নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ এসেছে বাজারে, দামও কমেছে

0
374

খুলনাটাইমস: দীর্ঘ ২২ দিন ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞার নির্ধারিত সময় গত বুধবার ১২টায় শেষ হয়েছে। দীর্ঘ সময় পর রাজধানীর বাজারে ইলিশ এসেছে, দাম রয়েছে সাধ্যের মধ্যেই। এদিকে, বাজারে ইলিশের আগমনে কমেছে অন্য মাছের দাম। এসব মাছও কেজিপ্রতি ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নিম্নমুখী রয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ, মিরপুর, বাসাবো, শ্যামলী, খিলগাঁও কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে, ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে, ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে তিন পিসে কেজি এমন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময়ের আগ মুহূর্তে এসব বাজারে এক কেজি ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে, ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে, ৫০০ গ্রাম প্লাস ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে তিন পিসে কেজি এমন ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে আর জাটকা ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে। ইলিশ মাছের আগমনে কমেছে অন্য সব মাছের দাম। মাছ ভেদে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বাজারের সব মাছের দাম। এসব বাজারের প্রতিকেজি (আকার ভেদে) রুই (বার্মিজ) বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি রুই ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা, মৃগেল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, পাঙাস ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, কই ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া কেজিপ্রতি শিং ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৪০০ থেকে ৬৫০, বাইন মাছ (দেশি) ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, বাইন মাছ (নদী) ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, বাইলা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, কাচকি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, মলা ২২০ থেকে ২৮০, পুঁটি (দেশি) ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে মালিবাগ বাজারের খুচরা মাছ বিক্রেতা মো. আনোয়ার বলেন, অন্য বছরের এ সময় ইলিশের দাম বেশ চড়া থাকে। এবার ইলিশের আগমন ঘটলেও দাম ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে রয়েছে। তার মতে, বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম হলেও বিক্রির পরিমাণ না বাড়ায় দাম কমেছে। পাশাপাশি বাজারে ইলিশের আগমনে কমেছে অন্য সব মাছের দামও। একই বাজারের ক্রেতা খালেদা আক্তার বলেন, এখন পর্যন্ত ইলিশের দাম দেখে কমই মনে হচ্ছে। বাজারে ইলিশ এসেছে অনেক ক্রেতা হয়তো এখনও জানতে পারেনি। তাই তারা কিনছেন না। এজন্য হয়তো দাম কম। তবে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রয়েছে তারা হুট করেই মাছের দাম বাড়ায়-কমায়। তবে এমন বাজার থাকলে সব শ্রেণীর ক্রেতার জন্যই ভালো। মিরপুরের বড়বাগ কাঁচাবাজারে ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে। আর এক কেজি বা তার চেয়ে সামান্য বেশি ওজনের ইলিশের দাম ছিল ৮০০ টাকা। প্রজনন মৌসুমে ইলিশ রক্ষার জন্য ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর ইলিশ শিকার, পরিবহন, মজুদ এবং বিক্রি ছিল নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে ঢাকার বাজারে এক কেজি মাপের ইলিশ ১০০০-১২০০ টাকায় এবং তার চেয়ে ছোট ইলিশ ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। বড়বাগ কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা আহাদ আলী বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর গত বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকার বাজারে প্রচুর ইলিশ আসতে শুরু করেছে। হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় মোকামের দাম কমে গেছে। গত বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন দর ছিল ৮০০ টাকা, গতকাল শুক্রবার দাম আরও কমে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই বিক্রেতা বলেন, অনেকে আগেই ইলিশ ধরেছিলেন, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে বিক্রি করতে পারেননি। সেই মাছও এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা সজীব বলেন, ইলিশের দাম আগের চেয়ে কম দেখতে পাচ্ছি। অতি সম্প্রতি ইলিশের দাম এতটা কম কখনও দেখিনি। একটি ইলিশ কিনতে এসে শেষ পর্যন্ত এক হালি কিনে ফিরতে দেখা যায় পঞ্চাশোর্ধ শাহীন আহমেদকে। তিনি বললেন, দামে একটু সস্তা দেখে ১৫শ টাকায় এক জোড়া নিতে চাইলাম। বিক্রেতা পরে আরেক জোড়া ধরিয়ে দিল। অর্থাৎ, তিন হাজার টাকায় এক কেজি মাপের চারটি ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরেছেন শাহীন। বাসাবো বাজারের বিক্রেতা তিতাস জানালেন, মাঝারি ইলিশ ৬০০-৭০০ টাকা এবং কেজি মাপের বা তার বড় ইলিশ ৬০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের দাপটে কাঁচাবাজারে অন্য মাছের দাম সামান্য কমেছে। মিরপুরের বড়বাগ বাজারে মাঝারি আকারের রুই মাছ ২৮০ টাকা, গ্রাসকার্প ২৪০ টাকা এবং মৃগেল ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের আইর মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়, কোরাল মাছ ৫০০ টাকা এবং চিংড়ির কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহের বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১২৫ টাকায়। সোনালী জাতের মুরগি আগের মতই প্রতি কেজি ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ গত সপ্তাহের তুলনায় বাড়লেও দামের হেরফের হয়নি। শ্যামলীর একটি কাঁচা বাজারে বড় আকারের প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, উচ্ছে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা এবং পেঁপে বিক্রি ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল। রান্নার অন্যতম অনুষঙ্গ পেঁয়াজের দাম তিন সপ্তাহ আগেই অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গতকাল শুক্রবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৪০-১৫০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।