আত্মীয়-স্বজনের ৬ অধিকার

0
242

খুলনাটাইমস ধর্মপাতা: মো. আবদুল মজিদ মোল্লা: আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রিজিক (জীবিকা) প্রশস্ত হওয়ার এবং আয়ু বৃদ্ধির প্রত্যাশা করে সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ন রাখে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৬)
আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, ‘এখানে জীবিকা ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির অর্থ হলো বরকত লাভ করা। ভালো কাজের সুযোগ হওয়া। সময় যথাযথ কাজে লাগানো এবং অপচয় ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া।’ (জাওয়াহিরুল হারিরিয়্যা : ২/৩৫২)

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার বিধান
ইসলামী শরিয়তে প্রত্যেকের সাধ্যানুযায়ী আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ওয়াজিব। তবে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে অধিক নিকটতম আত্মীয়রা অগ্রাধিকার পাবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা সেই সম্পর্ক রক্ষা করে, যা রক্ষার নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৮)

আত্মীয়তার অধিকার
আল্লাহ মানুষের ভেতর যে পারস্পরিক সম্পর্ক দান করেছেন তার রক্ষা ও আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনেই ইরশাদ হয়েছে, ‘আর নিকটাত্মীয়ের অধিকার রক্ষা করো।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬)
আত্মীয় হিসেবে পরস্পরের ও যেসব অধিকার আছে তার কয়েকটি হলোÑ

১. যোগাযাগ রক্ষা করা : আত্মীয়রা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে। এমনকি কেউ বিচ্ছিন্ন থাকলেও তার সঙ্গে অন্যরা যোগাযোগ রক্ষা করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘… প্রকৃত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই যে ব্যক্তি তার আত্মীয় তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও সে তা রক্ষা করে চলে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯১)

২. ভালো আচরণ করা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মা-বাবার সঙ্গে উত্তম আচরণ করো, আর উত্তম আচরণ করো নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)

৩. অভাবগ্রস্ত হলে সহযোগিতা করা : অভাবগ্রস্ত আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতার তাগিদ দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মিসকিনকে দান করলে শুধু দানের সওয়াব আর আত্মীয়কে সহযোগিতা করলে দুটি সওয়াবÑদান ও আত্মীয়তা রক্ষা।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৫৮২)

৪. মেহমানদারি করা : মেহমানদারি সাধারণ মুসলমানের অধিকার। আত্মীয় হলে তা আরো দৃঢ় হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন মেহমানকে সম্মান করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৮)

৫. অসুস্থ হলে সেবা করা : আত্মীয়স্বজন অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া এবং খোঁজখবর নেওয়া আবশ্যক। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে আহার করাও, রোগীর শুশ্রূষা করো এবং বন্দিদের মুক্ত করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৭৩)

৬. দ্বিনের ব্যাপারে সতর্ক করা : আত্মীয়রা পরস্পরের জাগতিক কল্যাণ কামনার মতো পরকালীন কল্যাণের ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক করবেন। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদেরকে এবং পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো জাহান্নামের আগুন থেকে, যার জ¦ালানি হবে মানুষ ও পাথর।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

সামাজিক অধিকারে আত্মীয়রা এগিয়ে
মুসলিম হিসেবে অন্যান্যের যেসব অধিকার রয়েছে আত্মীয়রা তাতে অগ্রাধিকার লাভ করবে। শায়খ আবদুর রহমান বিন আয়িদ এমন ১৪টি অধিকার বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে আছেÑসালাম আদান-প্রদান, স্নেহ ও সম্মান করা, আনন্দ-বেদনার অংশীদার হওয়া, দাওয়াত কবুল করা, জানাজায় অংশ নেওয়া, পরস্পর হিতাকাক্সক্ষী হওয়া, বিবাদ হলে মিটিয়ে দেওয়া, অনুপস্থিতিতে দোয়া করা ইত্যাদি। (যঃঃঢ়://িি.িংধধরফ.হবঃ/ৎধংধবষ/২৫২.যঃস)

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।