আজিজ সুশিল পল্লী’তে বন্দোবস্ত ছড়াই ৩৪পরিবারে মানবেতর জীবন যাপন

0
428

 পানির জন্য পাড়ি দিতে হয় ২ কিলোমিটার পথ

এম আর জামান টিপু, তালা:
বাপ-দাদার ভিটা বাড়ী ছেড়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিজ সুশিল পল্লীতে কোন প্রকার বন্দোবস্ত ছড়াই মানবেতর জীবন যাপন করছেন ৩৪টি পরিবার। কপোতাক্ষ নদী এবং নদী তীরের ২০ লাখ মানুষের কথা ভেবে ছেড়ে দিয়েছেন নিজেদের বসতবাড়ি। নদী তীরের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে এ চিন্তা চেতনা থেকেই মহাৎ মানুষগুলো নিজেদের বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে দিয়েছেন টিআরএম প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য।এখন এই মানুষগুলির খবর রাখেন না কেউ। জালালপুর এলাকায় কপোতাক্ষ নদীর চরভরাটি খাস জায়গায় কোন প্রকার বন্দোবস্ত ছড়াই ৩৪টি পরিবারে বসবাস। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে কপোতাক্ষ নদী পাড়ে ছিলো পরিবারগুলির বসবাস।নদী খননে টিআরএম প্রযুক্তি বাস্তবায়নে সংযোগ খালে চলে গেছে তাদের ভিটামাটি। এখন তারা পাশের গ্রাম জালালপুরের একটি সরকারি জমিতে বসবাস করেন। সে জমিতেও তাদের কোনপ্রকার বন্দবস্ত দেওয়া হয়নি। ৩৪ পরিবারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এ স্থানটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিজ সুশিল পল্লী’। তালা-কলারোয়ার সাংসদ অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং বেসরকারি সংস্থা ‘উত্তরণ’ এখানে প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি করে ছোট ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। সে ঘরে ৩ থেকে ৭ সদস্য বিশিষ্ঠ পরিবারগুলো অতি কষ্টে বসবাস করেন। ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিজ সুশিল পল্লী’তে এ একটি মাত্র ঘর ছাড়া এ পরিবারগুলির আর কিছু নেই। এখানে না আছে বিদ্যুৎ, না আছে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, না আছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা। সুপেয় পানির জন্য তো এখানকার বাসিন্দাদের পাড়ি দিতে হয় দুই কিলোমিটার পথ। সেখানে নতুন বাজার নামক স্থান থেকে তারা প্রতি লিটার ১ টাকা দরে পানি কিনে আনেন। আজিজ সুশিল পল্লী’র গৃহবধু আসমা বেগম, ময়না বেগম, সেলিনা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, এখানে খুব কষ্ট করে বসবাস করছি। আমাদের এখানে বিদুৎ নেই, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নেই, পানি নেই। গোসল করতে আমরা আধা কিলোমিটার দূরে অন্যের পুকুরে যায়। যাদের পুকুরে গোসল করতে যায় তারা আমাদের আড় চোখে দেখে। গৃহবধু আসমা বেগম আরো বলেন, আমাদের এখানে খাওয়ার পানির হাহাকার। দুই কিলোমিটারের বেশী পথ পাড়ি দিয়ে পাশের গ্রাম শ্রীমন্তকাটী নতুন বাজার থেকে ১ টাকা প্রতি লিটার দরে পানি কিনে নিয়ে আসি। আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগও কম। তারা স্কুলে গেলে সবাই ‘গুচ্ছগ্রামের লোক’ বলে ভিন্ন চোখে দেখে। আরেক গৃহবধু নার্গিস বেগম বলেন, আমাদের টয়লেট নির্মাণের জন্য ৩টি করে রিং এবং একটি করে স্লাব দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু টয়লেটের চারপাশ এবং উপরে চাল দেওয়ার জন্য কিছু দেওয়া হয়নি। তারপরও আমরা কোনরকমে টয়লেট নির্মাণ করলেও একটু বর্ষা হলেই তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। আমরা বড় বাড়ি, গাড়ি চাইনা। আমাদের বেঁচে থাকার মতো সুযোগ-সুবিধা দিলেই আমরা খুশি। এ ব্যাপারে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ^াস বলেন, আজিজ-সুশিল পল্লীটি কপোতাক্ষ নদীর ভরাট হওয়া একটি জায়াগায় গড়ে উঠেছে। নদীর জায়গাতো বন্দোবস্ত দেওয়া যায়না। বন্দোবস্ত দিতে হলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু নদীর জায়গার শ্রেণি পরিবর্তনের কোন নিয়ম নেই। তাদের এ দুর্ভোগের ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরিন বলেন, যখন আজিজ-সুশিল পল্লী গড়ে তোলা হয়েছিলো তখন তাদের জন্য স্যানিটেশন এবং গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে হয়তো সেগুলি নষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কেউ আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেনি। তবে আমরা শীঘ্রই ওখানে পরিদর্শনে যাবো এবং তাদের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করবো।