করোনা তান্ডবে বিপর্যস্থ পৃথিবীতে বাংলাদেশের কপিলমুনি যেন এক ভিন্ন জনপদ

0
574

শেখ নাদীর শাহ্ :


নভেল করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে গোটা দেশ আজ স্তব্ধ। প্রতিনিয়ত নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমতাবস্থায় সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি ভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে না আসা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নির্দিষ্ট সময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দোকানপাট ছাড়া সকল প্রকার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা, অন্য এলাকা থেকে প্রবেশকারী ব্যক্তির হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ইত্যাদি। সরকারি সকল প্রকার নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করছে প্রশাসন ।

সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে পাইকগাছার কপিলমুনির চিত্র দেখাগেছে সম্পূর্ণ আলাদা। স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির অভাবে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বাজারে দেখা গেছে হাজারো মানুষের ঢল। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা সেনাবাহিনীর গাড়ি আসার খবরে মূহুর্তেই ফাঁকা হয়ে যায় বাজার। আবার সেনাবাহিনীর গাড়ি চলে যাওয়ার সাথে সাথে ফিরে আসে সেই আগের অবস্থা। করোনা তান্ডবে বিপর্যস্থ পৃথিবীতে বাংলাদেশের কপিলমুনি যেন এক ভিন্ন জনপদ। এখানে করোনায় মৃত্যু আতংক নয়, এক কথায় এখানকার সচেতনতা বন্দি হয়ে পড়েছে প্রশাসনের ভয়ের মধ্যেই।

করোনা সচেতনতায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানসহ ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকান-পাট বন্ধ থাকার কথা থাকলেও কার্যত অধিকাংশ দোকানীরাই খুলে বসেছে স্ব স্ব দোকান। তবে কোন কোন দোকানের দরজা অর্ধাংশ খুলে বেচা-বিক্রি চলছে। আবার অনেকে বাইরে থেকে দোকান বন্ধ রেখে ভেতরে লোক বসিয়ে রেখে দোকানের সামনে কাঁচা মালের পসরা সাজিয়ে বসেছে। কাংখিত খরিদ্দার আসলেই ভেতর থেকে মাল আনিয়ে বিক্রি করছেন।

সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে গতকাল সোমবার সকালে কপিলমুনি সদরের বণিক সমিতি সড়কের দিকে গেলে দেখা যায়,অধিকাংশ দোকানি বেশ তাড়া-হুড়ো করছে দোকান বন্ধের জন্য। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই ভেতর থেকে এক দোকানির তড়িৎ জবাব, যা লাগবে পরে আসেন, ম্যাজিস্ট্রেট আসছে। জরিমানাও দিতে হবে সেনা সদস্যদের মারও খেতে হবে। মূলত এটাই হল দক্ষিণ খুলনার অন্যতম প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনির প্রাত্যহিক চিত্র। এখানকার জনসাধারণ করোনাকে নয়,তাদের ভয় প্রশাসনের।

প্রসঙ্গত,কপিলমুনি সদরে অবস্থিত কপিলমুনি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি। ওসি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার পাশাপাশি ১ জন এস আই,২ জন এএসআই ও ১ জন এটিএসআই সহ পর্যাপ্ত কনস্টেবল রয়েছেন ফাঁড়িতে তারপরও এখানকার দোকান বন্ধ করতে প্রয়োজন হয় ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা সেনাবাহিনীর সদস্যদের। এলাকাবাসী জানায়, অধিকাংশ দোকানীদের সাথে কতিপয় পুলিশ সদস্যদের ভাল সম্পর্কের বুনিয়াদে তাদের দোকান সমূহ খুলে রাখতে সহায়তা করছে। বিশেষ করে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা জনৈক পুলিশ কর্মকর্তাকে একটি জুতার দোকানে বসে থাকতে দেখা যায়।

এছাড়া পুলিশের সামনে এক অজ্ঞাত কারণে বেশিরভাগ দোকানিদের তাদের দোকানের সামনে চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের নিকট প্রয়োজনের কথা জানালেই নামমাত্র বাইরে থেকে বন্ধ দোকানের ভেতর থেকে কর্মচারীরা শার্টারের নিচ দিয়ে তা পৌছে দিচ্ছেন। একাধিক মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকান খোলা রেখে যেভাবে জনসমাগম ঘটানো হচ্ছে তা দেখলে যে কারোরই মনে হবে তাদের কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা নেই।

এদিকে আর্থিক প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে সপ্তাহের দু’দিন চালু রাখা হচ্ছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা সমূহ। ব্যাংক সংশ্লিষ্ঠ যে কোন প্রয়োজনে দাঁড়াতে হচ্ছে কয়েক শতাধিক মানুষের লম্বা লাইনে। যেখানে কোন ভাবেই নিশ্চিত করা হয়নি সামাজিক দূরত্ব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা না থাকলেও রাজনৈতিক দলের নেতা ও ভি আই পি দের কোন প্রকার লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না মনিরুল নামের এক ব্যাংক সিকিউরিটি সদস্য ম্যানেজারের সাথে দেখা করানোর কথা বলে ভেতরে ঢুকিয়ে নিচ্ছেন তাদের। কেউ কোন প্রকার প্রতিবাদ করলে, তাদেরকে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হচ্ছে। এব্যাপারে কথা বলার জন্য সিকিউরিটি মনিরুলকে ডাকা হলে সংবাদকর্মী বুঝতে পেরে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

প্রয়োজনের কথা বিব্চেনা করেই ওষুধের দোকান সর্বক্ষনিক খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা যেন সচেতনতার ব্যাপারে আরো বেশি উদাসীন।

সবশেষে নজর এড়ায়নি কপিলমুনির নাছিরপুর সংলগ্ন নতুন মৎস্য আড়ৎ। শুরু থেকেই সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে এটি। যদিও সেব্যাপারে উদ্যোগ নেননি উপজেলা প্রশাসন। সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে সামনে থেকে শার্টার বন্ধ রেখে পেছনে জন সমাগম ঘটিয়ে বেচা কেনা চালু রেখেছিল আড়ৎ মালিকরা। কিন্তু তারাও সকলকে ম্যানেজ করে নামমাত্র বন্ধ না রেখে সবকিছু চালু করেছেন পূর্ণাঙ্গ ভাবে। প্রতিদিন কপিলমুনিতে বিভিন্ন জেলা সদরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকার হাজার হাজার মানুষের সমাহম ঘটে। তবে করোনা সচেতনতার জরুরী মূহুর্তেও সামগ্রিক কপিলমুনির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এযেন করোনা সাবধানতা নয় করোনা সংক্রমণের হাট বসেছে।