দাকোপ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক-সংকট, জোড়াতালি দিয়ে চলছে সেবা

0
1260
All-focus

আজিজুর রহমান, দাকোপ থেকে :
চিকিৎসক সংকটে খুলনার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এখানে চিকিৎসকের ২২পদ টি থাকলেও কর্মরত আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ছয়জন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকলে অপর চিকিৎসকরা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

কয়েকজন রোগী ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসক-সংকট থাকায় প্রতিদিন অনেক রোগী চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যায়। হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন মাত্র ছয়জন। এ ছাড়াও সাত-আট বছর ধরে টেকনিশিয়ান থাকলেও এক্স-রেসহ নানা যন্ত্র ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে বহির্বিভাগে রোগিদের দীর্ঘ সারি। ২০-২২ জন রোগী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হকের কক্ষের বাইরে অপেক্ষা করছে। চিকিৎসক সংকট হওয়ায় রোগী দেখতে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। অন্তর্বিভাগের ওয়ার্ডগুলো অপরিচ্ছন্ন। কয়েকজন নার্স রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ রোগী চিকিৎসা নেন। গড়ে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু এসব রোগীকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার জন্য যতজন চিকিৎসক প্রয়োজন, তা এখানে নেই।
সূত্রটি আরও জানায়, ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী এখানে চিকিৎসকের ২২টি পদ রয়েছে। এরমধ্যে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), ডেন্টাল সার্জন, অর্থোপেডিকস, অবেদনবিদ, হৃদরোগ (কার্ডিওলজি), মেডিসিন এবং চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও দুটি চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ শূণ্য। হাসপাতালটিতে ২৭ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও আছেন ২৫ জন। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিকল।

কয়েকজন রোগী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, দূরদূরান্ত থেকে এসে ভালো সেবা না পেয়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের। পুরো হাসপাতালে হাতেগোনা দুই-তিনজন চিকিৎসক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসকের সেবা নিতে হচ্ছে। এ হাসপাতালের বেশির ভাগ সরকারি ওষুধ রোগীদের ভাগ্যে জোটে না। এ ছাড়া হাসপাতাল কক্ষে বসে সরকার নির্ধারিত সময়ে কর্মরত চিকিৎসকরা টাকার বিনিময়ে রোগিদের সেবা দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে হতদরিদ্র মানুষেরা ঠিকমত চিকিৎসা সেবা নিতে পারেনা।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসক সংকট তো রয়েছে তারপরে আবার এক্স-রে যন্ত্রটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে নেবুলাইজার, ইসিজিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। এ কারণে রোগীরা এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে না। ফলে তাদের বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে পরীক্ষা করাতে হয়।

উপজেলার ধৌপাদি গ্রামের শাহ আলম হাওলাদার চিকিৎসার জন্য তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন। কিন্তু অর্থোপেডিকস চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা নিতে পারেননি। পরে বাধ্য হয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়।

কালাবগি গ্রামের শাকিলা বেগম বলেন, তিনি গরিব মানুষ। ব্যথা নিয়ে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূর থেকে উপজেলা সদরে এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একবার একজন চিকিৎসক এসেছিলেন। তারপর আর সেভাবে চিকিৎসকের দেখা পাননি। নার্সরা তাঁকে স্যালাইন লাগিয়ে রেখেছেন।

গৌড়কাঠি গ্রামের অমেলা মিস্ত্রী জানান, অসুস্থ অবস্থায় রোরবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পরদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত তাঁকে দেখতে কোনো চিকিৎসক আসেননি। নার্সদের চিকিৎসা নিয়েই তিনি রয়েছেন। ভর্তির পর এখনও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাধারণ ওয়ার্ডে আসেননি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক মুঠোফোনে খুলনাটাইমসকে জানান, চিকিৎসক ও নার্সের শূন্য পদগুলো পূরণের বিষয়ে প্রতিমাসে খুলনা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের ধরে রাখা যায় না। কিছুদিন থাকার পর তাঁরা বদলি হয়ে যান। পুরো হাসপাতাল চালাতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে।