কাউন্সিলর রাজীবের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরে বিক্ষোভ

0
280

খুলনাটাইমস: সন্ত্রাসবাদ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার মোহাম্মদপুর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক যুবলীগ নেতা তারেকুজ্জামান রাজীবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকার মানুষ। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, যারা মিছিল করেছে, তারা রাজীবের বিরোধী পক্ষের সমর্থক। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারের কিছু ব্যবসায়ীও এতে যোগ দিয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। বিক্ষোভ মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসে শেষ হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা রাজীবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া আম্বিয়া বেগম নামের এক নারী অভিযোগ করে বলেন, তাঁর ছেলে তসিরকে সাড়ে তিন বছর আগে হত্যা করেছিল রাজীবের লোকজন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে রাজীবের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
জানা গেছে, তসির মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যান ইউনিট আওয়ামী লীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর হত্যার বিচারের দাবিতে অনেকেই স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভ করতে আসা মাসুম নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, ‘কিছুদিন আগে আমাকে রাজীবের লোকজন কুপিয়েছিল। চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে আমাকে ওরা কুপিয়েছিল। আমরা এর বিচার চাই। এতদিন আমরা কোনো কথা বলতে পারিনি।’ ফারুক নামের স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, ‘রাজীবের বাবা ছিলেন রাজমিস্ত্রি। সেখান থেকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় কাউন্সিলর হয়ে এলাকায় রাজত্ব কায়েম করেন রাজীব। চাঁদাবাজি আর জমি দখল করে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।’
মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল হালিম বলেন, ‘কাঁচা বাজার পুরোটা তাঁর (রাজীব) নিয়ন্ত্রণে। প্রতি দোকান থেকে প্রতিদিন তাঁর লোকজনকে অন্তত ১৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। এর চেয়ে বেশিও দিতে হয় কারো কারো।’ এদিকে এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন ‘চাঁদাবাজের ফাঁসি চাই, রাজীবের শাস্তি চাই’, ‘রাজীবের চামড়া, তুলে নেব আমরা’। শনিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রোডের ৪০৪ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর বাসায় অভিযান চালানো হয়। কাউন্সিলর রাজীবের বাসায় অভিযান পরিচালিত হয় র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-২-এর সমন্বয়ে। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। র‌্যাব-২-এর অপারেশন কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জাহিদ আহসান বলেন, ‘রাজীবের বাসায় অভিযান চালিয়ে ব্যাংকে জমা দেওয়া একটি পাঁচ কোটি টাকার রসিদ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ এফডিআরের নথি পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, তাঁর স্ত্রীর নামেও কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে।’ এদিকে শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান শেষে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম সাংবাদিকদের বলেন, ‘চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসবাদসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসতে থাকে কাউন্সিলর রাজীবের বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন ধরে আমরা তাঁকে খুঁজছিলাম। কিন্তু সে আত্মগোপনে ছিল। শনিবার র‌্যাব জানতে পারে, রাজীব বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাঁর বন্ধুর বাসায় আত্মগোপন করে আছে। গ্রেপ্তারের সময় রাজীবের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলি, একটি ম্যাগজিন, সাত বোতল বিদেশি মদ ও ৩৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।’