ধানের বাম্পার ফলন, হাসি নেই কৃষকের মুখে

0
714

আজিজুর রহমান, দাকোপ থেকে :
খুলনার দাকোপ উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও দাম না থাকায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। হাটবাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬২০ টাকায়।

এ অঞ্চালে অঘ্রায়নের প্রথম দিক থেকে শুরু হয়েছে ইরি জাতের ধান কর্তন। মোটা ধান কিছুটা কাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে ধান কাটার কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। ধান কাটার পাশাপাশি চলছে মাড়াই ও বিক্রি। পরিবারের সকল কেনাকাটা এবং ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য কৃষক তাকিয়ে থাকে আমন ধানের দিকে। সেই ধানের বাজার মূল্য অস্বাভাবিক হ্রাস পাওয়ায় চোখে সর্ষেফুল দেখতে শুরু করেছে উপজেলার কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ২০ টাকা, যা প্রতি মণে দাঁড়ায় প্রায় ৮০০ টাকা। আর এই ধান হাটে এখন বিক্রি হচ্ছে ছয়শত টাকায়। ধান বেচা-কেনার দু’টি বড় হাট হল বাজুয়া বাজার এবং চালনা বাজার। ওই হাটে হাজার হাজার মণ ধান বেচা কেনা হয়।
গত মঙ্গলবার বাজুয়া হাট ও বুধবারে চালনা হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবস্তা (৬০ কেজি) ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। এছাড়া বাজারে তেমন ক্রেতা না থাকায় ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকের মধ্যে কয়েকজন দাম না পাওয়ায় ধান বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান। কৃষকের কষ্ট দেখার যেন কেউ নেই।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রায় ১৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এসব জমি থেকে প্রায় ৮৩ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে বলে আশা করছে দফতরটি। তাদের ধারণা চলতি মাসের মধ্যে প্রায় সব জমির ধান কাটা শেষ হবে। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৯৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। কিন্তু ধানের দাম না পাওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে।

উপজেলার কৈলাশগঞ্জ গ্রামের কৃষক কালিপদ মণ্ডল বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান রোপন থেকে মাড়াই পর্যন্ত খরচ হয় ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। খরচ তো উঠছে না বরং প্রায় এক হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে প্রতিবিঘা জমিতে।

ধানের ফলন ভালো হওয়ায় ভীষণ খুশি বাজুয়া গ্রামের কৃষক রমেশ মণ্ডল। তিনি বলেন পাঁচ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলাম। ব্যয় হয়েছে ৪৫ হাজার টাকার মত। কিন্তু ধানের বাজারের যে অবস্থা তাতে তার ব্যাংক ঋণ পরিশোধ হবে না। এখন তিনি ধার-দেনা পরিশোধের জন্য অন্য কিছু করে পরিবার নিয়ে সারা বছর কিভাবে চলবে তাই ভাবছেন।

সুতারখালি গ্রামের কৃষক আলামিন গাজী জানান, তিনি প্রায় সাতবিঘা জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। এই ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬২০ টাকায়। এখন ধান বিক্রি করলে অনেক ক্ষতি। তাই বিক্রি না করে রেখে দিয়েছেন তিনি।

খাটাইল গ্রামের কৃষক শেখ বাবুল আক্তার বলেন, ‘এক মণ ধান বিক্রি করে একজন মজুরের টাকা পাওয়া যায় না। ধান আবাদ করে যদি দাম পাওয়া না যায় তাইলে কৃষকের কোমর ভেঙে যাবে।’

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান খুলনাটাইমসকে বলেন, এবার প্রতি কেজি আমন ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে ২০ টাকা। এ হিসাবে মণপ্রতি খরচ দাঁড়ায় ৮০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, সরকারের ধান ক্রয় অভিযান শুরু হলে ধানের দাম বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বছর সরকার ২৩ টাকা ৭৫ পয়সা কেজিদরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।