আসছে শীতে পথশিশুদের পাশে দাঁড়াই

0
360

বাংলাদেশ এখন একটি আজব ঋতুর দেশে পরিণত হয়েছে। শীতের প্রভাব একেক এলাকাতে একেক সময় একেক রকম রূপে আসে। শীতের সবচেয়ে বেশি শিকার বঞ্চিত পথশিশুরা এবং হতদরিদ্র মানুষগুলো। তাদের একটি শীতের কাপড় কেনার সার্মথ্য নেই। প্রচ- শীতের প্রভাতে কাঁপতে কাঁপতে ময়লা কুড়াতে বের হয় পথশিশুরা এবং ছিন্নমূল লোকজন থেকে শুরু করে হতদরিদ্র শ্রমজীবী লোকগুলো বের হয় জীবিকার সন্ধানে। শীতের কাঁপনে আজ তারা কাবু হয়ে যাচ্ছে। সারা দেশ তথা পুরো সমাজ থেকে আজ যেন বিবেক, মূল্যবোধ, নীতি, মনুষ্যত্ব, মানবতা বিদায় নিতে চলেছে। আজ যেন মানুষের মনুষ্যত্বের এমন মৃত্যু হচ্ছে যা শারীরিক মৃত্যুর চেয়ে কঠিন। অপরাজেয়-বাংলা সূত্র মতে, শুধু রাজধানীতে থাকা পথশিশুদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ শিশু শীতের রাতে উত্তাপের জন্য কুকুরের ওপর নির্ভরশীল। আবার অনেকে ময়লা-আর্বজনা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিক শিট জড়িয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। ওই প্লাষ্টিক শিটগুলোর জায়গায় জায়গায় ফুটো দিয়ে এত ঠা-া বাতাস আসে যে ওটা গায়ে দেয়া না দেয়া একই কথা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, দেশরতœ শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের আমলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য দিক দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও পথশিশু, শিশুশ্রম রোধে আমরা এগিয়ে যেতে পারিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, মহিলা ও শিশু এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিচ্ছি একটি শিশুও আবাসন ছাড়া থাকবে না। শিশুরা মানবেতর জীবনযাপন করবে না। ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে এই শিশুদেরও খাওয়াতে পারব। বাংলাদেশ সরকার ইউনিসেফসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন আপসহীন কাজ করছেন। প্রশ্ন হলো- তাহলে পথশিশু, শিশুশ্রম কেন রোধ করা যাচ্ছে না, কেন এই শীতে শিশুরা বস্ত্রহীন? আমি মনে করি পথশিশু রোধে সরকারকে হয়তো সঠিক পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে না। নইলে এখানে দুর্নীতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্মথ্যবানদের বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে বললে তেমন সাড়া মেলেনি। সরকারের দিকে তাকিয়ে আমরা কেন থাকব আমাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই, আমরা ১৬ কোটি ১০ লাখ মানুষ কি পারি না বঞ্চিত শিশুদের দুবেলা দুমুঠো ভাত দিতে, একটি গরম কাপড় দিতে? বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করতে। অবশ্যই পারব, শুধু আন্তরিকতা আর আমাদের ভালোবাসা থাকলেই সম্ভব। এজন্য আমাদের মনের আদালতই যথেষ্ট। আর যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে এরা একদিন ক্ষুধার্ত, শীত, ঝড়-বৃষ্টি, রোদ, আগুনের তাপে মানুষ না হয়ে হবে ইস্পাত। সেদিন এরা আমাদের গলায় ছুরি ধরবে, চাঁদা, খুন-খারাবি ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত হবে। এইজন্য দায়ী সেইদিন কে বা কারা হবে? অবশ্যই আমরা। দেশটা আজ যেন রাজনীতির রাজ্য হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপসহীন কাজ করলেও তার দলের বা অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের মুখে পথশিশু ও শিশুশ্রম রোধে কোনো কথা শোনা কষ্টকর। সর্বদলের নেতাদের সহযোগিতা, আন্তরিকতা, ভালোবাসা পেলে হয়তো এই দেশ থেকে পথশিশু ও শিশুশ্রম রোধ করা অনেক সহজ হতো। আমি ব্যক্তিগত জীবনে একজন শিশু শ্রমিক, আমি খুব সহজেই বুঝতে পারি শীতের কাপড় না থাকলে কতটা কষ্ট হয়। তাই বলি আসুন একটি নতুন বা পুরাতন গরম কাপড় দিয়ে পথশিশুদের মুখে হাসি ফুটাই। আপনার না থাকলে আপনার সচ্ছল বন্ধুকে অনুরোধ করুন পথশিশুদের পাশে দাঁড়াতে। বিশেষ করে সমাজের সচ্ছল ব্যক্তি যারা, তারা ইচ্ছে করলেই এই নিষ্পাপ ফুলগুলোকে প্রতিকুল পরিবেশ থেকে রক্ষা করতে পারেন।