দেশের মহাসড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচলে টোল দিতে হবে

0
153

খুলনা টাইমস:
দেশের যেসব মহাসড়ক চার লেনে এবং এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত তাতে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হবে। ওই লক্ষ্যে প্র¯‘তি নি”েছ সরকার। ইতোমধ্যে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের খসড়া টোলহার নির্ধারণ করা হয়েছে। সড়কপথের টোল হার কত হবে, কিভাবে আদায় করা হবে তা নির্ধারণে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর কাজ করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এক্সপ্রেসওয়ে, মহাসড়কে টোল নেয়া হয়। দেশে বিভিন্ন সেতু ছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দর সড়ক, চলনবিল মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একাংশে টোল নেয়া হ”েছ। চার লেনে উন্নীত মহাসড়ক এবং ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে টোল নিতে গত আগস্টে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, টোলের ভালো-খারাপ দুই দিকই রয়েছে। কিš‘ সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে টোল নিতেই হবে। তবে পরিবহন মালিকর এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করলেও টোলের পক্ষে কথা বলছে না। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দু’পাশে ধীরগতির লেনসহ ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণবঙ্গকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করবে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ৫৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ১ হাজার ১১০ টাকা ভিত্তি টোল প্রস্তাব করেছে। ওই হিসাবে প্রতি কিলোমিটারের টোল হবে ২০ টাকা ১৮ পয়সা। গুরুত্বপূর্ণ ওই মহাসড়কেই পড়েছে পদ্মা সেতু। ফলে মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুর জন্য দিতে হবে আলাদা টোল। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী পদ্মা সেতুতে মাঝারি ট্রাকের টোল হতে পারে ২ হাজার ১০০ টাকা। প্রওস্তাবগুলো চূড়ান্ত হলে পদ্মা সেতুসহ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তি টোল দাঁড়াবে ৩ হাজার ২১০ টাকা। বিগত ২০১৪ সালের টোল নীতিমালায় মাঝারি ট্রাকের টোলকে ভিত্তি টোল হিসেবে ধরা হয়। তার ভিত্তিতেই আরো ১২ ধরনের যানবাহনের টোল নির্ধারণ করা হয়। ওই নীতিমালার আলোকেই ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত টোল হারও নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী এক্সপ্রেসওয়েটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের কাতারে পড়েছে। এ ধরনের মহাসড়কের প্রতি কিলোমিটারের ভিত্তি টোল ২ টাকা। যদিও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রে ভিত্তি টোল প্রস্তাব করা হয়েছে ২০ টাকার বেশি। মূলত তিনটি সেতুযুক্ত হওয়ার কারণে ওই এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তি টোল বেশি হয়েছে। ঢাকার বুড়িগঙ্গা, মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী সেতু ১ ও ২ এবং মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ সেতুর টোল মোট ১ হাজার টাকা। সেতু তিনটির টোল বাদ দিলে ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের টোল হবে ১১০ টাকা।
সূত্র জানায়, দু’পাশে ধীরগতির লেনসহ নির্মাণাধীন জয়দেবপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা (সাসেক-১) এবং এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর (সাসেক-২) মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত হওয়ার পর টোল নেয়া হবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও একই সুবিধা চালুর পর চলাচলকারী যানবাহনকে টোল দিতে হবে। মূলত সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের খরচ জোগাতেই সরকার টোল নিতে চায়। তবে মহাসড়কের পাশে ধীরগতির লেনে টোল ছাড়া গাড়ি চালানোর সুযোগ থাকবে। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নির্মাণাধীন প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত ৬ লেনের ভোগড়া-ধীরাশ্রম-পূর্বাচল-ভুলতা-মদনপুর (ঢাকা বাইপাস) এবং রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়কেও টোল দিতে হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা বাইপাসের টোল হার অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা বাইপাসে প্রতি কিলোমিটারে পণ্যবাহী ট্রেইলারে (তিন এক্সেলের বেশি) ৩৩ টাকা ১০ পয়সা, বড় ট্রাকে ২৬ টাকা ৫০ পয়সা, মাঝারি ট্রাকে ১৬ টাকা ৫০ পয়সা, বড় বাসে (৩১ আসনের বেশি) ১৪ টাকা ৪০ পয়সা, মিনিবাসে ৭ টাকা ৪০ পয়সা, মাইক্রোবাসে ৬ টাকা ৬০ পয়সা, প্রাইভেট কারে ৫ টাকা ৮০ পয়সা টোল দিতে হবে। ওই হিসাবে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দোলাইপাড় থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার পথে ট্রেইলারকে টোল দিতে হবে এক হাজার ৮২০ টাকা। বড় ট্রাকে এক হাজার ৪৫৮ টাকা, বড় বাসে ৬৮২ টাকা টোল দিতে হবে। বাসের টোলের টাকা যাত্রীদের ভাড়ার সঙ্গে আদায় করা হবে। আর প্রাইভেটকারে দিতে হবে ৩২০ টাকা। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে ৫টি ফ্লাইওভার রয়েছে। ফ্লাইওভার ব্যবহারের জন্য বাড়তি মাশুল ধরলে টোল আরো বাড়বে। পোস্তগোলা ও ধলেশ্বরী সেতুর টোল সমন্বয় করলে এ অঙ্ক বেড়ে যাবে। মাঝে পদ্মা সেতুতে আলাদা টোল দিতে হবে। তবে ওই টোলহার এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অযান্ত্রিক যান, তিন চাকার যানবাহন এবং কৃষি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। ওসব যানবাহন দুই পাশের ধীরগতির লেনে চলাচল করবে। টোলহার নির্ধারণ কমিটি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে চারটি ‘এন্ট্রি’ এবং চারটি ‘এক্সিট পয়েন্ট’ নির্ধারণ করেছে। ঢাকা থেকে মাওয়ামুখী যানবাহন রাজধানীর দোলাইপাড় দিয়ে প্রবেশ করে চারটি ¯’ানে টোল দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে। সেগুলো হলো কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর, ধলেশ্বরী, মালিগ্রাম এবং আড়িয়াল খাঁ। ঢাকামুখী গাড়ি ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ থেকে প্রবেশ করে আড়িয়াল খাঁ, শ্রীনগর, ধলেশ্বরী এবং আবদুল্লাহপুরে টোল দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে। ওসব এক্সিট পয়েন্ট দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি প্রবেশেরও সুযোগ থাকবে। তবে নির্ধারিত ¯’ান ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি প্রবেশ ও বহির্গমনের সুযোগ থাকবে না।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়েতে অবশ্যই টোল নেয়া উচিত। টোলের ভালো দিক হলো, শুধু ব্যবহারকারীকেই টাকা গুনতে হয়। অন্যান্যের করের টাকা সড়কের ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণে ঢালতে হয় না। সরকারের উচিত টোল থেকে পাওয়া টাকায় সড়ক নির্মাণের ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পৃথক তহবিল করা, যা দিয়ে নিয়মিত মেরামত করে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানান, টোলের হার নির্ধারণে যে অব¯’া করা হ”েছ তাতে তো গাড়ি ঘর থেকে বের হলেই টোল দিতে হবে।
টোল হার নির্ধারণ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা জোন) সবুজ উদ্দিন খান জানান, ঢাকা-মাওয়ায় টোল আদায় শুরুর পর পোস্তগোলা সেতু, ধলেশ্বরী সেতুতে এক্সপ্রেসওয়ের গাড়িকে আর টোল দিতে হবে না। তবে ধীরগতির লেনের গাড়িকে সেতু পারাপারের জন্য আগের মতোই টোল দিতে হবে। কোনো গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ের ‘এন্ট্রি পয়েন্ট’ দিয়ে প্রবেশ করে ‘এক্সিট পয়েন্ট’ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মাঝখানে যত কিলোমিটার পথ চলবে, ঠিক তত দূরত্বের জন্যই টোল দিতে হবে।