় ফুটো হয়ে তেল ছড়িয়ে কর্ণফুলী নদী দূষণের অপরাধে তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি দেশ-১’ কর্তৃপক্ষকে তিন কোটি টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। আমরা পরিবশে অধিদপ্তরের এমন তৎপরতাকে সাধুবাদ জানাই।
বাংলাদেশে যেসব প্রকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায় সেগুলোর কয়েটি বাদে বেশিরভাগেই দেখা যায় এসব দুর্যোগের জন্য মানবসৃষ্ট কারণই বেশি দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট একের পর এক বিপর্যয় বাংলাদেশকে আঘাত করছে। এসবের ফল হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী। একদিকে মূল ফসলে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না, ফসলের প্রকৃতি পরিবর্তন করে কৃষককে টিকে থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে এর ফলে সর্বস্ব হারানো মানুষ বাস্তুচ্যূত হচ্ছে। জীবিকার প্রয়োজনে তারা বিভিন্ন শহরের বস্তিতে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। এর ফলে যে শুধু ওইসব মানুষের জীবন যাত্রায় নানান পরিবর্তন হচ্ছে তা নয়, পরিবর্তিত হচ্ছে সামাজিক কাঠামো। একটি সমাজের কাঠামো যদি স্বাভাবিক নিয়মে পরিবর্তন না হয়ে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা মানুষের কোনো কর্মকা-ের মাধ্যমে জোর করে পরিবর্তিত হয় বা হতে বাধ্য করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে খারাপ ফলই বয়ে আনে।
জলবায়ু পরিবর্তনে শুধু যে মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা নয়, দেশে প্রাকৃতিক পরিবর্তনও হচ্ছে। অর্থাৎ ষড়ঋতুর বাংলাদেশে যে প্রাকৃতিক ধারাবাহিকতা ছিলো, যার ফলে আমাদের প্রাকৃতিক গঠন ও প্রকৃতির অন্যান্য উপাদান হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে উঠেছে, আর তার সঙ্গে আমাদের শারিরিক ও মানসিক সকল কিছু নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। এর পরিবর্তনের ফলে আমাদের শারিরিক যেমন অনেক সমস্যা হচ্ছে তার পাশাপাশি একটা মানসিক বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। তাছাড়া, প্রাকৃতিক এই পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ভেঙ্গে যাচ্ছে দেশের কৃষিনির্ভর সমাজ ও জীবন ব্যবস্থা। এখানেও তাই আসছে পরিবর্তন। রাষ্ট্র ও সমাজের এ ধরনের পরিবর্তনগুলো নানানভাবে নানান প্রতিক্রিয়া তৈরি করে সমাজে।
ভবিষ্যতে নতুন অর্থনীতির একটি সমাজ ও পরিবর্তিত প্রকৃতিকে মোকাবিলা করে সুস্বাস্থ্যের একটি সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান করার পথ খুঁজে বের করা দরকার। আর বাংলাদেশের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে একটি হলো পরিবেশ দূষণ। এটি এখনই যে পরিমাণ ক্ষতি করে ফেলেছে তা অব্যহত থাকলে ভবিষ্যতে চরম মূল্য দিতে হবে। একারণে শুধু পরিবেদবাদী সংগঠনগুলোই নয়, সরকারের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।