খুলনায় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে কৌশলী আ’লীগ-বিএনপি

0
613

এম জে ফরাজী : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করতে কৌশলী অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট। দু-একটি আসনে প্রার্থীদের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ আসনে কারা পাচ্ছেন দলীয় টিকেট তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এ নিয়ে দু-জোটেই চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এক জোট আরেক জোটের প্রার্থী দেখে প্রার্থী ঘোষণা করবে এমন আলোচনা সর্বত্র। তবে শেষ সময়ে কারা হচ্ছেন নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী সে বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ২-৩ দিন।
সূত্র জানায়, খুলনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ ১১ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়নত্র সংগ্রহ করেছেন। আবার মহাজোটের অংশীদার হিসেবে জাতীয় পার্টি এ আসনে প্রার্থী দিতে চাচ্ছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে দলের দুর্গ ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৯৬ সালের পর আবারও এ আসনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জন খুলনাজুড়ে। তবে বিএনপিতে তেমন কোন সমস্যা নেই। ধানের শীষের প্রার্থী হতে জেলা বিএনপির আমীর এজাজ খান একমাত্র প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তিনিই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হচ্ছেন এটা এক প্রকার নিশ্চিত।
খুলনা-২ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নিশ্চিত হয়েছে অনেক আগেই। বর্তমান সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজানকে বাদ রেখে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাহউদ্দিনকে জুয়েলকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন কেসিসি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক। সম্প্রতি নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তিনি প্রার্থী ঘোষণা করেন।
ধানের শীষের প্রার্থী হতে ইতোমধ্যে নগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তবে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুই ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন এটা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষ্য।
খুলনা-৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হতে আগ্রহী বর্তমান এমপি বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় আ’লীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন, জেপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল হামিদ চন্দন। এদের মধ্যে এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক কে পাচ্ছেন তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কমতি নেই। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে আবারও নৌকার মাঝি হিসেবে দেখা যেতে পারে।
প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এ আসনে বিএনপিকেও পড়তে হচ্ছে জটিল সমীকরণে। দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে সাবেক এমপি কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল ও নগর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠু জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে রকিবুল ইসলাম বকুল অথবা আরিফুর রহমান মিঠুকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে।
খুলনা-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদীকে এবারও নৌকার প্রার্থী হিসেবে দেখা যাচ্ছে এটা স্পষ্ট। যদিও দলের মনোনয়নের দাবিদার সাবেক এমপি মোল্লা জালাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান জামালসহ আরও অনেকে।
তবে বিএনপির প্রার্থী বাছাই বরাবরের মতো পড়তে হবে মধুর সমস্যায়। দলের কেন্দ্রীয় দুই নেতা শরীফ শাহ কামাল তাজ ও আজিজুল বারী হেলাল এ আসনে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। শরীফ শাহ কামাল তাজ ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেলেও বিজয়ী হতে পারেননি। সেক্ষেত্রে ঘরের ছেলে আজিজুল বারী হেলাল ধানের শীষের প্রার্থী হতে পারেন এমন আলোচনা রূপসাপাড়ে।
খুলনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ছাড়াও মনোনয়নের জন্য আলোচনায় রয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা সরোয়ারসহ বেশ কয়েকজন। তবে আ’লীগ নেতারা বলছেন, অন্য প্রার্থীদের ডিঙিয়ে আবারও নৌকার মাঝি হতে যাচ্ছেন বর্তমান মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরীক আদালতের রায়ে নিষিদ্ধ হওয়া ‘জামায়াতে ইসলামী’ বরাবরই এ আসনে প্রার্থী দিয়ে আসছে। অতীতের মতো আবারও দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ারকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ড. মামুন রহমান, গাজী আব্দুল হকও জোরালো আলোচনায় রয়েছেন।
খুলনা-৬ আসনটি নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’দলই রয়েছে জটিল সমস্যায়। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দু’দলকে করতে হবে নানা হিসাব নিকাশ। দলের হেভিওয়েট প্রার্থী বাদ দিয়ে জোটের সমীকরণে শরীকদের ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তবে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে অনড় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাড. নুরুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানাসহ ১৪ জন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শফিকুল ইসলাম মধুও এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে জেলা বিএনপি’র সভাপতি এড. এস এম শফিকুল আলম মনা, সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু, কয়রা উপজেলা সভাপতি এড. মোমরেজুল ইসলামসহ ৬জন দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। সব প্রার্থীদের ছাপিয়ে জোটের সমীকরণে জামায়াতে ইসলামীর নগর সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে করা হতে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। তবে দু-জোটেরই প্রার্থী সম্পর্কে চূড়ান্ত ধারণা পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আরও কয়েকদিন।