খুলনায় যথাযথ ধর্মীয় মর্যদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে ঈদুল আজহা উদযাপন

0
569

ফকির শহিদুল ইসলামঃ
আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং যথাযথ ধর্মীয় মর্যদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহা উদযাপন । মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুয়ায়ী পশু কোরবানি করেন।ইসলাম ধর্ম মতে, প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইলের (আ.)র পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিমের (আ.) ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপি মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য আল্লাহ কোরবানি ফরজ করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। আজ ঈদুল আজহার নামাজ শেষে বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে জবেহ কৃত পশুর মাংস সংগ্রহে নগরীতে নিন্ম ও স্বল্প আয়ের নারী,পুরুষ ও বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রদের আনাগোনা ছিল বেশ ভাল । বেলা বারার সাথে সাথে বাড়ি বাড়ি যেয়ে একটুকরা মাংসের জন্য দৌড়ঝাপ চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ।
আজ জিলহজ মাসের ১১ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও আগামী দুই দিন পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুঃস্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উপলক্ষে খুলনা কারাগারসহ দেশের সকল কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম্স, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। এদিকে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বরাবরের মতো এবারও খুলনা শহর ও খুলনা শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক কর্মচারী বিভিন্ন সরকারী বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অগণিত মানুষ নাড়ির টানে গেছেন নিজের গ্রামের বাড়িতে । ঈদ উপলক্ষে আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনের সরকারি ছুটি। তবে এ সপ্তাহের শেষ দু’দিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় ছুটি দাঁড়িয়েছে ৫ দিনে।
পবিত্র এই দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে কেসিসি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ,রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ঈদগা ময়দানকে জাতীয় এবং ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে আজ ভোরে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করাার পাশাপাশী নগরীর সকল থানাসমুহ ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।

এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানীর পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেসিসি;র প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।আর এ বর্জ্য অপসারণে স্ব স্ব ওয়ার্ড কাউন্সিলরগন নিরলস পরিশ্রম করছেন । আজ ঈদ-উল-আযাহার খুলনায় প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায় নগরীর সার্কিট হাউজ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ।ঈদের প্রধান এই জামাতে অংশ নিতে সকাল থেকেই সার্কিট হাউজের ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য সকল শ্রেনী পেশার মানুষের জমায়েত চোখে পড়ার মত। খুলনায় প্রধান ঈদের জামাতে অংশগ্রহন করেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান এমপি, খুলনা সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ, নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হেলাল হোসেন, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ খুলনার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দ ও বিভিন্নরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন ।সার্কিট হাউজ কেন্দ্রীয় ঈদগার প্রধান জামাতের নামাজে ইমামতি করেন খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি ও টাউন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোঃ সালেহ। নামাজ শেষে দেশ এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ ও শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাইরে জেলার ৯টি উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী ৪৫০টি ঈদগাহে সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।নামাজ শেষে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।