কেএমপি’র লবণচরা থানার অভিযানে মানবপাচার চক্রের ৬ জন গ্রেফতার, ২ ভিকটিম উদ্ধার

0
61
লবণচরা থানা পুলিশ কর্তৃক মানব পাচার চক্রের মূলহোতাসহ ৬ জন আসামী গ্রেফতার ও ২ জন ভিকটিম উদ্ধার সংক্রান্তে বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে কেএমপি’র সদর দপ্তরে মিডিয়া ব্রিফিং করেন পুলিশ কমিশনার মো: মোজাম্মেল হক, বিপিএম-বার, পিপিএম সেবা।

নিজস্ব প্রতিবেদক:
লবণচরা থানা পুলিশ কর্তৃক মানব পাচার চক্রের মূলহোতাসহ ৬ জন আসামী গ্রেফতার ও ২ জন ভিকটিম উদ্ধার সংক্রান্তে বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে কেএমপি’র সদর দপ্তরে মিডিয়া ব্রিফিং করেন পুলিশ কমিশনার মো: মোজাম্মেল হক, বিপিএম-বার, পিপিএম সেবা।

এসময় তিনি বলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর। আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গী, মানব পাচার চক্রের মূলহোতা, মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামী, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিশালী যারা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সহকারি পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) গোপীনাথ কানজিলাল এর নেতৃত্বে লবণচরা থানা পুলিশের একটি চৌকস আভিযানিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মোহাম্মদ নগর এলাকার রাজা সাহেবের রাইচ মিল সংলগ্ন আদিলুজ্জামান সড়ক ২য় লেন এর জনৈক শেখ মিজানুর রহমান এর ২য় তলা বাড়ির নিচ তলা হতে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত মিল্টন মন্ডল (৪০); মোঃ সাইফুল ইসলাম (২১); মোঃ হিমেল (২১); খাদিজা বেগম (২২); রতœা আক্তার @ পায়েল (২০) এবং রাবেয়া বেগম (২০)’কে গ্রেফতারপূর্বক তাদের হেফাজতে থাকা ঘটনাস্থল হতে অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই জন ভিকটিমকে (তরুণী) উদ্ধার করা হয় যাদের ১ জনের বয়স ১৪ বছর এবং আরেক জনের বয়স ১৫ বছর।

এ সময় জানা যায়, আসামীরা ভিকটিমদ্বয়কে গত ২ মাস পূর্বে যাত্রাপালায় গানবাজনা এবং অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে আসে এবং ভিকটিমদ্বয়ের নগ্ন ছবি ধারণ করে তাদেরকে জোরপূর্বক আটক রেখে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। তারা অনৈতিক কাজে লিপ্ত না হলে তাদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে এহেন জঘন্য কাজ করতে বাধ্য করে। এছাড়াও, সেখানে রাতের বেলায় আসামীরা ডিজে পার্টিসহ আগতদের মনরঞ্জণের রঙ্গিন আলোয় নাচ-গানের ব্যবস্থা করে থাকে। এমতাবস্থায়, ভিকটিমরা পতিতাবৃত্তিতে ও নাচ-গানে অস্বীকৃতি জানালে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে।
পরবর্তীতে আরো জানা যায়, তারা ভিকটিমদের এভাবে ফাঁদে ফেলে দীর্ঘকাল যাবৎ পতিতাবৃত্তি করাচ্ছে এবং ভারতের কলকাতা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও সুরাট সহ বিভিন্ন প্রদেশে বিক্রি করে অর্থ-সংস্থান করে। উক্ত স্থানে অভিযানকালে সেখানে যৌন উত্তেজক ঔষধসহ সেক্স টয় টাইপের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য যে, গত ৫ মার্চ ২০২৪ তারিখে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের হ্যালো কেএমপি অ্যাপসের ইনবক্সে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তির গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, মানব পাচার চক্রে জড়িত কতিপয় ব্যক্তি দুই জন ভিকটিমকে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানা এলাকার মোহাম্মদ নগরে রাজা সাহেবের রাইচ মিল সংলগ্ন আদিলুজ্জামান সড়ক ২য় লেন এর জনৈক শেখ মিজানুর রহমান এর ২য় তলা বাড়ির নিচ তলায় আটক রেখে পতিতাবৃত্তি করাচ্ছে।

এ সময় আরো জানা যায়, বিগত ২ মাস যাবত বিভিন্ন জায়গায় যাত্রাপালায় গানবাজনা এবং অভিনয়ের কথা বলে ভিকটিমদ্বয়কে নিয়ে গেলেও তাদেরকে যাত্রাপালায় গানবাজনা এবং অভিনয় করতে দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে দালালের মাধ্যমে পার্টি ঠিক করে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার জন্য এই কালক্ষেপন করা হয়।

গত ২ মার্চ সকাল অনুমান ৯টার সময় ঘটনাস্থলে ভিকটিমদের বাসায় এনে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লোকজনের সাথে আসামীরা কথা বার্তা বলে ও দাম দর পাকা করে। আসামীরা ভিকটিমদ্বয়কে পতিতাবৃত্তি করানোর জন্য জোর জবরদস্তি করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটক করে রাখে। পরবর্তীতে গত ৫ মার্চ রাত্রি বেলায় আসামীরা ভিকটিমদ্বয়কে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে দালালের নিকট হস্তান্তর করবে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত আসামীগণ সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। ভিকটিমদ্বয়কে কাজের কথা বলে ডেকে এনে পতিতাবৃত্তি করানোর জন্য ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে আটক রেখে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৭/১০/১১ ধারার অপরাধ করেছে বিধায় তাদের বিরুদ্ধে লবণচরা থানার মামলা নং-০৫, তারিখ-০৫/০৩/২০২৪ খ্রি:, ধারা-মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৭/১০/১১ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার বাদী এস আই (নি:) মো: আশরাফ হোসেন। আসামী বর্তমানে লবণচরা থানা হাজতে আটক আছে। যথানিয়মে ধৃত আসামীকে রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা হচ্ছে, ডুমুরিয়া থানাধীন কাকমারী গ্রামের অরুন মন্ডলের ছেলে ও লবণচরা থানাধীন মোহাম্মদনগর এলাকার ভাড়াটিয়া, মানবপাচার চক্রের মূলহোতা মিল্টন মন্ডল (৪০) ও তার স্ত্রী খাদিজা বেগম (২২), চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানাধীন লোকনাথপুর গ্রামের শামসুর ছেলে ও মোংলা থানার ৩৭৫, নারকেলতলা আবাসন এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাইফুল ইসলাম(২১) ও তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (২০), পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার ¯øুইজ গেট ৯নং ওয়ার্ড’র জাফর ফরাজী@বাচ্চুর ছেলে ও লবণচরা থানাধীন-মোহাম্মদনগর মাদ্রাসা গলির বাসিন্দা মোঃ হিমেল(২১) এবং খুলনা সদর থানাধীন ৫নং মাছঘাট টিটি কলোনীর বাসিন্দা মিলনের মেয়ে রতœা আক্তার@পায়েল(২০)।

০১ নং আসামী মিল্টন মন্ডল মানব পাচার চক্রের মূলহোতার নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই। খুলনা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয় থানায় তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা। সে যাত্রাপালায় গান বাজনা করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং গানবাজনার আড়ালে সে উঠতি বয়সি তরুণীদের টার্গেট করে ফুসলিয়ে ভিনদেশে পাচার করে দেয়, পাশাপাশি সে মাদক ব্যবসায়ের সাথেও জড়িত। ব্যক্তি জীবনে সে বিবাহিত। তার রাজনৈতিক কোন পরিচয় নেই। ৪ নং আসামী মিল্টনের স্ত্রী খাদিজা বেগম তার মানব পাচার কাজের সহযোগী।

০৩ নং আসামী মোঃ হিমেল পেশায় একজন ইজিবাইকচালক। খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানা এলাকায় তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা। ব্যক্তি জীবনে সে অবিবাহিত। ইজিবাইক চালানোর পাশাপাশি সে মানব পাচার চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। তার রাজনৈতিক কোন পরিচয় নেই।

০২ নং আসামী মোঃ সাইফুল ইসলাম পেশায় একজন রংমিস্ত্রি। চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানার লোকনাথপুর গ্রামে তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা। ব্যক্তি জীবনে সে বিবাহিত। ০৬ নং আসামী রাবেয়া বেগম তার স্ত্রী। তাদের রাজনৈতিক কোন পরিচয় নেই। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য।
০৫ নং আসামী রতœা আক্তার@পায়েল একজন গৃহিণী। তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা মহানগরীর খুলনা থানা এলাকায়। ব্যক্তি জীবনে সে অবিবাহিত। তার রাজনৈতিক কোন পরিচয় নেই।

পুলিশ জানায়, থানার রেকর্ডপত্র ও সিডিএমএস পর্যালোচনা করে দেখা যায় মানব পাচার চক্রের মূলহোতা গ্রেফতাকৃত আসামী মিল্টন মন্ডল(৪০) এর বিরুদ্ধে কেএমপি’র সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০(ক) ধারায় ০৩ টি মামলা রয়েছে।