দ্রুত টিকা সরবরাহে চীনের প্রস্তাবে বাংলাদেশের সায়

0
172

টাইমস ডেস্ক:

দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাভাইরাসের টিকা দ্রুত সরবরাহে একটি সংরক্ষণাগার গড়ে তুলতে চীনের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই প্রক্রিয়া হলো ‘ইমার্জেন্সি কোভিড ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি’। দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশকে এই কাঠামোতে যোগ দিতে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ চীনের নেতৃত্বে ছয়টি দেশ নিয়ে গঠিত হতে পারে ইমার্জেন্সি কোভিড ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি ফর সাউথ এশিয়া।

যে পাঁচটি দেশকে চীন প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলো হলো আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এ কাঠামোতে যোগ দিতে ‘নীতিগতভাবে সম্মতি’ জানিয়েছে। ঢাকার এই স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিতে যোগ দিতে কোনো আপত্তি নেই। সম্মতি জানিয়েছে প্রস্তাব পাওয়া অন্য দেশগুলোও।

তিনি বলেন, অনেক সময় বিভিন্ন দেশে হঠাৎ হঠাৎ ভ্যাকসিনের ঘাটতি দেখা যায়। তখন তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে টিকার দরকার হতে পারে। এজন্য চীন এমন একটি স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি তৈরি করতে চায়, যাতে জরুরি সময়ে এই স্টোরেজ থেকে টিকা সরবরাহ করে প্রয়োজন মেটানো যায়।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের জন্য এখন সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে ভারতের ওপর। কিন্তু দেশটি বর্তমানে টিকা রপ্তানী বন্ধ রেখেছে, ফলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি পুরোপুরি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

এ উদ্যোগ থেকে ভারত শেষ পর্যন্ত বাদ যাবে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা এ বিষয়টি সম্পর্কে এখনো জানে না। কারণ প্রস্তাবটি এসেছে চীনে পক্ষ থেকে এবং তারাই এ নিয়ে বলতে পারবে।

সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কোভিড-১৯ এর টিকা সবার জন্য সহজলভ্য করার তাগিদ দিয়েছেন। চীন এখন চাইছে, দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশে যদি কোভিড-১৯ এর টিকা জরুরি ভিত্তিতে দরকার হয়, তাহলে যেন তা দ্রুততার সঙ্গে সরবরাহ করা যায়।

তবে এই স্টোরেজ সুবিধা কোন দেশে তৈরি হবে, সেটা এখনো নির্ধারণ হয়নি এবং এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে চীনা সরকারের কাছে বাংলাদেশ বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ টিকা সংগ্রহের জন্য সব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।

মোমেন জানান, চীনের সঙ্গে ভ্যাকসিন আনা নিয়ে কথা চলছে। প্রাথমিকভাবে চীন বাংলাদেশকে কিছু ভ্যাকসিন ফ্রি দেবে, সংখ্যাটা ৫-৬ লাখের মতো হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন বলছে, আমাদের ভ্যাকসিন ডব্লিউএইচও কখন অনুমোদন দিবে আমরা জানি না। তবে এটা ১০০ মিলিয়নের বেশি লোক এটা ব্যবহার করেছে, ৮০টা দেশে আমরা রপ্তানি করেছি। ৬৩ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এটা গ্রহণ করেছে। কারও কোনো অসুবিধা হয় নাই, এটাই একটা প্রমাণ। আবার যেসব দেশ টিকা নিয়ে গেছে, ডব্লিউএইচও তাতে কিছু মনে করেনি।

প্রসঙ্গত, অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত বছরের পাঁচ নভেম্বর যে চুক্তি হয়েছিল তাতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তিন কোটি ডোজ টিকা রফতানি করবে এবং সে অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা পাচ্ছে না। এ পর্যন্ত ভারত থেকে টিকা এসেছে মোট এক কেটি দুই লাখ ডোজ। এরমধ্যে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে গত ২১ জানুয়ারি প্রথমে আসে ২০ লাখ ডোজ। সরকারের অর্থে কেনা টিকার প্রথম চালানে ২৫ জানুয়ারি আসে ৫০ লাখ ডোজ, ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ আসে আরও ২০ লাখ ডোজ এবং সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ আসে ১২ লাখ ডোজ। অর্থাৎ, ভারত থেকে কেনা ও উপহার মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ।

দেশে গত সাত ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। গত ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয় টিকার দ্বিতীয় ডোজ। তবে ভারত থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য চুক্তির ৩০ লাখ এবং মার্চ মাসের ৫০ লাখ— অর্থাৎ চুক্তির ৮০ লাখ টিকা এখনও দেশে আসেনি। এপ্রিল মাসে টিকা আসার সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত নেই।