খুলনায় আড়াই বছর ধরে বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত, ক্লাস অন্যত্র

0
898

এম জে ফরাজী : খুলনার সোনাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিত্যক্ত করা হয়েছে আড়াই বছর আগে। কিন্তু এখনো এর সংস্কারকাজ শুরু হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে অন্য আরেকটি বিদ্যালয়ে। এতে যেমন কমছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা, তেমনি অস্তিত্ব হারাচ্ছে বিদ্যালয়টি। তবে শিক্ষা কর্মকতা শোনালেন আশার বাণী। তার মতে, চলতি অর্থবছরেই কাজ শুরু হবে।
সূত্র জানায়, নগরীর নিউমার্কেটস্থ সোনাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয় ১৮৭০ সালে। ১১৮ বছর পর ১৯৮৮ সালে বিদ্যালয়ের দো-তলা ইমারত নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৯৩ সালে তৃতীয় তলার কাজ শেষ হয়। ২৫ বছর পর ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে বিদ্যালয়টির সংস্কার করা হয়। অনেকদিন সংস্কারের অভাবে বর্তমানে বিদ্যালয়টি একদিকে হেলে পড়েছে। ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ফাটল ধরেছে, কোন কোন জায়গা ফেটে পড়ছে। ছাদের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে নিচে পড়ছে। ২০১৫-২০১৬ সালে সংঘটিত বিভিন্ন ভূমিকম্পের কারণে বিদ্যালয়টি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর ফলে সেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো নিরাপদ নয়। যেকোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অন্যত্র ক্লাস করানোর ব্যবস্থা করানো হয়েছে বলে জানায় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা।
সূত্র আরও জানায়, সংস্কারের অভাবে অনেক আগেই বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে ২০১৫-১৬ সালে বারবার ভূমিকম্পের কারণে বিদ্যালয় ভবন একদিকে হেলে পড়েছে। এতে নতুন করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে নানা শঙ্কার সৃষ্টি হওয়ায় এ ভবন থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বিরত রাখা হয়েছে। তাদেরকে নিরাপত্তার জন্য সেখান থেকে পাঠদান বিরত রাখতে বলেছে শিক্ষা অফিস। এমতাবস্থায় ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি সদর থানা শিক্ষা অফিসার বরাবর বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে পার্শ্ববর্তী সোনাডাঙ্গা আবুবক্কর খান আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান করার আবেদন করেন বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। পরে সহকারী শিক্ষা অফিসার মোছাঃ কামরুন্নাহার হাছিনা বানু বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন। ওই সময় বিদ্যালয়টির বাথরুমের ছাদ নিচে ধসে পড়ে। এরপর শিক্ষিকাদের আবেদন সাড়া দিয়ে সদর থানা শিক্ষা অফিস অন্যত্র ক্লাস করানোর অনুমতি দেন।
এরপর ২০১৬ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে সোনাডাঙ্গা আবুবক্কর খান আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে প্রতিদিন দুই শিফটে দুই স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ এ বিদ্যালয়েও নেই। চারটি কক্ষের মধ্যেই দুই স্কুলের ৬ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হয়। তাতে এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে ক্লাস করাতে হচ্ছে। তাতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে দুই স্কুলেরই শিক্ষার্থীরা।
আড়াই বছর আগে তৎকালীন জেলা শিক্ষা অফিসার পারভীন জাহান বলেছিলেন, বিদ্যালয়ের ভবন সংস্কারের জন্য আমরা মেরামত তালিকায় এ বিদ্যালয়ের নাম পাঠিয়েছি। স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যবস্থা নিলেই এর সংস্কারকাজ করা হবে। তবে এখন আপাতত এক স্কুলের ভবনে দুই স্কুলের পাঠদান চলবে। কিন্তু আড়াই বছর পার হলেও পরিত্যক্ত স্কুলটি মেরামতের কোন তোড়জোড় নেই কর্তৃপক্ষের। বরং একই স্থানে ক্লাস করানোর ফলে বিদ্যালয়টি থেকে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। সাথে সাথে সোনাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামও মানুষের মুখ থেকে উঠে যাচ্ছে।
সোনাডাঙ্গা আবুবক্কর খান আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী হাওলাদার জানান, শিক্ষা অফিসের নির্দেশেই আমাদের স্কুলে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত অপর বিদ্যালয়টির সংস্কার করা না হয় ততদিন এখানেই দুই স্কুলের ক্লাস করানো হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ পোদ্দার জানান, খুলনা সদর ক্লাস্টারের ৫টি স্কুল সংস্কারের জন্য আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে তালিকা পাঠিয়েছিলাম। সেটি পাশ হয়েছে। আশাকরি চলতি অর্থবছরেই এ বিদ্যালয়টির সংস্কারকাজ শুরু হবে।