আমদানিকৃত মানহীন চিকিৎসা সামগ্রীতে প্রতারিত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ

0
453

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে মিথ্যা ঘোষণায় বিদেশ থেকে মানহীন চিকিৎসা সামগ্রী আমদানি করছে। আর ওসব সামগ্রী কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানহীন ওসব সামগ্রী দেশের বিভিন্ন ওষুধের দোকান, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর নি¤œমানের ওসব চিকিৎসাসামগ্রী ব্যবহার করে রোগ নিরাময় হওয়া বদলে বরং আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এমনকি তাতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর গত অর্থবছরে মানহীন চিকিৎসাসামগ্রীর ১১টি চালান আটক করেছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মানহীন চিকিৎসাসামগ্রী তাইওয়ান, চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, জার্মানি থেকে বেশি আমদানি করা হয়েছে। ব্যবসায়ী পরিচয়ে একাধিক ব্যক্তি আন্তর্জাতিক চক্রের সহযোগিতায় ওসব মানহীন চিকিৎসাসামগ্রী আমদানি করে দেশব্যাপী বিক্রি করা হচ্ছে। সেজন্য দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে অসাধু আমদানিকারকদের ডিলার বা এজেন্ট রয়েছে। ওই এজেন্ট বা ডিলাররা বিভিন্ন ওষুধের দোকান, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে মানহীন চিকিৎসাসামগ্রী কৌশলে বিক্রি করে থাকে। তবে তারা প্রকৃত মালিকের খোঁজ জানে না। ওই ডিলার বা এজেন্টদের কাছে সময়মতো কুরিয়ার বা অন্য কোনো পরিবহনে পণ্য পৌঁছে যায়। আর তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে থাকে।
সূত্র জানায়, ওষুধের দোকান, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেশির ভাগ সময় না জেনেই মানহীন সামগ্রী কিনে মজুদ করে রাখে। পরে সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী তা বিক্রি করা হয়। তবে অনেক সময় ওসব প্রতিষ্ঠানের অসাধু ব্যক্তিরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে জেনেশুনেও মানহীন পণ্য কিনে থাকে। বাজারে বিক্রি হওয়া একই জাতীয় সামগ্রীর তুলনায় মানহীন ওসব সামগ্রী কম দামে বিক্রি করা হয়। তার মধ্যে চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আছে। ‘জরুরি রপ্তানি কাজে নিয়োজিত’ বা ‘জীবন রক্ষাকারী ওষুধ’ নামে ওসব পণ্যের চালান আনা হয়। আর চালানের মোড়কে এসব লেখা থাকায় পণ্য ছাড়করণে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। তবে সাদা পোশাকে নিয়োজিত শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারিতে মানহীন ওসব চালানের বেশির ভাগ চালান আটক করা হয়েছে। কিন্তু ওসব সামগ্রী কারা এনেছে তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। অবশ্য মানহীন চিকিৎসাসামগ্রীর আমদানিকারক হিসেবে ব্যবসায়ী নামধারী একাধিক ব্যক্তিকে নজরে রাখা হয়েছে। সন্দেহের তালিকায় আছে একাধিক প্রতিষ্ঠানও।
এদিকে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা) ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী জানান, নি¤œমানের যে কোনো চিকিৎসাসামগ্রীই জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। কারণ নি¤œমানের উপকরণে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। আর এসব উপকরণের মাধ্যমে কোনো ভুল হয়ে গেলে চিকিৎসায়ও ভুল হবে, যার পরিণতিতে রোগীর বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম জানান, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা মানহীন চিকিৎসাসামগ্রীর একাধিক চালান আটক করা হয়েছে। গুণগত মানের পণ্যের মোড়কে মানহীন চিকিৎসাসামগ্রী রেখে বিক্রি করা হয়। এতে সাধারণ মানুষের পক্ষে পণ্যের মান সম্পর্কে বোঝার উপায় থাকে না। সেক্ষেত্রে শুল্ক গোয়েন্দারা নজরদারি বাড়িয়েছে। অসুস্থ মানুষের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। কে বা কারা আমদানি করছে তা খুঁজে বের করতে শুল্ক গোয়েন্দারা কাজ করছে। সন্দেহের তালিকায় কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আছে। শুল্ক গোয়েন্দারা প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছেন। তবে অনলাইনে ব্যবসা চিহ্নিতকরণ নম্বর (বিআইএন) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলে আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশাবাদী।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন জানান, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি বন্ধ করার লক্ষ্যে এনবিআর নজরদারি বাড়িয়েছে। এনবিআর নজরদারি করছে বলেই বিভিন্ন পণ্য ধরা পড়ছে। সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর কোনো পণ্য আমদানি করতে দেয়া হবে না। বিশেষভাবে চিকিৎসাকাজে ব্যবহৃত নি¤œমানের পণ্য আমদানিতে এনবিআর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।