সাতক্ষীরার দেবহাটা পুষ্পকাটি শিশু ফারিয়া হত্যা ট্রাজেডির মোড় এখন ভিন্ন পথে:একাধিক মামলার আসামী আলিম পুলিশের খাঁচায়

0
272

 

 

আব্দুর রব লিটু: দেবহাটার পুষ্পকাটি শিশু ফারিয়া হত্যা ট্রাজেডির মোড় এখন ভিন্ন পথে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজেই পুলিশের খাঁচায় বন্দি হলেন নাশকতা সহ একাধিক মামলার আসামী আলিম। চাঞ্চল্যকর শিশু ফারিহা হত্যা ট্রাজেডি সিআইডিতে স্থানান্তরের পর থেকে অনুসন্ধানে ব্যস্ত সিআইডি। বিভিন্ন অনুসন্ধানের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার পুষ্পকাটি এলাকার জাফরের ঘেরের বাসা থেকে গাঁজা সেবনরত অবস্থায় গ্রেফতার হয় শিশু ফারিয়া হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী একই গ্রামের আফসার গাজী ওরফে ভন্টুর পুত্র আব্দুল আলিম। এসময় তার একান্ত সহযোগী মঞ্জুরের পুত্র গোলাম পালিয়ে যায়। উল্লেখ্য গত ইংরেজি ২০/৯/১৮ তারিখ কুলিয়া ইউনিয়নের পুষ্পকাটি গ্রামের একটি পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় ফারিয়া সুলতানা তমা নামের চার বছরের এক কন্যা শিশুর লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। তার পর থেকে এলাকায় শুরু হয় নানা গুঞ্জন। এই মামলায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তারাই কি প্রকৃত অপরাধী? না কি কাউকে ফাঁসাতে সাজানো এই নাটক করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। সে সময় বাদি পক্ষ আরজিতে যে তথ্য উপস্থাপন করেছিল তার সাথে ঘটনার কোন মিল ছিলনা বলে ধারানা করেছিল অনেকেই। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের পুষ্পকাটি গ্রামের পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় ফারিয়া সুলতানা তমা নামের চার বছরের এক কন্যা শিশুর লাশ উদ্ধার হয়। সে সময় ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসার জন্য শিশুর পিতা ফরহাদ হোসেন, দাদা আবু সালেক ওরফে সালেক ও ফরহাদ হোসেনের মামা আকরাম সরদারের পুত্র রজব আলী ও আকবর এবং বন্ধু আফসারের পুত্র আব্দুল আলিমকে থানায় নিয়ে আসে। রাতভোর জিজ্ঞসাবাদ শেষে তাদেরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ঐদিন শিশুর মা সার্জিনা বেগম বাদি হয়ে ৬ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিল। বাদী তার মামলার আর্জিতে উল্লেখ করেছিল তার স্বামী ফরহাদ হোসেন কন্যা ফারিহা সুলতানাকে নিয়ে গত ইংরেজি ২০/৯/১৮ তারিখ সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাশ্ববর্তী দোকানে যায়। দোকান থেকে খাবার কিনে বাড়ি ফেরার পথে তার স্বামীকে জিয়ারুল ডেকে কথা বলতে বলতে রজিবুল সরদারের পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় ৩০ মিনিট পর ওৎ পেতে থাকা এজাহারের আসামীরা তার উপর হামলা করে এবং গেঞ্জি দিয়ে তার স্বামী ফরহাদ হোসেনের মুখ বেধে মুখে বাঁশের পাতা ঢুকিয়ে দিয়ে অন্য আসামীরা কন্যাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন খোঁজাখুজির পর রজিবুল সরদারের পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। নিহতের মায়ের দায়ের করা মামালাটি গত আগস্ট ২০১৮ সালে সি আই ডিতে হস্তান্তর করা হয়েছিল। সেসময় এলাকাবাসী ধারনা করেছিল মামলায় উল্লেখিত ফরহাদের মুখ বাধা গেঞ্জিটির ডিএনএ পরীক্ষা করলে হয়তো বেরিয়ে আসতে পারে প্রকৃত হত্যার রহস্য। তাছাড়া ঘটনার পর থেকে মোকছেদের পুত্র তুহিনের গা ঢাকা দেওয়াটা এবং নিহত শিশু ফারিহার পিতা ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরোর মোকছেদের বাড়িতে অবস্থান করার বিষয়ে সে সময়ও জনমনে দেখা দিয়েছিল নানা রকম প্রশ্ন। ঐ সময়ে, তথ্য অনুসন্ধানে জানাগিয়েছিল ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ফরহাদের সাথে ৬টা ২৯ ও ৬টা ৩৫মিনিটে পরপর দুইবার কথা হয় স্থানীয় শহিদুল গাজীর পুত্র হাসান ওরফে হাসার সাথে। তারপর তার ফোনটি বহেরার এমাদুল মাস্টারের বাড়ির সামনে থেকে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রাত ১০.১৭ মিনিটের সময় ফোনটি পুনরায় চালু হয় আলিপুর ফিলিং স্টেশন নামক স্থানে। ফোনটি চালু করেই ফরহাদের সাথে প্রথম কথা হয় আলিমের সাথে। ফরহাদের ফোন পৌনে ৪ঘন্টা বন্ধ কালে ৪বার কথা হয় চৌকিদার মঞ্জুরুলের সাথে। এমনকি ঐ সময় মঞ্জুরুলের ফোন লোকেশন ফরহাদের পাশে দেখাতে থাকে। সন্ধ্যা ৬.৫৭ মিনিট ও ৮.৪৪ মিনিটে কথা হয় আলিমের চাচা কওসারের সাথে। রাত ৮.৪৫ মিনিটে আলিম তার চাচাতো ভাইপো আল-আমিনকে ৭.৪৫মিনিটে কল করে এবং রাত ৮.০৬ মিনিটে কল দেয় চাচাতো চাচা শাহাদাতের কাছে। আলিম এরপর রাত ৮.১৬, ৮.৪৬ ও ৯.১৫ মিনিটে পরপর তিনবার কথা বলে ফুফাতো ভাই গোলাম হোসেনের সাথে। এছাড়া আলিম ৬.৩৫ ও ৬.২৯ মিনিটে কথা বলে ইট ভাটার কর্মচারী হাসানের সাথে। তবে মোখছেদের ভাইপো আলিম বিকাল থেকে পারুলিয়ার সেকাই ঈদগাহ এলাকায় বসে একাধীক ব্যক্তি সাথে যোগাযোগ রেখে চলছিল। পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারীরা দীর্ঘ সময় অবস্থান করছিল খাশখামার আক্তারুলের দোকানের পার্শবর্তী স্থানে। আর এখান থেকে শিশুটির হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে ধারনা করেছিলেন অনেকে। তবে, জনমনে একাটাই প্রশ্ন ফরহাদ ছিল যদি রাত ১০.১৭ মিনিটের সময় আলিপুর ফিলিং স্টেশনে অবস্থান করে। তাহলে তার উপর হামলা হল কোন সময়। আর মামলার বর্ননা অনুযায়ী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যদি হামলা হয়, তাহলে তার ভর্তি রাত সাড়ে ১২টার পরে হওয়ার কারন কি? দীর্ঘ এই সময় তাহলে ফরহাদ কি করছিল, কোথায় ছিল সে? উল্লেখ্য যে, ঘটনার সময় একটি অস্ত্র মামলায় পুষ্পকাটি গ্রামের কেয়ামদ্দীন গাজীর পুত্র মোকছেদ আলী পুলিশের হাতে আটক হয়। আর এই মামলায় স্বাক্ষী করা হয় পুষ্পকাটি গ্রামের লিয়াকাত আলীর পুত্র রিপন ও শওকাত সরদারের পুত্র নাজমুল হুদাকে। ঘটনাটি নিয়ে মোকসেদ গ্রুপের সাথে রিপন ও নাজমুল হুদার বিরোধ চলে আসছিল দীর্ঘদিন। তারই সূত্র ধরে রিপন ও নাজমুল হুদাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশী ফরহাদের ৪বছরের শিশু কন্যা ফারিয়া সুলতানা তমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারনা করছে প্রতিবেশীরা। অপরদিকে এলাকাবাসীর এখনও ধারণা, নিহত শিশুর পিতা ফরহাদ হোসেন, সদ্য গ্রেফতার হওয়া মামলার আর্জি অনুযায়ী কথিত উদ্ধারকারী আব্দুল আলিম কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। এদিকে, এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষিদের আইনের দোষিদের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসের তদন্ত অফিসার জাকির হোসেন জানান, মামলাটি আমরা তদন্ত ভার নেওয়ার পর থেকে তদন্ত অব্যহত আছে। আব্দুল আলিমকে সন্দেহজনক ভাবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।