খুলনায় ময়ূর নদীতে আবারও উঠেছে দখলবাজরা

0
482

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা জেলা বটিয়াঘাটা উপজেলার ময়ূর নদীতে আবারও উঠেছে দখলবাজরা। ময়ূর নদীর দখলমুক্ত অভিযান খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) যেন পন্ড শ্রমে পরিণত হতে চলছে। এ নদীকে সংরক্ষণ করে পরিবেশ বান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণসহ তা ব্যবহার উপযোগি করার দাবিতে বাংলাদেশ নদী কমিশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন খুলনার পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ। গত ১৪ জানুয়ারী এ সংগঠনের আহবায়ক এড, কুদরত ই খুদা ও সদস্য সচিব সুতপা বেদজ্ঞ স্বাক্ষরিত চিঠি প্রেরণ করা হয়। এছাড়া সংগঠনের সদস্যরা ২১ জানুয়ারী দুপুরে নদীর সার্বিক অবস্থা দেখতে সরেজমিন পরিদর্শনে যান বলে আইআরভির সমন্বয়কারী কাজী জাবেদ খালিদ পাশা জয় এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে কেসিসির উচ্ছেদ টিমের দায়িত্বশীল একটি সূত্র ময়ূর নদী দখলমুক্ত করা জায়গা আবারও বেদখল হচ্ছে বলে স্বীকার করে জানিয়েছেন, বিষয়টি শিগগিরই মেয়রকে অবগত করা হবে। মেয়রের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে ওই সূত্রটি জানায়।
নদী কমিশনের চেয়ারম্যানকে ই-মেইলে প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, খুলনা মহানগরীর পশ্চিম কোল ঘেঁষে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী ময়ূর নদী। বটিয়াঘাটা থানাস্থ রূপসা নদী থেকে হাতিয়া নদী নামে উৎপত্তি হয়ে পুটিমারী ও তেতুলতলা গ্রামের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গল্লামারী ব্রীজ থেকে মূলত ময়ূর নদী নামে শুরু হয়। এটি সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশ দিয়ে রায়ের মহল হয়ে বয়রা জেলেপাড়া বাজারের পাশ ঘেষে লতা পাহাড়পুর (দেয়ানার শেষ সীমানা) গিয়ে খুদিয়ার খাল নামে বিল ডাকাতিয়ায় মিশেছে। এর দৈর্ঘ্য ১১.৪২ কিলোমিটার (কমবেশী), প্রস্থ স্থান ভেদে ৩০ থেকে ১১০ ফুট এবং গভীরতা স্থান ভেদে ১০ থেকে ২৪ ফুট। পূর্বে ঐতিহ্যবাহী ময়ূর নদী এক সময় এখানকার মানুষের জীবন প্রবাহের সংগে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে মূল ভূমিকা পালনকারী এই নদী ছিল এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। নৌকা-ট্রলার যোগে সুন্দরবন থেকে আনা গোলপাতা, গরানসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি এই নদী থেকে শহরে সরবরাহ করা হত। নদীর আশ-পাশে বসবাসকারী মানুষেরা এই নদীর দ্বারা বেশী উপকৃত হত। চাষাবাদের কাজে এই নদীর পানি ব্যবহৃত হত। ফলে অধিকহারে ধানের ফলন এবং রবি শস্যের চাষ হত। যা এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলত। সুবিধা বঞ্চিত এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ গোসল থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজে এই নদীর পানি ব্যবহার করত। এমনকি পানীয় জলের চাহিদাও মেটানো হত এই নদীর পানি দ্বারা। এলাকার শ্রমজীবি মানুষরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে ময়ূর নদীর আশীর্বাদ পুষ্ট মানুষরাই এখন নদীটিকে অভিশপ্ত করে তুলেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী এ জলাধারের দু’পাশে অবৈধ দখলকারীরা নদীর অংশবিশেষ ভরাট করে বসতবাড়ী পর্যন্ত তুলেছে। অবৈধভাবে শ শ বিঘা এলাকা ঘিরে করছে মাছের চাষ। নদীর দু’পাশে অসংখ্য ঝুলন্ত পায়খানা নদীটি ব্যবহারের অযোগ্য করে তুলেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত সুুইচ গেটটি প্রায় অকার্যকর। এটি সচল থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, তদারকীর অভাব এবং দায়িত্বশীলদের অসততার কারণে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। নদীর দু’পাড়ের ময়লা-আবর্জনায় নদীর গভীরতা পূর্বের তুলনায় অর্ধেকে এসে পৌছেছে। পানি পঁচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। পানি উঠানো নামানোর জন্য মাঝে মাঝে গেট যেটুকুও খোলা হয়, প্রভাবশালীরা মাছ ধরার জন্য ওয়াপদার সরকারী গাছের ডালপালা কেটে নদীতে ফেলে কমর তৈরী করে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে নদী ভরাটের কাজ আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ভূ-প্রকৃতি অনুযায়ী খুলনা মহানগরী পশ্চিম দিকে ঢালু। অর্থাৎ প্রাকৃতিক নিয়মে পানি পশ্চিম দিকেই প্রবাহিত হবে। প্রকৃতির এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখতে ময়ূর নদী ও তার সংযোগ বাইশটি খাল উদ্ধার এবং সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্পের মাধ্যমে এই জলাশয় গুলো বেঁধে না রেখে সে গুলোকে অবমুক্ত করে অবাধ পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা খুবই জরুরী বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।