দাকোপে জমি সংক্রান্ত বিরোধে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

0
810

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস :
খুলনার দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ দক্ষিণপাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে অহেতুক মামলা দায়ের করে হয়রানি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে এক ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হলে ওই এলাকার বাবুরাম মণ্ডল(৫০) নামের এক ব্যক্তি মিথ্যা মামলা দিয়ে সুশীল সমাজের ব্যক্তিদেরকে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদে তার বিরুদ্ধে ১৩ লাখ টাকার মানহানিকর মামলা দায়ের হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রমতে, ১০ মার্চ সকাল ১১টার দিকে জমি নিয়ে উপজেলার কৈলাশগঞ্জ গ্রামের মৃত সতীষ মণ্ডলের ছেলে বাবুরাম মণ্ডলের সঙ্গে প্রতিবেশীদের ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে বাবুরাম মণ্ডল বাদী হয়ে আদালতে স্বর্ণের চেন ছিনতায়ের অভিযোগ এনে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী করা হয় কৈলাশগঞ্জ গ্রামের মৃত কালিপদ মণ্ডলের ছেলে রবিন্দ্রনাথ মণ্ডল, মৃত হারান মণ্ডলের ছেলে নির্মল মণ্ডল, নির্মল মণ্ডলের ছেলে দেব মণ্ডল, এলেমবরের ছেলে অমূল্য মিস্ত্রী, সুরেন মিস্ত্রীর ছেলে রবি মিস্ত্রী, কৃষ্ঠ রপ্তানের ছেলে কালিপদ রপ্তান, অমূল্য মিস্ত্রীর ছেলে নিউটন মিস্ত্রী, রাম মিস্ত্রীর ছেলে কৃষ্ণপদ মিস্ত্রী, রমেশ মিস্ত্রীর স্ত্রী বিউটি মিস্ত্রী ও বিষ্ণু বরকন্দাজের ছেলে বঙ্কিম বরকন্দাজকে। তবে মামলার অধিকাংশ আসামী সমাজপতি, দানবীর ও বহু ভূম্পত্তির মালিক।

দায়েরকৃত এই অহেতুক মামলা তাদেরকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন ও মানহানি করার প্রতিবাদে বাবুরাম মণ্ডলকে আসামী করে ১৩ লাখ টাকার সম্মানহানি করার আপরাধে আদালতে মামলা দায়ের করেন কৃষ্ণপদ মিস্ত্রী।

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে অন্তত ১৫ জন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দায়েরকৃত মামলা সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য উঠে আসে। জানা গেছে বাবুরাম একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। মামলার বিবাদীদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মনমালিন্য আছে। তবে তিনি যাকে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে থাকেন। তেমনি এই ঘটনায় স্বর্ণের চেন দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। বনদস্যুদের সহযোগি হিসেবে জড়িত রয়েছে বলে এমনও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ ধরা ও হরিণ শিকার তার জীবিকানির্বাহের প্রধান পেশা হিসেবে চিহ্নিত। আর বাবুরামের সহকারি হিসেবে সতীষ মিস্ত্রীর ছেলে কৃষ্ণ মিস্ত্রী, তপন রপ্তান ও স্বপন রপ্তান এসব কাজে জড়িত আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাবুরামের এই অহেতুক মামলায় ক্ষুব্ধ এলাকার সুশীল সমাজ।

বাবুরামের দায়েরকৃত মামলায় মৃত অজিৎ মণ্ডলের স্ত্রী সুধা রানী মণ্ডলের(৭০) গলার স্বর্ণের চেন হাতিয়ে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তবে এ বিষয়ে সুধা রানী বলেন, ঘটনার দিনে তার গলার চেন কে বা কারা নিয়েছে তা তিনি জানেন না।

স্থানীয় ঝর্ণা মিস্ত্রী জানান, হিন্দু ধর্মাম্বলীদের স্বামী মারা গেলে স্ত্রী কখনও স্বর্ণের গহনা পরেন না। তাছাড়া প্রায় ১০ বছরের মধ্যে সুধা রানীর গলায় কখনও স্বর্ণের চেন পরতে দেখেনি। তিনি বলেন, জমি নিয়ে বিরোধ থাকতে পারে কিন্তু চেন ছিনতায়ের মামলটি মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। একই কথা বলেন অনিমেশ মণ্ডল।

ওই গ্রামের আর একজন বাসিন্দা বিজন মণ্ডল বলেন, বাবুরাম লোকটি অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির ব্যক্তি। তিনি আদালত সম্পর্কে ভাল বোঝেন বলে যখন তখন হয়রানিমূলক মামলা করে থাকেন। তবে যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন তাঁরা সকলে সম্মানীয় ব্যক্তি। তাঁদেরকে এভাবে হয়রানি করা মোটেও ঠিক না।

স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য কনিকা রানী মিস্ত্রী বলেন, জায়গাজমি নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। ঘটনার দিন কোনো ধরণের হামলা বা মারপিটের ঘটনা ঘটেনি। তবে চেন ছিনতায়ের যে মামলাটি করেছেন সেটি অহেতুক মামলা।

বিষয়টি জানার জন্য বাবুরাম মণ্ডলের বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও কোনো সংযোগ মেলেনি। যার জন্য তার ভাষ্য প্রতিবেদনে দেওয়া সম্ভব হয়নি।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দাকোপ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড় মুঠোফোনে খুলনাটাইমসকে বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মধ্যে কন্দোলন রয়েছে। স্বর্ণের চেন ছিনতায়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। যে মামলাটি বাবুরাম দায়ের করেছে তা সম্পন্ন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। তবে যাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন তারা সকলেই সম্মানীয় ব্যক্তি। তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য বাবুরাম মণ্ডলকে অবগত করা হলে তিনি তার সাড়া দেয়নি।