নগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে হিযবুত তাহরীর খুলনাঞ্চলের প্রধানসহ গ্রেফতার ৪

0
91

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রবিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় কেএমপি’র সদর দপ্তরস্থ পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা কর্তৃক গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ অভিযানে খুলনা মহানগরী থেকে বিপুল পরিমান উগ্রবাদী বই, লিফলেট ও জঙ্গী সংশ্লিষ্ট ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর এর খুলনা অঞ্চলের প্রধানসহ সক্রিয় ৪ জন সদস্য গ্রেফতার সংক্রান্তে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেন।


কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার বলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সব সময় অবৈধ অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, জঙ্গী, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুসহ সকল অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। গত কয়েক মাসে খুলনা মহানগর পুলিশ কর্তৃক বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, বেশ কিছু অস্ত্র এবং এ সংক্রান্তে অপরাধীদের গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস টিম গত ২৫ নভেম্বর দিবাগত রাতে খুলনা মহানগরীর হরিণটানা থানাধীন খানজাহান নগর এলাকা হতে কুষ্টিয়া সদর থানাধীন পোড়াদহ সন্তোষপুর নিবাসী মো: আতিয়ার রহমান ও শাহিদা খাতুন দম্পতির ছেলে এবং সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন আ/এ ৩য় ফেজের ৭নং রোডের ৮৩ নং বাসা সোহেল কবির এর নিশি নীড় নামক বাড়ির ভাড়াটিয়া মোঃ আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকি (৩৬), হরিণটানা থানাধীন ৩১, শাহ-ই-শিরিন সড়ক, খানজাহান নগর, জনৈক ফকির রেজা উদ্দিন এর বাড়ির ভাড়াটিয়া এবং নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার ১৮৩ গোপিনাথপুর, লক্ষীপাশা নিবাসী শেখ মহিউদ্দিন ও আছিয়া পারভীন শিউলি দম্পতির ছেলে মোঃ শাকিল আহম্মেদ (২৬), হরিণটানা থানাধীন ৩১, শাহ-ই-শিরিন সড়ক, খানজাহান নগর, জনৈক ফকির রেজা উদ্দিন এর বাড়ির ভাড়াটিয়া এবং পটুয়াখালী জেলা মির্জাগঞ্জ থানার গোলখালী গ্রামের মোঃ আজম খান ও শাহনাজ আক্তার দম্পতির ছেলে মোঃ রিজভী আজিম খান (২৭) এবং হরিণটানা থানাধীন শাহ-ই-শিরিন সড়ক, খানজাহান নগর, বেদার সাহেবের এর বাড়ির ভাড়াটিয়া ও ঝিনাইদহ সদর থানাধীন কবি গোলাম মোস্তফা সড়ক নিবাসী মৃত মতিয়ার রহমান ও মোসাঃ রেহেনা পারভিন দম্পতির ছেলে মেহেদী হোসেন সালিত (২৪)’কে ৪ টি ল্যাপটপ,০৬ টি মোবাইল ফোন, ২ টি পেনড্রাইভ, ১ টি এটিএম কার্ড এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘হিজবুত তাহরীর’ সংশ্লিষ্ট উগ্রবাদী বই, লিফলেট ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।


তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এবং উদ্ধারকৃত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও ডকুমেন্ট পর্যালোচনায় জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ খুলনা অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তহারীর এর নীতি আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল, মূলত তারা প্রচলিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও সংবিধান মানে না। এ লক্ষ্যে তারা সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবি পর্যায়ে এবং বিশেষত স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষর্থী, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং সমাজের মেধাবী মানুষদের উগ্রবাদী আদর্শে প্রভাবিত করে জঙ্গি কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে শতভাগ ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়।
তিনি এই সময় আরও বলেন যে, এদের মধ্যে মোঃ আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকি(৩৬) মূলত খুলনা অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম প্রচার প্রসারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার নিজ বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। তার বাবা ধান-চাল ব্যবসায়ী। তিনি কুষ্টিয়া সরকরি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এর পর ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ঢাকা এর ফার্মেসী বিভাগ হতে অর্নাস সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে যান। ফলশ্রæতিতে ইতোপূর্বেও ২০১১ ও ২০১৩ খ্রিঃ ডিএমপি’র গুলশান থানা এবং ২০১৫ সালে ডিএমপি’র ভাটারা থানা কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে যথাক্রমে ৩, ৭ ও ১৩ মাস কারাভোগ করেন। তিনি তার সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে নির্দেশনা গ্রহণপূর্বক জুম মিটিং ও গোপন বৈঠকের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ এবং রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বর্তমানে রোজডেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সোনাডাঙ্গা ১ম ফেজ, সোনাডাঙ্গা মডেল, কেএমপি, খুলনাতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থেকে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
মোঃ শাকিল আহম্মেদ(২৬)’র বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরাকারি কর্মচারী। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বিগত ০৬/০৭ মাস যাবৎ তিনি হিজবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। তিনি লোহাগড়া, নড়াইল সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ হতে অর্নাস ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে সরকারি চকুরীতে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন।
মোঃ রিজভী আজিম খান(২৭), পিতা-মোঃ আজম খান। তার নিজ জেলা পটুয়াখালী। বাবা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করেন এবং মা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। বিগত ৬/৭ মাস যাবৎ তিনি হিজবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা (বিজ্ঞান বিভাগ) হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ হতে অনার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি সরকারি শিক্ষক হিসেবে প্যারেন্টন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সোনাডাঙ্গায় কর্মরত আছেন।
মেহেদী হোসেন সালিত(২৪), পিতা-মৃত মতিয়ার রহমান। তার নিজ জেলা ঝিনাইদহ। তার পিতা মৃত। মাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষিকা। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বিগত ৬/৭ মাস যাবৎ তিনি হিজবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। তিনি সরকারি কেসি কলেজ, ঝিনাইদহ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন।
উল্লেখ্য যে, মোঃ আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকি(৩৬) এর সাথে ৬/৭ মাস আগে মোঃ শাকিল আহম্মেদ(২৬), মোঃ রিজভী আজিম খান(২৭) ও মেহেদী হোসেন সালিত(২৪) গণের পরিচয় ঘটে। এরপর থেকেই তার নির্দেশনায় উল্লেখিত আটক ব্যক্তিগণ জুমসহ বিভিন্ন অ্যাপস্ এবং প্রটেকটিভ টেক্সটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর এর জন্য সদস্য সংগ্রহ ও জঙ্গিবাদের দীক্ষা প্রদান চালিয়ে যাচ্ছিলো। পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন এর সাথে তাদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়ায় তাদেরকে আটক করা হয়। আটকের পর জব্দকৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিশ্লেষণ ও আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর এর সাথে জড়িত আরো অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে আপতত তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে হরিণটানা থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতকারী, জঙ্গী, জুয়া, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার রয়েছে। অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর।
এ সময় কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ সাজিদ হোসেন; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল) মোছাঃ তাসলিমা খাতুন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত); বিশেষ পুলিশ সুপার (সিটিএসবি) রাশিদা বেগম, পিপিএম-সেবা (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত); ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিবি) বি.এম নুরুজ্জামান, বিপিএম (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত); ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই) এম এম শাকিলুজ্জামান (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত); অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান, পিপিএম-সেবা (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) এবং অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) শেখ জয়নুদ্দীন, পিপিএম-সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।