করোনায় আ. লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি: প্রধানমন্ত্রী

0
196

টাইমস ডেস্ক:
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের জন্য আত্মত্যাগ করলেও অন্য কোনো দল মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে শুধু সমালোচনা করছে। গতকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। সভায় দলের নেতাদেরও বিভিন্ন সাংগঠনিক নির্দেশনাও দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, সাংগঠনিক শক্তিটা হচ্ছে সবচেয়ে বড়। আওয়ামী লীগের এই তৃণমূল পর্যায়ের সাংগঠনিক শক্তি যে আছে, এই মহামারি মোকাবিলার সময় তারা যখন মাঠে নেমেছে, তখনই সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আজকে যে কারণে আমার প্রায় ৫২২ জন নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছে। এই যে এত বড় স্যাকরিফাইস (ত্যাগ) আর কোনো দল তো বোধহয় করেনি। তারা লিপ সার্ভিস দিয়েছে। সরকারের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে তো এখন ভালো ভালো মিডিয়া আছে। আমি তো প্রাইভেটে টেলিভিশন দিয়েছি, প্রাইভেটে রেডিও দিয়েছি, অনেক পত্রিকা। যে যার মতো আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে বলেই যাচ্ছে। তাদের কিন্তু মাঠে মানুষের পাশে দেখা যায়নি। তারা কেউ আবার বিচার করে আওয়ামী লীগের… কতটুকু করল আর কতটুকু করল না। কিন্তু তারা নিজের আয়না দিয়ে চেহারা দেখে না। ‘এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে শুধু আওয়ামী লীগই আছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। আওয়ামী লীগ জনগণের স্বার্থে কাজ করে। এই বাংলাদেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতির জন্যই জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই স্বাধীনতার সুফলটা যেন প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায়, আমরা যেন দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারি, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এ সঙ্কটকালে সাংগঠনিক কার্যক্রমও চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। মনে করি খুব বেশি যাতায়াত না করলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলো আমাদের একটু অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের হয়তো সম্মেলন হয়েছে, কিন্তু করোনার কারণে আর আমরা কমিটিও করতে পারিনি বা কারও খোঁজও নিতে পারিনি। আমার মনে হয় এখন ধীরে ধীরে আমরা এগুলো করতে পারব। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণের সংগঠন হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে। সেটা এবারও এই করোনা মহামারির সময়েও প্রমাণ হয়েছে। জনগণের আস্থা, বিশ্বাসটা হচ্ছে আমাদের একমাত্র সম্বল। সেটাই আমাদের শক্তি।’ আওয়ামী লীগের কাজের বিপরীতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ‘অগ্নিসন্ত্রাসের’ কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের ওই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ আমরা দেখেছি। সেগুলো আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। সবাইকে আমরা সহযোগিতা করেছি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত আমরা এখনও তাদের খোঁজ নিচ্ছি। যেখানে যতটুকু পারি, তাদের সাহায্য আমরা করে যাচ্ছি। করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে মাস্ক কা-, রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারিসহ নানা বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজের সমালোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে বা অধিদপ্তর নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু একটা কথা তো এটা স্বীকার করতে হবে যে যখন যেটা নির্দেশ দিয়েছি, আমি বলেছি এটা ইমোর্জেন্সি আগে করতে হবে, জিনিস কিনতে হবে, মানুষের চিকিৎসা দিতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে। তারা কিন্তু সেইভাবেই কাজ করেছে। তারা কাজ করেছে বলেই কিন্তু আমরা এই করোনাটাকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। মহামারীর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করে যাওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই সময় ভার্চুয়ালি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার ঘোষণার দেওয়ার পর তা নিয়ে ব্যাঙ্গোক্তি সহ্য করতে হয়েছিল। কত রকমের কথা আমাদের শুনতে হয়েছে। কিন্তু আজকে তো দেখা গেল সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই আমরা কিন্তু দেশটাকে সচল রাখতে পেরেছি, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগটা আমরা রাখতে পেরেছি। মহামারি থেকে অর্থনীতিকে উদ্ধারে সরকারি প্রচেষ্টা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি যে বাংলাদেশে আমাদের কোনমতে যেন অর্থনীতিটা থেমে না যায়। ৫ লক্ষ কোটি টাকার উপর বাজেট দেওয়া কিন্তু একটা কঠিন কাজ ছিল। তবুও আমরা সেটা করেছি এইজন্য যে আমরা বলেছি আমরা খরচ করব সীমিত আকারে। যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু। কিন্তু আমরা বাজেটটা ঠিক রেখেছি যেন আমাদের অর্থনীতিটা গতিশীল থাকে। মহামারীতে নানা প্রণোদনা দেওয়ার পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। মহামারীর শুরু থেকেই খাদ্য উৎপাদন ঠিক রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারণ এই মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী একটা অর্থনৈতিক মন্দা আসবে। আর মন্দার সাথে সাথে কিন্তু দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে যেন খাদ্যাভাব দেখা না দেয়। সেইজন্য কৃষক যেন মাঠে থাকে। ফসল যেন উৎপাদন হয়। উৎপাদিত ফসলটা আমাদের কাছে থাকলে অন্তত খাবারের অভাবটা যেন না হয়। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ হারানো প্রবাসী কর্মীদের বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণার কথাও জানান তিনি।