কয়রায় শিক্ষার্থীদের চলাচলে দুর্ভোগ, হাটুপানি পেরিয়ে বিদ্যালয়ে

0
346

ওবায়দুল কবির স¤্রাট, কয়রা থেকে:
খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড এলাকার বায়লা হারানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও যাতায়াতের পথটি বছরের বেশিরভাগ সময় পানিতে তলিয়ে থাকে। এ জলাবদ্ধতা অতিক্রম করেই তবে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পানি ডিঙিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে চাননা অনেকেই।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে ৫০ শতক জমিতে বিদ্যালয়টি গড়ে তোলা হয়। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা একশ চার জন। ২ বছর আগে সাইক্লোন স্লেটার কাম বিদ্যালয় হিসাবে গড়ে তোলা হয়। বিদ্যালয়ে তিনটি কক্ষ রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ২জন। বিদ্যালয় পাশে রয়েছে বেসিম মিম আলীম মাদ্রাসা। সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড়শত। বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার তিন দিকে ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি মাছের ঘের। এই ঘেরগুলো চার পাশে নেই কোন বেড়িবাঁধ। তাছাড়া বিদ্যালয় মাঠের জায়গা বেশ নিচু। বিদ্যালয়ের যাতায়াতের সড়কটি রয়েছে একাধিক মালিকানা। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী প্রদক্ষেপ আজও নেওয়া হয়নি। এক দিকে ঘেরে পানি অন্যদিকে বৃষ্টির পানি মিলে অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ের মাঠ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের পথ পানিতে তলিয়ে থাকে।
শুধু কি তাই বায়লা হারানিয়া গ্রামের প্রায় ১৫টি মত পরিবারকেও চমর দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঘের মালিকদের বার বার বলার পরও তারা ঘেরের চারপাশে বাঁধ দেন না। এই বিদ্যালয় কতৃপক্ষ একাধিক বার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কোন সুরাহ মেলেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য নেই কোন ব্যবস্থা। হাটু পানি পার হয়ে একদল ক্ষুদে শিক্ষার্থী বাড়ির পথে রওনা করেছে। পরনের প্যান্ট মুড়িয়ে সবার হাটুর ওপরে ওঠানো। বই গুলো একেকজন একেকভাবে ধরে রেখেছে। কেউ মাথার ওপর ধরে রেখেছে। কেউবা কাঁধে, আবার অনেকেই বুকের সঙ্গে চেপে ধরেছে।
এ সময় কথা হয়, নাইম, সাকিব, নাহার,আমেনাসহ একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে। তারা বলে, এভাবে হাটু পানি মাড়িয়ে আর কতদিন স্কুলে যাবো। অনেকের পায়ে ঘা হয়েছে। অথচ আমাদের খবর কেউ রাখেন না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের রাস্তাটা বানিয়ে দিলেই তো পারেন। তাহলে তো আর সমস্যা থাকে না।
বায়লা হারানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাছলিমা ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলে বিদ্যালয়ে আসতে আমাদের সমস্যা হয়। রাস্তায় অনেক পানি থাকে তাই স্কুলে আইতে ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে বই-খাতা ও জামা-কাপড় ভিজে জায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মামুন হোসেন বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তাটির মধ্যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরাসহ আশে-পাশে বাড়িগুলো বাসিন্দা চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানায় আরেক বাসিন্দা বৃদ্ধ লুুৎফুর নেছা বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয়ে নাতি-নাতনিরা যেতে চায় না। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন শিশু শিক্ষার্থী ঝুকিপূর্ণ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। কেউ কেউ আবার কাদা পানিতে পড়ে আঘাত গ্রস্ত হয়। মাঝে মাঝে পাশের ঘেরে পড়ে যায়। তখন জীবনের হুমকি হয়ে যায়। এ বিষয়ে একাধিকবার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফল হয়েছে শুন্য। ঘের মালিকদের বাধার সংস্কার কাজ বার বার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমির আলী বলেন, যাতায়াতের সড়কটি কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন। যাতায়াতের পথ অনেক নিচু। তাছাড়া এলাকায় মাটির সংকট থাকায় ইটের বাজেট আসলেও সড়কটি করা সম্ভব হয়নি।
বায়লা হারানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ আজিজুন্নাহার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার সমস্যা চলে আসছে, বছরের প্রায় বেশির ভাগ সময় আমারা ও শিক্ষার্থীরা পানি ভেঙ্গে স্কুলে আসতে হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টা জানিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।