খুলনার আধুনিক জেলা কারাগার নির্মাণ কাজ এক যুগেও শেষ হয়নি

0
165

টাইমস ডেস্ক:
‘কারাগার হবে সংশোধনাগার’ এমন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে খুলনায় আধুনিক কারাগার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০০৮ সালে। আর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। ওই সময় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, কারাগার অভ্যন্তরে নির্মাণাধীন চারতলা হাসপাতাল পাঁচতলাকরণ, কারারক্ষীদের বাসভবন সম্প্রসারণ, দর্শনার্থীদের স্থান ও ভবনের বর্ধিতকরণসহ বেশকিছু নতুন পস্তুÍাব প্রকল্পে সংযুক্ত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করা যায়নি। প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় আরও ছয় মাস মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তাই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ প্রকল্পের কর্মকর্তারাই। তারা বলছেন, ডিপিপির পুনর্মূল্যায়ন পস্তুÍাব এখনও পাস হয়নি। তাই চাইলেই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এতে পুরো প্রকল্পের কাজ আরও পেছানোর আশঙ্কা রয়েছে। খুলনার গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ২০ জুলাই খুলনায় আধুনিক কারাগার নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নগরীর উপকণ্ঠ ডুমুরিয়া উপজেলার চক মথুরাবাদের হাসানখালী মৌজার ৩০ একর জমিতে নতুন এ কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১১ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। এরপর স্থান পরিবর্তন, জমি অধিগ্রহণসহ সব প্রক্রিয়া শেষে ৫৬ একর জমির ওপর ২৫১ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে দুই হাজার বন্দি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এ কারাগারের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, খুলনার নতুন এ কারাগার গড়ে তোলা হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে নির্মাণ করা হবে ছোট-বড় ৫২টি ভবন। বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের আলাদা স্থান, মা ও শিশুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাসহ নারীদের ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও পুরুষ বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। আরও থাকবে বন্দিদের জন্য স্কুল, আধুনিক লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, সেলুন, লন্ড্রি ইত্যাদি। এছাড়া কারাগারে শিশুদের জন্য থাকবে আলাদা ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। শিশুসহ মা বন্দিদের জন্যও থাকবে আলাদা একটি ওয়ার্ড। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা ওয়ার্কশেড ও বিনোদনকেন্দ্র থাকবে। কিন্তু প্রকল্পটির সামনে প্রায় তিন একর ব্যক্তি মালিকাধীন জমি থাকায় কারাগারের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় সেটি অধিগ্রহণের প্রয়োজন দেখা দেয়। একইসঙ্গে কারাগার অভ্যন্তরে নির্মাণাধীন চারতলা হাসপাতালটি পাঁচতলাকরণ, কারারক্ষীদের বাসভবন সম্প্রসারণ, নিজস্ব ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপন, দর্শনার্থীদের স্থান ও ভবনের বর্ধিতকরণসহ বেশকিছু নতুন পস্তুÍাব সংযুক্ত হওয়ায় তা শেষ করতে আরও প্রায় ছয় মাস সময় প্রয়োজন হবে। আর পুরো কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরও দুই বছর। ফলে নতুন আধুনিক খুলনা জেলা কারাগার চালু হতে আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত বিভাগ খুলনার এক কর্মকর্তা জানান, ২০০৮ সালে যে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল তা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে অনেক পরিবর্তন হয়। এসব পরিবর্তন পস্তুÍাবনায় অন্তর্ভুক্ত ও পাস করে আনতে অনেক সময় লেগেছে। তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। গণপূর্ত বিভাগ খুলনা-২ এর সহকারী প্রকৌশলী জিয়া জানান, সর্বশেষ সময় বেড়ে এ প্রকল্পের শেষ সময় হচ্ছে আগামী চলতি বছরের ডিসেম্বরে। প্রকল্পে নতুন নতুন বিষয় সংযুক্তি হওয়ার কারণে কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগছে। গণপূর্ত বিভাগ খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দীন বণিক বার্তাকে বলেন, নতুন কিছু পস্তুÍাব ও জমি অধিগ্রহণের জন্য নতুন জেলা কারাগার নির্মাণ শেষ করতে সময় লাগছে। মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই বছর পর নতুন এ কারাগারের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। প্রসঙ্গত, ১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদের তীরে নির্মাণ করা হয় ৬০৮ বন্দির ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন খুলনার বর্তমান জেলা কারাগার। বর্তমানে এ কারাগারেই বন্দিদের রাখা হচ্ছে।