খুলনার মাদক সম্রাট বিপ্লব আতংক খোদ শ্রমিক পরিবারেই!

0
1093

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহানগরীর মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকের তালিকাভূক্ত মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব আতংক ভর করছে খোদ শ্রমিক পরিবারেই। একদিকে শ্রমিকদের মাদকের ভেলায় ভাসিয়ে টেনে নিচ্ছে অন্ধকার জগতে, অন্যদিকে বাধ্য করা হচ্ছে শ্রমিক পরিবারের স্ত্রী-কন্যার ইজ্জতের দিতে।

এদিকে বিপ্লবের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মটর শ্রমিক ইউনিয়নের প্রয়াত সভাপতি সেন্টুর ভাই সুইট শেখ। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ২০ আগস্ট আর্জি জমা দেন তিনি। আতংকিত সুইট খুলনাটাইমসকে জানায়, সেন্টু হত্যা মামলায় মূল অভিযুক্ত সেন্টু পত্নী মনিরা ও বিপ্লব। নিজেদের অবৈধ সম্পর্ক ও সেন্টুর অঢেল সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেই পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় সেন্টুকে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভূক্তভোগী শ্রমিক (শাহজাহান ড্রাইভার) পত্নী মুক্তা বেগম ও তার নবম শ্রেণীর পড়–য়া কন্যার এক অভিযোগ ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এনিয়ে বাস টার্মিনাল এলাকায় তখন কানাঘুষা শুরু হয়। খুলনাটাইমস’র এই প্রতিবেদক সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে ভূক্তভোগী মা-মেয়ের কাছে জানতে চাইলে, অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে ওদের চোখ দিয়ে, নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এক পর্যায়ে ভূক্তভাগী পরিবার জানায়, বিপ্লবকে নিয়ে অভিযোগ দিয়েছে থানা পুলিশ, রাজনীতিকদের কাছে। তব তাতে কোন লাভ হয়নি। সে তার অর্থ ক্ষমতায় সবই ম্যানেজ করে ফেলে। উপরুন্তু আবারও আমরা নির্যাতনের শিকার হই।

ভূভোগী পরিবার সূত্রমতে, বিপ্লবের কাছে এই নারীরা যেন অসহায়। যা তারা চক্ষুু লজ্জা এবং বিপ্লবের ভয়ে কাউকে বলতে পারে না। বিপ্লব তার স্বামীকে (১১১৪ ইউনিয়নের সদস্য) প্রতিদিন এক হাজার টাকা দেয় মদ খাওয়ার জন্য। বিনিময়ে সে তার স্ত্রীকে ভোগ করে। এভাবেই দীর্ঘ দিন চলছে পালাক্রমে শারীরিক নির্যাতন। তবুও মুখ বুঝে সহ্য করেছি। তবে এখন আমার কিশোর কন্যার ওপর তার কু-নজর দিয়েছে। সম্প্রতি মাতাল হয়ে ছোট্ট মেয়েটির সাথেও জোরপূর্বক…শারীরিক নিপীড়নের চেষ্টা চালায়। আমি বাধা দিলে আমাকে বিপ্লব ও তার লোকজনেরা মারপিট করে। এসময় সে তার কতিপয় স্থানে মারপিটের ক্ষতচিহৃ বহনের নিদর্শন তুলে ধরে।

এমন লোম হর্ষক ঘটনাই তুলে ধরে ভুক্তভোগী মুক্তি বেগম (ছদ্ম নাম) আরও বলেন, বিপ্লবকে প্রশাসনের কেউ কিছু বলে না, আর আমরাও কিছু করতেও পারবে না। অযথা আমি কার কাছে বিচার দিবো। আর নিজের বিপদ আরো ডেকে আনবো। আল্লাহর কাছে বলা ছাড়া আমার আার কিছু করার নাই। তার মতে, শ্রমিক পরিবারের সুন্দরী স্ত্রী-কন্যা থাকলেই সেই বাড়ি যাতায়াত বাড়ে বিপ্লব গংয়ের, বসে মাদকের আসরও।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সাল থেকে খুলনা মাটরশ্রমিক ইউনিয়নরে সাধারণ সম্পাদক হন বিপ্লব। শ্রমিক দলের খুলনা মহানগর যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই ভোল পাল্টে যোগ দেন শ্রমিক লীগে, নগর কমিটির সদস্য হন। গোয়েন্দো তথ্যমতে, মাদক ব্যবসা ও বাস টার্মিনালরে নিয়ন্ত্রন রাখতেই এই দলবদলের পালা বিপ্লবের। দিনপ্রতি লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেন এই সেক্টর থেকে। নিজের ও পরিবারের নামে-বেনামে গড়েছেন প্রায় শত কাটি টাকার সম্পত্তি।

আরও জানা গেছে, বিপ্লব বাহিনীর প্রথম সাড়ির ক্যাডাররা হলেন, রফিকুল, জাহিদ, আলম, বাবা আলী, বাংলা রানা, চোপড়া ফারুক, বিল্লল, আজিজ, আশরাফুল, ফানটু দুলাল অন্যতম। এসকল ক্যাডারদরে নিয়ন্ত্রন করছে বিপ্লব পুত্র ঐশি। বাস টার্মিনালকে কেন্দ্র করে গত একযুগ ধরে বিপব মাদকের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন-পুলিশের অসাধু কর্তারা তার এই ব্যবসায় মাসোয়ারা নিয়ে অব্যাহত সহযোগিতা চালিয়ে আসছে।

খুলনা টু চট্টগ্রাম রুটে চলা বিপ্লবের মালিকানাধীন ঐশি পরিবহনেই খুলনায় ইয়াবার চালান আসে সূত্র জানায়। বিপ্লব পুত্র ঐশি এই ইয়াবা ছড়িয়ে দেয় ডিলারদের কাছে। আর এভাবেই শহর থেকে শহরতলী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে মরণনেশা ইয়াবা। অবশ্য এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই দিন প্রতি লাখ লাখ টাকা মাসোয়ারা যায় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা-কর্মী, অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে।

খুলনা মট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) সোনালী সেন খুলনাটাইমসকে বলেন, মোটর শ্রমিক নেতা জাকির হোসেন বিপ্লবকে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের জন্যই এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তবে তাকে অব্যাহত গোয়েন্দা নজরদারীতে রাখা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি নিশ্চিত করেন, মাদকের ব্যাপারে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে। এজন্য মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকরা কোনমতেই ছাড় পাবে না।

এনিয়ে জাকির হোসেন বিপ্লবের বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি, তবে অন্য এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানান ভাই ব্যস্ত আছেন।