খুলনা শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে ইঞ্জিন চালিত রিক্সা যেন উড়ালপঙ্খি

0
2202

বেল্লাল হোসেন সজলঃ
খুলনা শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে ইঞ্জিন চালিত রিক্সার ব্যবহার দেদাড়ছে। সাধারণ রিক্সায় ইঞ্জিন লাগিয়ে, রিক্সা এখন উড়ালপঙ্খি। ঘন্টায় ৪০কিলোমিটার গতিবেগে লাগামহীন আতঙ্ক। অদক্ষ চালক আর অবৈধ রিক্সায় ছেয়ে গেছে নগরী। কেসিসি’র লাইসেন্স শাখায় নয় রাজনৈতিক নেতা আর প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তার পকেটের যায় ইঞ্জিন রিক্সার মাসোয়ারা।
দুর্ঘটনা ও যানজটের কারনে বিভিন্ন সময় ইঞ্জিন চালিত রিক্সার অবৈধ ঘোষণা করে যানচলাচল বন্ধ করেছে কেসিসি ও কেএমপি। তারপর ও উপরি মহলের ছত্র-ছায়ায় অবৈধ হয়েছে বৈধ। খুলনা শহরে আনুমানিক ২০১১সালের দিকে ইঞ্জিন চালিত রিক্সা চালু হয়। সাধারণ পাঁয়ের রিক্সাতেই ব্যাটারী আর মোটর লাগিয়ে ইঞ্জিন চালিত রিক্সা তৈরি করা হয়। রিক্সায় ইঞ্জিন লাগাতে খরচ পরে ১৭ থেকে ২৫হাজার টাকা। প্রতিদিন ৭থেকে ৮ঘন্টা চার্জ দিতে হয়। ২ থেকে ৩ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। রিক্সার কাঠামো আর ব্রেকিং ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন না হওয়ায় এবং অদক্ষ চালকের কারনে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় দূর-ঘটনা ঘটছে।
নগরীতে কেসিসি’র নিয়ম অনুযারী মোট ১৭ হাজার পায়ে চালিত রিক্সার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে এ বছরের জুলাই-আগষ্ট এর নবায়নের হিসেব মতে ৬ হাজার পায়ে চালিত রিক্সার রয়েছে। আর গত বছর এর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার। কেসিসি’তে পায়ে চালিত রিক্সার সংখ্যা সম্পর্কে ধারনা থাকলেও নেই অবৈধ ইঞ্জিন রিক্সার কোন ধারনা। প্রতিটি পায়ে চালিত রিক্সা নবায়ন করতে খরচ হয় ২৩০টাকা। এর মধ্যে ৫০টাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স, ১৫০টাকা রিক্সার লাইসেন্স আর ৩০টাকা টিন টোকেন। আর অবৈধ হবার কারনে নেই কেসিসির খাতায় ইঞ্জিন রিক্সার হিসেব, তাই সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেসিসি’তে ইঞ্জিন রিক্সা চালাতে টোকেন নিতে হয়। আর এই টোকেন ব্যবসায় অনেকেই বসে বসে লাভবান হয়েছেন। খুলনা সদর, খালিশপুর, দৌলতপুর ও সোনাডাঙ্গায় এলাকায় ভিত্তিক নেতার কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩০০টাকার বিনিময় বৈধতার টোকেন দেওয়া হত। বর্তমানে কেসিসির নির্বাচনের কারনে টোকেন নিতে হচ্ছে না। সবাই অপেক্ষায় আছেন নব-নির্বাচিত মেয়র কি সিদ্ধান্ত নিবেন।
কেসিসি’র সিনিয়ার লাইসেন্স অফিসার এস কে এম তাছাদুজ্জামান বলেন, ইঞ্জিন চালিত রিক্সা বন্ধের ব্যাপারে কেএমপির পদক্ষেপ আছে। কেএমপি বিভিন্ন সময় এগুলো ধরে আর আমরাও ধরি। যদি বর্তমান মেয়র সিদ্ধান্ত দেয় তবে ডিসেম্বর থেকে অভিযান চলবে। আর তা না হলে নতুন মেয়র যেই সিদ্ধান্ত দিবে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ইঞ্জিন চালিত রিক্সা চালক রফিক জানান, আমি খুলনায় ২বছর যাবত ইঞ্জিন চালিত রিক্সা চালাই। এখন নির্বাচনের পর থেকে কাওকে টাকা দিতে হচ্ছে না। এর আগে প্রতি মাসে ৩’শ টাকা করে দিতে হত। আর আমি এর আগে চট্রগ্রাম ইঞ্জিন চালিত রিক্সা চালাতাম। ওখানে ইঞ্জিন চালিত রিক্সা বন্ধ হবার পর খুলনায় চলে আসছি। খুলনায় ও যেকোন সময় ইঞ্জিন চালিত রিক্সা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এখন তো ছোট ছোট দূর-ঘটনা ঘটছে, যখন বড় ধরনের কোন দূর-ঘটনা ঘটবে তারপর থেকে খুলনায় ও বন্ধ হয়ে যাবে।
ইমন নামে এক সাধারণ যাত্রী বলেন, ইঞ্জিন চালিত রিক্সার কারনে আমাদের অনেক সময় সেভ হয়। কিন্তু বেশির ভাগ চালক অদক্ষ। তাদের প্রশিক্ষন দিতে হবে। পাশাপাশি রিক্সার কাঠামো পরিবর্তন করে মজবুত ও ভাল ব্রেক এর ব্যবস্থা করতে হবে।
রিক্সা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় বাহন। জাপানের সিমলায় ‘জোনাথন স্কোবি’ নামে একজন মার্কিন মিশনারি ১৮৬৯ সালে রিকশা উদ্ভাবন করেন। ১৯১৯ সালে রেঙ্গুনে থেকে রিকশা আসে চট্টগ্রামে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্যমতে, ঢাকায় কমপক্ষে পাঁচ লক্ষাধিক রিকশা চলাচল করে এবং ঢাকার ৪০ শতাংশ মানুষই রিকশায় চড়ে। ২০১৫ সালের গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রকাশনায় এটি বিশ্বরেকর্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশে রিকশা নিয়ে গবেষণা করেছেন একমাত্র প্রকৌশলী বোরহান।