খুলনা-৩ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী জট, তৃণমূলে উৎকণ্ঠা

0
980

এম জে ফরাজী : খুলনা-৩ সংসদীয় আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীতা জট এখনো কাটেনি। আসনটিতে বিএনপি’র তরুণ দুই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কোন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভোটের মাঠে টিকে থাকবেন এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সংগঠনের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা রয়েছে উৎকন্ঠায়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনে বিএনপি’র ছয়জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। বিগত দিনে দলটির নগর কমিটি ঘিরে বিরোধের জেরে এই আসনের সংশ্লিষ্ট এলাকায়ও ব্যাপক অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে। এখান থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুল এবং মহানগর বিএনপি’র কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠুকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রকিবুল ইসলাম বকুল। নির্বাচনী এলাকায় সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে আলোচনায় এসেছেন দলীয় শিবিরে। হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে বিভিন্ন কমিটিতে তার নিজস্ব লোকদের স্থান করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ঘনিষ্ঠ আরিফুর রহমান মিঠু খুলনা বিএনপিতে মাঠের নেতা। তার পিতা আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা মরহুম এস এম এ রব এলাকার শ্রমজীবি মানুষের অত্যন্ত আপনজন ও দানবীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রবের রয়েছে বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক। যা মিঠুর জন্য প্লাস পয়েন্ট বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা। এ ছাড়া তাঁর বাড়ি বৃহত্তর নোয়াখালী এলাকায়।আসনটিতে নোয়াখালীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার আছেন।
এই দুই নেতা মনোনয়ন পাওয়ায় বাদ পড়েছেন বিএনপি’র সাবেক সাংসদ কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম। তবে তিনি বয়সের ভারে অনেকটা ন্যুব্জ, হারিয়েছেন কর্মী-সমর্থক।
খালিশপুর থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লবুর রহমান কুদ্দুস বলেন, “আমরা সত্যই উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছি। আমরা বিশ^াস করি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে কর্মীরা যাকে কখনো পাশে পায়নি, যার বিরুদ্ধে একটিও রাজনৈতিক মামলার আচড় লাগেনি, এমন কাউকে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হবেনা। জেল জুলুম উপেক্ষা করে সব সময় আমাদের পাশে আছেন তেমন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে। আর কোন অতিথি পাখিকে মনোনয়ন দেয়া হলে তা হবে চরম আত্মঘাতি”।
শিল্পাঞ্চলের আরেক বিএনপি নেতা ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “খুলনা-৩ নির্বাচনী আসন এক সময়ে ছিল বিএনপি’র ঘাটি। আসনটি পূনরুদ্ধার করতে হলে প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে যার ব্যক্তি ইমেজ আছে,সব সময় নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত”। এ ক্ষেত্রে আরিফুর রহমান মিঠু’র বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।
তবে দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম নান্নু রকিবুল ইসলাম বকুলের পক্ষ নিয়ে বলেন, “বকুল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের খুবই ঘনিষ্ঠ। তার পক্ষে আমরা একাট্টা। তাকেই মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাই। তবে দলীয় হাইকমান্ড যাকেই মনোনয়ন দিবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার জন্য কাজ করবো”।
তৃনমূলের অসংখ্য নেতা কর্মী বলেন, খুলনা-৩ আসনে বিএনপি’র প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী বর্ষিয়ান শ্রমিক নেত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং আসনটির ফলাফল নিয়ন্ত্রনে বড় ভুমিকা রাখে শ্রমিক শ্রেনী। এক্ষেত্রে মাঠের নেতা ছাড়া অধিকাংশ কর্মীর কাছে অপরিচিত কাউকে প্রার্থী করা হলে দল বা মার্কাও কোন কাজে আসবে না।
এদিকে দুই তরুণ প্রার্থীর সমর্থকরা রয়েছেন সংশয়ের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন কে পাবেন, কার পক্ষে মাঠের শ্লোগানে মুখরিত করবেন তা নিয়ে তাদের দ্বিধা কাটেনি। তবে এর মাঝেও নিজ নিজ কর্মী-সমর্থক নিয়ে ঘরোয়া সভা সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন দুই তরুন প্রার্থী। সেই সঙ্গে দলীয় হাইকমান্ডে জোর লবিং অব্যাহত রেখেছেন।