খুলনাটাইমস অনলাইন ডেস্কঃ ঈদ মানে উৎসব, ঈদ মানেই আনন্দ। এই আনন্দ ভাগাভাগি ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে গ্রামে ছোটে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাদ যান না রাজনীতিবিদরাও। বছরব্যাপী রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকা নেতারা ঈদের দিনও ব্যস্ত সময় পার করেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে। আর এবারের ঈদটি ভোটের আগে শেষ ঈদ হওয়ায় দেশের প্রধান তিন বড় দল আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে এর গুরুত্ব একটু বেশি।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়ই সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সিনিয়র নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে নির্দেশ দিয়েছেন।আওয়ামী লীগ সরকারের বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা ঈদুল আজহা উদযাপন করতে গিয়েছে নিজ নিজ এলাকায় গিয়েছেন। যার যার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন দলের এমপিরা।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদুল আজহা পালন করবেন গণভবনে তার সরকারি বাসভবনে। এদিন সকালে তিনি রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, পেশাজীবীসহ সর্বস্তকরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভোলায় তার গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবেন। প্রতিবারের মতো জনগণের সঙ্গে মিলেমিশে ঈদ করতে গত রোববার তিনি ভোলা গেছেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ইতোমধ্যে এলাকা ঘুরে এসেছেন। তার নির্বাচনী এলাকার মানুষ এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রায় প্রতিটি জনপদে গিয়েছেন। এলাকার এতিমখানায় কোরবানির জন্য পশু কিনে দিয়েছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ফরিদপুরের তার নির্বাচনী এলাকা ভাঙ্গার মানুষদের সঙ্গে কাটান। আসছে ঈদে তিনি এলাকাতেই থাকবেন বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নসিম প্রতি বছর কোরবানির ঈদ করেন তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে। এরইমধ্যে তিনি এলাকায় চলে গেছেন। গ্রামেই কোরবানি দেবেন। ঈদের দিন নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এবার ঈদ নিজ এলাকাতে ঈদে থাকবেন। গত বুধবার তিনি টাঙ্গাইলের নিজ এলাকা গেছেন। যাবেন প্রতিটি ইউনিয়নে। ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করছেন।
আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ পবিত্র হজ পালনে সস্ত্রীক সৌদি আরব অবস্থান করছেন। ঈদে তিনি সেখানেই থাকবেন। তবে যাওয়ার আগে টানা এলাকায় কাটিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ঈদ করবেন তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। ঈদের আনন্দ নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে ভাগাভাগি করে পরদিন চট্টগ্রাম শহরে আসবেন।
এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষ্যে বিএনপির সিনিয়র নেতা ও সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ছুটে গিয়েছেন তাদের নির্বাচনী এলাকায়। বেশিরভাগ নেতারা নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকার গরিব ও দুস্থদের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন। নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তারা।
জানা গেছে, কারাগারে থাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে ঈদ পালন করবেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ করবেন। তিনি মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁওয়ে যাবেন এবং ঢাকায় ফিরবেন শুক্রবার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নেয়াখালীতে, ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ঢাকায় ঈদ উদযাপন করবেন বলে জানা গেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু নিজ এলাকা নোয়াখালীতে ঈদ উদযাপন করবেন।
বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ কুমিল্লায়, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বরিশালে, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন নরসিংদীতে, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী লক্ষীপুরে ঈদ করবেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, ঈদের দিন বেলা সাড়ে ১১টায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সিনিয়র নেতারা বিএনপির প্রতষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এছাড়া ঈদের দিন বিকালে সিনিয়র নেতারা কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ ঢাকায়, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম চট্টগ্রামে, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি ঢাকায়, মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া নরসিংদী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইলে ঈদ উদযাপন করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ঈদ উদযাপন করতে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতারাও ছুটে গেছেন জনগণের কাছে। ঈদ উদযাপন করার জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইতোমধ্যে ছয় দিনের জন্য রংপুরে গেছেন। সেখানেই ঈদ উদযাপন করবেন। পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ঈদ উদযাপন করবেন লালমনিরহাটে। মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের ঈদ পালন করবেন। আবদুল করিম জামে মসজিদ ঈদগাহে নামাজ পড়বেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি ঈদের খুশি দোহার-নবাবগঞ্জের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। তিনি নিয়মিতই এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের নিচ্ছেন। এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা ঈদ পালন করবেন রংপুরে। ঈদের নামাজ পড়বেন রংপুরের আলমদীঘির চর ঈদগাহ মাঠে। জাতীয় পার্টির অন্য প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে কাজী ফিরোজ রশীদ পুরান ঢাকার ঈদ পালন করবেন। ধূপখোলা মাঠ ঈদগাহে ঈদের জামাতে অংশ নেবেন। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ঈদ করবেন চট্টগ্রামে। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এসএম ফয়সল চিশতী, আবদুস সবুর আসুদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন ঢাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।
