জাতীয় স্লোগান হবে ‘জয় বাংলা’: হাইকোর্ট

0
256

খুলনাটাইমস ডেস্ক : ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান প্রশ্নে রুলের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিটের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ, সিনিয়র আইনজীবী শফিক আহমেদ, সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু ও সিনিয়র আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার। জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে এর আগে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী ড. বশির আহমেদ। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে, জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর এই রুলের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষসহ সিনিয়র আইনজীবীদের বক্তব্য শুনেন আদালত। আজ রুলটি যথাযথ (এ্যাবসিলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়: শুধু দেশেই না। একাত্তরে যখন মহান মুক্তিযুদ্ধ চলে তখন দেশে ও বিদেশে একটাই স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। এছাড়া পাকিস্তানেরও কিছু কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা এক হয়ে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিয়েছে। এমনকি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে গুলি করার আগ মুহূর্তেও এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিয়েছে। সর্বোপরি এদেশের ধর্মনিরপেক্ষ স্লোগানেই হচ্ছে জয় বাংলা। আদালত বাংলায় এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘জয় বাংলা জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। জয় বাংলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান এবং জয় বাংলা ৭ মার্চের ভাষণের সাথে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।’ আদালত আরও বলেন, ‘আবেদনকারী সংবিধানের ৩ ও ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করা দাবি করেছেন, এটা এই আদালতের এখতিয়ার বর্হিভূত। কারণ কোনো আইন প্রণয়ন করা এবং সংবিধান সংশোধন করার একমাত্র অধিকার জাতীয় সংসদের।’ তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ রুলের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছেন উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলেন, আইন সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জয়বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করায় একমত পোষণ করেছেন। এরপর আদালত রায়ের আদেশ অংশ ঘোষণা করেন। আদেশে আদালত বলেন, ক. আমরা ঘোষণা করছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। খ. সকল জাতীয় দিবসগুলোতে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ এবং রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ যেন করেন, সে জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। গ. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পরে ছাত্র শিক্ষকগণ যেন জয় বাংলা স্লেগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আদালতের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন ৩ মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিলে নির্দেশ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রুলে ‘জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে ৫ ডিসেম্বর থেকে এ রুলের শুনানি শুরু হয়। রুলের বিবাদীরা হচ্ছেন- মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও শিক্ষা সচিব। রিটকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ বলেন, জয় বাংলা হচ্ছে আমাদের জাতীয় প্রেরণার প্রতীক। পৃথিবীর ৬০টি দেশে জাতীয় স্লোগান আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে আমরা আমাদের চেতনার সেই ‘জয় বাংলা’কে স্বাধীনতার এতদিন পরেও জাতীয় স্লোগান হিসেবে পাই নাই। তিনি বলেন, জয় বাংলা কোনো দলের স্লোগান নয়, কোনো ব্যক্তির স্লোগান নয়, এটা হচ্ছে আমাদের ন্যাশনাল ইউনিটি। এই স্লোগান দিয়ে একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। বাঙালী মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো।