ধ্বংসের হার উদ্বেগজনক কৃষিজমি রক্ষায় দ্রæত ব্যবস্থা নিতে হবে

0
107
গণপরিবহনে নারী হয়রানি অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না কেন?

টাইমস সম্পাদকীয় : দেশে কৃষিজমির পরিমাণ খুব দ্রæত কমছে, যা উদ্বেগজনক। ১৯৭৬ সালে দেশে কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৫০ হেক্টর। ২০০০ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে কৃষিজমি কমেছে তিন লাখ ২১ হাজার ৯০৯ হেক্টর বা ০.১৩৭ শতাংশ। পরের ১০ বছরে কৃষিজমি কমেছে এর কয়েক গুণ, ০.৭৮২ শতাংশ বা ছয় লাখ ৮৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর। ২০১০ সালে কৃষিজমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৭ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৭ হেক্টর। ধারণা করা হচ্ছে, তার পরের ১০ বছরে কৃষিজমি কমার হার আরো কয়েক গুণ বেড়েছে। এক খবরে দেখা যায়, শুধু চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় গত এক দশকে কৃষিজমি কমেছে দুই হাজার হেক্টরের বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ক্রমবর্ধমান হারে কৃষিজমি কমে যাওয়া দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে ঘরবাড়ির চাহিদা। কিন্তু সেই বৃদ্ধি হচ্ছে সমতলে। কৃষিজমিতে তৈরি হচ্ছে বাড়ি। সেই সঙ্গে আছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা আবাসন প্রকল্পগুলো ফসলি জমির মাঠে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিচ্ছে। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে একটি প্লট কেনার জন্য। একই সঙ্গে গড়ে উঠছে নানা ধরনের শিল্প। সবচেয়ে ক্ষতিকরভাবে বাড়ছে ইটখোলা। প্রতিনিয়ত দেশের আনাচকানাচে গড়ে উঠছে অসংখ্য ইটখোলা। ইটখোলা শুধু কৃষিজমি কমাচ্ছে না, কৃষিজমির স্থায়ী ক্ষতিও করছে। সাধারণত কৃষিজমির ওপর এক-দেড় ফুট মাটি সবচেয়ে উর্বর থাকে। এখানে প্রচুর পরিমাণে উপকারী জীবাণু থাকে, যেগুলো ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে। ইট তৈরির মাটি জোগানোর জন্য ফসলি জমির ওপরের এই স্তরটি কেটে নেওয়া হয়। এতে জমির উর্বরাশক্তি হারিয়ে যায় এবং বহু বছর লাগে পুনরায় উর্বরাশক্তি ফিরে পেতে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করেছেন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ও বালুচর ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় এক ডজনের বেশি ইটখোলা রয়েছে। এসব ভাটার জন্য দিনে ও রাতে তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রভাবশালী মাটিখেকোদের কাছে এলাকার দরিদ্র কৃষকদের প্রতিবাদ কোনো গুরুত্বই পাচ্ছে না। তাঁরা এসব তিন ফসলি জমির মাটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাঁরা জানান, ফসলের মাঠে বা মাঠের পাশে থাকা ইটখোলার ছাই ও ধোঁয়ার কারণেও ফসল নষ্ট হচ্ছে। জাতীয় কৃষিনীতি ১৯৯৯-এ অকৃষি খাতে কৃষিজমির ব্যবহার নিরুৎসাহ করা হয়েছে। কৃষিজমি রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। কৃষিজমি সুরক্ষাসংক্রান্ত বেশ কিছু আইনও রয়েছে। এর পরও ক্রমবর্ধমান হারে কমছে কৃষিজমি। স¤প্রতি জাতীয় সংসদে ‘কৃষিজমি (যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ) বিল-২০২২’ নামে একটি বেসরকারি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। আমরা মনে করি, কৃষিজমি রক্ষায় আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্রæত বন্ধ করতে হবে এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা।