কৃষি সেচে সৌরশক্তি দিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ

0
161

টাইমস ডেস্ক:
কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি জমিতে সৌরশক্তির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ওই লক্ষ্যে সৌরচালিত পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানিনিভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। ফলে প্রতিবছর অতিরিক্ত ১১ হাজার টন খাদ্যশস্য ও শাকসবজি উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছে। একই সঙ্গে উপকৃত হবে ৬ হাজার ৬০০ কৃষক পরিবার। বর্তমানে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ এবং ডিজেল ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেয়া হয়। তাতে একদিকে যেমন কৃষিপণ্য উৎপাদন খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কৃষি উৎপাদনে সেচ অন্যতম প্রধান নিয়ামক। বোরো মৌসুমে মূলত বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দেয়া হয়ে থাকে। অনেক সময় আমন মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেলে সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হয়। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বৃদ্ধিসহ বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে কৃষি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করার লক্ষ্যে সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারসহ সৌরশক্তিনির্ভর সেচ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে বিদ্যুতের সাশ্রয়সহ ফসলের চাষাবাদ লাভজনক করা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ের চলমান প্রকল্পটি ২০২৩ সালের মধ্যেই কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সৌরশক্তিনির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণসহ পকল্প এলাকায় আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন হবে। সৌরশক্তিনির্ভর সেচ প্রযুক্তির দিকে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে কৃষি মন্ত্রণালয়ও সৌরশক্তিনির্ভর সেচ কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসে। প্রকল্পের আওতায় ২০০টি সৌরশক্তি চালিত লো-লিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন করা হবে। নির্মাণ করা হবে ২০০ পাম্প হাউস। চলমান এই প্রকল্পে গত বছর এক কিউসেক (দৈনিক ১০ লাখ লিটার পানি উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন) ১৫টি এবং হাফ কিউসেক ৮টিসহ মোট ২৩টি সৌরপাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেচকৃত এলাকা ৩৫৬.৫ হেক্টর এবং নির্মাণকৃত বারিডপাম্প সেচনালা ৩৫.৫ কি.মি. রয়েছে। যা থেকে সরাসরি প্রায় দুই হাজার কৃষক পরিবার উপকার পাচ্ছে। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী দেশের ৩৪টি জেলার ১৪১ উপজেলায় এ সেচ সুবিধা দেয়া হবে। মূল কাজের মধ্যে রয়েছে ২শ’টি সোলার পাম্প, ৫০টি সৌরশক্তি চালিত ড্রাগওয়েল, ৫০টি ডিপ ইরিগেশন, ১৪০ কি.মি. বারিড পাইপ সেচনালা হবে। সরকার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০,০০০ সোলার পাম্প স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিএডিসি সৌরশক্তির সাহায্যে সেচপাম্প পরিচালনার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের ভিত্তিতে ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ‘ঢাকা বিভাগে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন কর্মসূচী’ নামে ১১টি সৌরশক্তি চালিত সেচ পাম্প (এলএলপি) স্থাপনের একটি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে। বর্তমানে বিএডিসি বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচীর মাধ্যমে ১৭৮টি সৌরপাম্প স্থাপন করেছে। তাছাড়া বিএডিসি আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে সারাদেশব্যাপী ১০০০টি সৌরশক্তি চালিত সেচপাম্প স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। বিএডিসি, ইডকল, বিএমডিএ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৪৫০টি সৌরপাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সৌরশক্তির মাধ্যমে সেচযন্ত্র পরিচালনা করা হলে শুষ্ক মৌসুমে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের বাড়তি চাহিদা অনেকাংশে দূর করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ হতে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। আর যখন মাঠে ফসল থাকবে না তখন এই সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে ধান মাড়াই, ধান ভাঙ্গানো, ব্যাটারি চার্জসহ গৃহস্থালী কাজেও ব্যবহার করা যাবে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেচে বিদ্যুৎ সাশ্রয়সহ ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ওপর চাপ কমবে। যা পরিবেশের ভারসাম্য উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া বিদ্যুতের অভাবে সেচ কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে এমন এলাকায়ও সেচ কার্যক্রম পরিচালিত করা যাবে।
এদিকে সৌরশক্তি নির্ভর কৃষি প্রযুক্তি সনাতন ধারণা বদলে দিচ্ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং, বাড়তি বিলের বোঝাসহ লো-ভোল্টেজের ভয়ে এখন কৃষকরা আর ভীত নয়। আর সেচ পাম্প চালাতেও ডিজেলের প্রয়োজন হচ্ছে না। সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজন মতো জমি ভেজাচ্ছে কৃষক। দেশের ফসলের মাঠে সৌর সেচ সফলতায় মাঠে মাঠে এখন দেখা যাচ্ছে আধুনিক এই সেচ প্রযুক্তির ব্যবহার। এমনকি বিদ্যুৎবিহীন চরাঞ্চলে সৌরশক্তির ব্যবহার কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বিএডিসি রংপুর বিভাগের চরাঞ্চলে মোবাইল সৌর প্যানেল ও পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে সেচ কাজ পরিচালনা করছে। তাছাড়া বিএডিসি ডাগওয়েলে প্যানেল আকারে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে কূপ থেকে পানি উত্তোলন করে ডিপ ইরিগেশন পদ্ধতিতে সবজি ও ফুলের চাষে যশোর ও শেরপুর জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিএডিসির তত্ত্বাবধায়ক পকৌশলী ও পকল্প পরিচালক মো. সারওয়ার হোসেন জানান, সৌরশক্তির ব্যবহার কৃষকদের মধ্যে একটা সাড়া ফেলেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিএডিসি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। করোনার ধাক্কায় কাজ থেমে নেই। তাতে কৃষক পরিবারগুলো সরাসরি উপকার পাচ্ছে এবং অতিরিক্ত ফসল আসবে। ফলে কৃষকদের অনেক সাশয় হবে।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান, শেখ হাসিনার সরকার কৃষিবান্ধব। কৃষকদের সুবিধার জন্য সারে ভর্তুকি দিচ্ছে। যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষক যাতে উপকৃত হয় সেজন ক্ষুদ্র সেচসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যারা ফসল ফলায়, দেশকে খাদ্য নিরাপত্তা দেয়, কৃষক দরদী শেখ হাসিনার সরকার তাদের জন্য সব সময় নিবেদিত।