কামরুল হোসেন মনি:
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে নেসলে গুঁড়ো দুধ কোম্পানি ‘মায়ের দুধের বিকল্প নেই’ একটি সেমিনার বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) কর্মকর্তা নস্যাৎ করে দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত সেমিনার কোনো গুঁড়ো দুধ কোম্পানিরা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে করলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। বিকল্প শিশুখাদ্যের প্রচারণার বিরুদ্ধে আইন থাকলেও সচেতনতার অভাবে এটার সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না।
জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কনফারেন্স রুমে নির্ধারিত সময়ে গুঁড়ো দুধ কোম্পানি নেসলে ‘মায়ের বুকের দুধে বিকল্প নেই’ সংক্রান্ত সেমিনারটি প্রস্তুতি চলছিলো। ওইখানে ওই হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ শামসুন্নাহার লাকী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শুরুর আগেই উপস্থিত হন বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু সামা মোঃ আল ইমরান। তিনি উপস্থিত হয়ে এ সংক্রান্ত সরকারিভাবে বিধিনিষেধ জারী করা আছে মর্মে গেজেট উপস্থাপন করলে তা কর্তৃপক্ষ বন্ধ করতে বাধ্য হন।
সূত্র মতে, বিভিন্ন গুঁড়ো দুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে সুকৌশলে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি তাদের কোম্পানির তৈরি দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোনো গুঁড়োদুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রচার-প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ করতে পারবে না। এমনকি কোনো সরকারি চিকিৎসক এ সংক্রান্ত সেমিনারেও উপস্থিত থাকতে পারবেন না। দেখা গেছে, আইনটি সম্পর্কে ধারণা থাকলেও চিকিৎসকদের একটি অংশ কৌশলে বিকল্প শিশু খাদ্য ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে। তারা ব্যবস্থাপত্রে বিকল্প শিশুখাদ্যের নাম না লিখলেও এসব খাদ্যের ছবি, নামসহ ছাপানো স্লিপ বা লিফলেট শিশুদের অভিভাবকদের হাতে ধরিয়ে দেন।
খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মায়ের দুধের বিকল্প নেই’ এ বিষয়সংক্রান্ত নেসলে কোম্পানির প্রতিনিধিরা সেমিনার করতে এসেছিলো। আমি ওটা বন্ধ করে দিয়েছি।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু সামা মোঃ আল ইমরান এ প্রতিবেদককে বলেন, বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেসলে কোম্পানির প্রতিনিধি শিশুদের দুধ খাওয়ানোবিষয়ক একটি সেমিনার আয়োজন করতে যাচ্ছে – এমন তথ্য পেয়ে আমি সেখানে উপস্থিত হই এবং নেসলে কোম্পানিকে এটার বিধিনিষেধ সম্পর্কে অবহিত করি। পরে তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে এ বিষয়ে অবহিত করলে তিনি ওটা বন্ধ করে দেন। বিবিএফ ওই কর্মকর্তা বলেন, কোন গুঁড়োদুধ কোম্পানি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ব্যবহার করতে পারবেনা আইনে বাধা নিষেধ রয়েছে। এমনকি শিশুখাদ্যবিষয়ক কোনো লিফলেট বিতরণেও আইনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেউ এই আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে অনেক চিকিৎসক কৌশলে মায়েদেরকে গুঁড়ো খাওয়ানোর পরামর্শ দেন, এমনকি কৌশলে প্রেসক্রাইবে উল্লেখ করে থাকেন।
খুমেক হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ শামছুন্নাহার লাকী এ বিষয়ে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ওই সময় আমি এমনি ওখানে উপস্থিত ছিলাম।
নেসলে গুঁড়োদুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মোঃ ইয়াসিন এ প্রতিবেদককে বলেন, খুমেক হাসপাতালে তাদের একটি কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিলো, ওটা আমরা সম্পন্ন করেছি। এর আগের সুপার থাকতেও আমরা করে আসছি। তাদের কোম্পানির কোন পদে রয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি তা প্রকাশ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, মাতৃদুগ্ধ পানের ওপর গুরুত্বারোপ করে ২০১৩ সালে ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহার ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন’ অনুমোদন করেছে। ২০১৩ সালের এ সংক্রান্ত আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, প্যাকেট ও কৌটাজাত পণ্যের গায়ে লেখা থাকতে হবে ‘শিশুর জন্য মায়ের দুধের সমতুল্য বা শ্রেষ্ঠতর কোনো খাদ্য নেই।’ আরও লেখা থাকতে হবে ‘এই (কৌটা/প্যাকেট) খাদ্য সম্পূর্ণ রোগ-জীবাণুমুক্ত নয়।