গায়ানায় বাংলাদেশ হারে না

0
351

স্পোর্টস ডেস্কঃ

গায়ানিজরা বড় আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল শিমরন হেটমায়ারের দিকে। ‘লোকাল হিরো’ বলেই নয়, তিনি যতক্ষণ ছিলেন, ক্যারিবীয়দের স্বপ্নটা যে টিকে ছিল! মোস্তাফিজুর রহমানের বলে সাকিব আল হাসানের ক্যাচ হয়ে ফিরতেই পার্টি স্ট্যান্ডে গায়ানিজ গান বেজে উঠল। আর তাতে কিছু দর্শককে শরীর দুলিয়ে নাচতে দেখা গেল।

ঘটনা কী? হেটমায়ারের বিদায়ের পর যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরাজয় আসন্ন, তখন মনে এত ফুর্তি আসে কী করে স্বাগতিক দর্শকদের? ক্যারিবীয়দের এত সব বুঝতে বয়ে গেছে! তাঁরা মাঠে এসেছেন মজা করতে। মিউজিকের শব্দ কানে এলেই হলো, আপনা–আপনি শরীরটা দুলে উঠবে তাঁদের। হেটমায়ারের আউটের পর আন্দ্রে রাসেল যখন বাংলাদেশের বোলারদের দু-একবার উড়িয়ে মারলেন, একজন প্রবীণ নারী দর্শক এত সুন্দর করে নাচছিলেন, লং অফে ফিল্ডিং করা সাব্বির রহমান তো দেখে হেসেই বাঁচেন না! সীমানাদড়িতে দাঁড়িয়ে হালকা বাৎচিতও সেরে ফেললেন বাংলাদেশ দলের তরুণ ব্যাটসম্যান।

তামিম–সাকিব দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এনে দিয়েছেন ২০৭ রান। সাকিব দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এনে দিয়েছেন ২০৭ রান। ক্যারিবীয় দর্শকেরা ক্রিকেটে নির্মল আনন্দ খুঁজে পেলেও আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সেটি পাওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ যে হারাতে পারে, এবার সেটি গায়ানায় এসে টের পেল উইন্ডিজ। বাংলাদেশ অবশ্য আপত্তি তুলতে পারে। টেস্ট সিরিজ বাজেভাবে হেরেছে বলে তারা নিশ্চয়ই ‘জঘন্য’ দল হয়ে যায়নি; ওয়ানডেতে এই দলটা অন্য রকম—মাশরাফিরা দাবি করতেই পারেন। গায়ানা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে হোল্ডারদের বিপক্ষে পাওয়া ৪৮ রানের জয়টা স্বস্তিতে নিশ্বাস নেওয়ার বড় উপলক্ষ বাংলাদেশের।

অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম সকালে ৪৩ রানে অলআউট হওয়ার ভূত পিছু নিয়েছিল, সেটি থেকে আপাতত মুক্তি তো মিলল। এই মুক্তি যে গায়ানায় মিলবে, সে আশা অনেকে হয়তো ছেড়েই দিয়েছিলেন। এমনকি আজ যখন তামিম ইকবাল খুব ধীরলয়ে সেঞ্চুরি (ওয়ানডেতে যেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে মন্থর সেঞ্চুরি) করলেন, তা নিয়েও কি কম সমালোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে? পরে ক্রিস গেইলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানও যখন ‘টুকটুক’ করে এগিয়েছেন (৬০ বলে ৪০), তখন হয়তো বোধগম্য হয়েছে, এই মন্থর উইকেটে ঝড় তোলা সহজ কাজ নয়।

এমন উইকেটে বাংলাদেশের বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুধু ঝড় কেন, ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা স্বচ্ছন্দেই এগোতে পারেননি। স্বচ্ছন্দে যা একটু এগিয়েছে, বিশু-জোসেপের শেষ উইকেট জুটি। দুজন শেষ উইকেটে যোগ করেন ৫৯ রান, এই জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে যেটি সর্বোচ্চ। ১৭২ রানে ৯ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বড় ব্যবধানে বাংলাদেশ হারাতে পারেনি এ দুজনের দৃঢ়তায়!

১৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন তামিম। হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। দুর্দান্ত বোলিংয়ে সামনে থেকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। শুরু থেকেই ক্যারিবীয়দের ব্যাটসম্যানদের এমনভাবে চেপে ধরেছেন, তাঁরা স্বস্তিতে শ্বাস নিতে পারেননি। অধিনায়কের বোলিং বিশ্লেষণটা দেখুন: ১০ ওভারে ১ মেডেন দিয়ে ৩৭ রানে ৪ উইকেট। মাশরাফিকে সমর্থন দিতে এগিয়ে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।

বাংলাদেশের এই দুর্দান্ত জয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান অবশ্যই তামিম-সাকিবের; মন্থর গতিতে ব্যাটিং করায় যাঁদের কাঠগড়ায় তুলেছেন অনেকে। টসে জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। মাত্র ৩ বল খেলে শূন্য হাতে ফিরেছেন এনামুল হক। অন্য প্রান্তে তামিম ইকবালও তখনো কোনো রান করতে পারেননি। আন্দ্রে রাসেলের এক ওয়াইডের সুবাদে স্কোরবোর্ডে রান ১। টেস্ট সিরিজের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে আসছিল তখন। তবে প্রাথমিক ঝাপটা সামলে নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে দারুণ গতিতে। ৯৭ রানে আউট হওয়া সাকিব ও ১৩০ রানে অপরাজিত তামিম দেখালেন বাংলাদেশ চাইলে টিকে থাকতে পারে উইকেটে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে এনে দিয়েছেন ২০৭ রান। এতে নিজেদের এক রেকর্ডও ভেঙেছেন দুজন। এর আগে ওয়ানডেতে ৩০ বার দুজন একসঙ্গে ব্যাট করেছেন। জুটিতে সর্বোচ্চ ১৪৪ রান করেছিলেন ২০১৭ সালে। এ দুজনের রেকর্ড জুটি আর চতুর্থ উইকেটে তামিম-মুশফিকের ২০ বলে ৫৪ রানের জুটি ২৭৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পাইয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। পরে তো বোঝাই গেল, গায়ানার এই উইকেটে ২৭৯ রানও পর্বতপ্রমাণ।

সাকিব-তামিম অবশ্য বলতে পারেন, যে রেকর্ডের কথা বলছেন, তা দিয়ে আর কী হবে? ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অবশেষে জয়ের দেখা অন্তত পাওয়া গেল। তাঁরা এও বলতে পারেন, ভাগ্যিস ওয়ানডে সিরিজ গায়ানায় শুরু হয়েছিল! কেন? গায়ানায় বাংলাদেশ একবারই খেলেছে এর আগে, ২০০৭ বিশ্বকাপে। এ মাঠে সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারানোর স্মৃতি ভোলারও নয়।

১১ বছর; আবারও সেই গায়ানায় দুর্দান্ত বাংলাদেশকে দেখা গেল।