তালায় নাসিমা হত্যা মামলা নিয়ে চলছে ষড়যন্ত্র : নিরাপত্তাহীনতায় বাদী

0
255

তালা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার তালায় নাসিমা হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় এক জন প্রতিনিধি। প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন ঐ জনপ্রতিনিধি। টাকা নিয়ে মামলাটি তুলে নিতেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে মামলার বাদীকে। মামলার বাদী উপজেলার মহান্দী গ্রামের নাজের শেখের এসব অভিযোগের তীর খলিলনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এসএম আজিজুর রহমান রাজু’র দিকে। চেয়ারম্যান নিজে আসামীদের পক্ষ নেওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন তিনি। যদিও নাসিমা হত্যা মামলার চার জন স্বাক্ষী গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এসএম আজিজুর রহমান রাজু’র সমার্থক ছিলেন বলেও জানান নাজের শেখ।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে. নাসিমা হত্যার পরেও দেখতে আসেনি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান রাজু। এখন তিনি আসামীদের পক্ষ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। মামলাটি ভিন্ন খাতে নিতে ও প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনীর কারণে মামলার বাদী রয়েছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। মামলার আসামীরা তার সমার্থক হওয়ায় লক্ষ টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি। বর্তমানে আসামীদের পক্ষে চেয়ারম্যান, আর বাদীর পক্ষে মামলার স্বাক্ষী হয়েছেন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ট চার জন সমার্থক।চেয়ারম্যান আসামীদের পক্ষ নেওয়ায় নাছিমা হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারে গড়িমসি করছে প্রশাসন। তবে পুলিশ ইতিমধ্যে নাসিমা হত্যা মামলায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
নিহতের ননদ ভানু বিবি জানান, নাসিমা হত্যার পরেও দেখতে আসেননি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান রাজু। এখন চেয়ারম্যান আসামীদের পক্ষ নিয়ে মামলাটি ভিন্ন খাতে নিতে ও প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনীর কারণে মামলার বাদীসহ তার পরিবার রয়েছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ।
বাদীর বোন জামাই মীর জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মামলার আসামীরা চেয়ারম্যানের সমার্থক হওয়ায় তিনি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। মামলা তুলে নিতেও হুমকি দিচ্ছেন বাদীসহ তার পরিবারকে। আসামীদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রশাসনও আসামী গ্রেপ্তার করতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মামলার স্বাক্ষী জুলফিকার আলী বলেন, নাছিমা হত্যা মামলায় চেয়ারম্যান রাজু আসামীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাদীসহ তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। তিনি নাসিমার মরাদেহ দেখতে না আসলেও বর্তমানে আসামীদের বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি।
মামলার স্বাক্ষী শওকত হোসেন বলেন, নাছিমা হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনী তাকে নানা ভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ভাবে তাকে হুমকি দেওয়ায় এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন তিনি।
মামলার স্বাক্ষী মনিরুজ্জামান মদন বলেন, তিনি গত ইউপি নির্বাচনে আজিজুর রহমান রাজুর একানিষ্ট কর্মী ছিলেন। নাছিমা হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় বিভিন্ন ভাবে তাকে সহ অন্য স্বাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি চেয়ারম্যান হয়ে আসামী পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় দু:খ প্রকাশ করেন তিনি।স্বাক্ষী মনিরুজ্জামান মদন আরো বলেন, চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনী যতই হুমকি দিক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। যে ভাবে নাছিমাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেটা কোন ভাবে মেনে নেয়া যায় না।
মামলার আসামি ডাক্তার শহিদুল এর স্ত্রী জানান, তার স্বামী প্রত্যেক দিন যোহরের আজান দিলে চেম্বার থেকে বাড়ী ফিরে আসেন। কিন্তু ঘটনার দিন দেরিতে বাড়িতে ফেরেন। দেরিতে বাড়ী ফেরার কারণ জানতে চাইলে তিনি ওই রোগী (নাসিমা) দেখে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছে বলে জানান। তার স্বামীকে পরিকল্পিত ভাবে এ মামলায় ফাসানো হয়েছে ।
মামলার বাদী নাজের শেখ বলেন, তার স্ত্রীকে পরিকল্পিত ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে আসামীরা। কিন্তু চেয়ারম্যান আসামীদের পক্ষ নিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। তিনি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। আসামীরা রাতের আধারে বাড়ী এসে মামলা তুলে নিতেও হুমকি দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
খলিলনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আজিজুর রহমান রাজু এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি কিছুই জানিনা। আমি সেখানে যাইনি, অসুস্থ আবস্থতায় বাড়ীতে আছি। তিনি কোন পক্ষে নন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানান তিনি।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মেহেদী রাসেল জানান, নাসিমা হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলার তদন্ত চলমান থাকায় আর কিছুই বলতে রাজি হয়নি তিনি।