ইনজুরি ও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড

0
319

খুলনাটাইমস স্পোর্টস : ইনজুরি ও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে নামছে ইংল্যান্ড। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন ইংল্যান্ড দলে বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই। সুখবর হলো, টেস্টের আগে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তারা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে কোন ইনজুরি বা অন্য কোন সমস্যা নেই। তাই প্রথম টেস্টের মত দ্বিতীয় ম্যাচও জিততে চায় প্রোটিয়ারা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতেও সিরিজে সমতা আনতে মরিয়া ইংল্যান্ড। কেপটাউনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটি শুরু হবে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে। প্রথম টেস্টের পরই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয় ইংল্যান্ড শিবির। একে একে এগার জন খেলোয়াড় হয়ে পড়ে অসুস্থ। ফলে দ্বিতীয় টেস্টের আগে মাত্র একদিন পুরো দল নিয়ে অনুশীলন করতে পারে ইংল্যান্ড। ঐ অনুশীলন সেশনটিও খুব বেশি সিরিয়াস ছিলো না। অনুশীলন নিয়ে দলের খেলোয়াড়দের স্বাধীনতা দিয়েছিলো ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট। তারপরও যতটা সম্ভব নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়। এ ব্যাপারে ইংল্যান্ডের কোচ ক্রিস সিলভারউড। তিনি বলেন, ‘সবাই ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছিলো। তাই দ্বিতীয় টেস্ট নিয়ে চিন্তায় ছিলাম আমরা। তবে এখন সকলেই সুস্থ। আশা করি ম্যাচে কোন সমস্যা হবে না।’ ইংল্যান্ডের এখন বড় চিন্তা পেসার জোফরা আর্চারকে নিয়ে। কনুইর ইনজুরির কারনে দ্বিতীয় টেস্টে অনিশ্চিত তিনি। গতকাল দলের ঐচ্ছিক অনুশীলনে মাত্র ছয় বল ডেলিভার করতে পারেন তিনি। এরপর ব্যাথার কারনে মাঠ ছাড়েন আর্চার। তবে আর্চারকে খেলানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে দলের ফিজিওরা। সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্টে ১০৭ রানে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে লড়াইয়ের চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। একেবারেই হাল ছেড়ে দেয়নি। তারপরও একদিন আগেই হারের স্বাদ নিতে হয় ইংলিশদের। প্রথমে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ২৮৪ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে প্রতিপক্ষের বোলারদের তোপে ১৮১ রানেই অলআউট হয় ইংল্যান্ড। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ১০৩ রানের লিড পায় প্রোটিয়ারা। এই লিডের সাথে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডকে ৩৭৬ রানের বড় টার্গেট দেয় প্রোটিয়ারা। টার্গেট পেয়ে ব্যাট হাতে জবাবটা ভালো দিচ্ছিলো ইংল্যান্ড। তৃতীয় দিন শেষে ১ উইকেটে ১২১ রান তুলেও ফেলে ইংলিশরা। কিন্তু চতুর্থ দিন চা-বিরতির আগে ২৬৮ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ফলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে প্রথম জয়ের স্বাদ নিতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ শুরু করেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় প্রোটিয়ারা। ঐ সিরিজ হারের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে জয়ের স্বাদ নেয় প্রোটিয়ারা। গেল বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চরম ব্যর্থতায় বোর্ড প্রধানের বরাখাস্তের জন্য ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা ও সেদেশের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মধ্যকার দীর্ঘকালীন বিরোধের অবসান ঘটে। প্রধান নির্বাহিও থাবাং মোরে পদত্যাগ করেন। এরপর অন্তর্র্বতীকালিন ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পান সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। আর জাতীয় দলের প্রধান কোচ হন সাবেক উইকেটরক্ষক মার্ক বাউচার। দায়িত্ব নিয়েই দলের কোচিং স্টাফদের পদে ব্যাপক রদবদল করেন বাউচার। জাতীয় দলের এক সময়কার সেরা ব্যাটসম্যান জক ক্যালিসকে ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। এতে দক্ষিণ আফ্রিকার শিবিরে আত্মবিশ্বাসী মনোভাব চলে আসে। নতুন রুপে ফিরেই জয়ের স্বাদ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের অধিনায়ক ফাফ ডু-প্লেসিস বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে নতুন অধ্যায় শুরু হলো। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আমরা আবারো টেস্ট দল হিসেবে উন্নতি করছি। আমরা আবারো ভালো পারফরমেন্স করতে চাই এবং এটা মাত্র শুরু। এটিই দক্ষিণ আফ্রিকার পরিকল্পনা। আমরা একটি লড়াকু দল। সিরিজের শুরুটা ভালো হয়েছে। এই ধারাটা অব্যাহত রাখতে চাই। সিরিজে ডাবল লিড লক্ষ্য আমাদের।’ প্রথম টেস্টে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হারলেও, ঘুড়ে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জোর রুট, ‘প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে আমরা পুরোপুরি ব্যর্থ হই। এজন্য ম্যাচটিও হারতে হয়েছে আমাদের। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা লড়াই করার চেষ্টা করেছি। দ্বিতীয় টেস্টের জন্য আমাদের প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। ভালোভাবেই সিরিজে ফিরে আসবো আমরা। সিরিজে সমতা আনতে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছি না আমরা।’ চার বছর আগে এই কেপটাউনে সর্বশেষ খেলেছিলো ইংল্যান্ড। ঐ ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুড়ি ফুটিয়েছেন দলের দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস ও উইকেটরক্ষক জনি বেয়ারস্টো। ষষ্ঠ উইকেটে ৩৯৯ রান যোগ করেন তারা। টেস্ট ক্রিকেটে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ বিশ্বরেকর্ড এটি। ৩০টি চার ও ১১টি ছক্কায় ১৯৮ বলে ২৫৮ রান করেন স্টোকস। ১৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৯১ বলে অপরাজিত ১৫০ রান করেন বেয়ারস্টো। ফলে ৬ উইকেটে ৬২৯ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। জবাবে ঐ ম্যাচের অধিনায়ক হাসিম আমলার ২০১ ও তেম্বা বাভুমার অপরাজিত ১০২ রানে ৭ উইকেটে ৬২৭ রানে ইনিংস ঘোষনা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৫৯ রান করলে ম্যাচটি ড্র’তে শেষ হয়। তাই ঐ ম্যাচের স্মৃতি থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে পারে ইংল্যান্ড।