আকষ্মিক বৃষ্টিতে ঝরছে আম্রমুকুল, স্বপ্ন ভঙ্গের শংকায় চাষিরা

0
367

শেখ নাদীর শাহ্ ॥
এইতো মাত্র ক’দিন আগেও আম্রমুকুলে ছেঁয়ে ছিল গাছের প্রত্যেকটি ডালপালা। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আর মুকুলের চিরচেনা সেই মৌ মৌ ঘ্রাণ মুগ্ধ করছিল সকলকেই। আম চাষিরাও স্বপ্ন দেখছিলেন ভাল ফলনের। কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ায় ঝরে গেছে সদ্য ফোটা আমের মুকুল। সেই সাথে খানিকটা হলেও স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে আম চাষিদের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় চলতি সপ্তাহের বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ায় ফিকে হতে চলেছে খুলনার পাইকগাছার আম চাষিদের লালিত স্বপ্ন।
এরকম বৈরি আবহাওয়া আরও দু’একদিন চলতে থাকলে ফুটে থাকা আমের প্রায় সব মুকুলই ঝরে পড়ার আশংকা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। পাইকগাছা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা এ এইচ এম জাহাঙ্গীর অলম জানান,উপজেলায় মোট ৫৮৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। য়ার প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ গাছে মুকুল চলে এসেছিল। আমের মুকুল গুটিতে পরিণত হলে বৃষ্টি তেমন ক্ষতি করতো না,যেমনটা এখন হচ্ছে। তাছাড়া চলতে থাকা বৈরি আবহাওয়া আমের মুকুলের পাশাপাশি বোরো ধান থেকে শুরু করে পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, গম, ভুট্টা, সজিনা,পানের বরজসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
গত ২ মার্চ সকাল থেকে খুলনা জেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া। যা গতকাল (৭মার্চ) পর্যন্ত একই অবস্থাতে ছিল। তাছাড়া বৃষ্টির সঙ্গে কোথাও কোথাও শিলাসহ বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটেছে। এর ফলে আমের মুকুলের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদরা বলছেন,বৃষ্টিতে জনজীবনে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন না ঘটলেও ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে।
খুলনা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে খুলনা জেলায় মোট ১ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছিল এবং উৎপাদন হয়েছিল ৩০ হাজার ৮৮৪ টন আম। চলতি অর্থ বছরে আরও ১০ শতাংশ বেশি উৎপাদনের আশা করছেন তারা।
এ ব্যাপারে সরেজমিনে কথা হয়, উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক আম চাষিদের সাথে। কপিলমুনি এলাকার এনামুল গাজী জানান,বিভিন্ন জাতের সব মিলিয়ে তার প্রায় শতাধিক আম গাছ আছে। এবছর গাছ গুলোতে ব্যাপক মুকুল ধরেছিল। অন্যান্যদের মত ভালো ফলন পাওয়ার আশাও করছিলেন তিনি। কিন্তু আকষ্মিক বৃষ্টিরসাথে দমকা হাওয়ায় গাছের প্রায় অধিকাংশ মুকুল ঝরে পড়েছে। এখন সব মিলিয়ে ত্রিশ শতাংশ আমের মুকুল থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। যার ফলে মৌসুমের শুরুতেই মন খারাপ হয়ে গেছে তার।
উপজেলার পুরষ্কার প্রাপ্ত আমচাষি অখিলবন্ধু ঘোষ জানান,উপজেলা কৃষি বিভাগের দিকনির্দেশনায় চলতি মৌসুমে ভাল ফলন পাওয়ার আশা করছিলেন তিনি কিন্তু আকষ্মিক বৃষ্টিরসাথে দমকা হাওয়ায় গাছের প্রায় অধিকাংশ মুকুল ঝরে পড়ায় আশানরূপ ফলন না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আর তাই খুলনা কৃষি অফিসের চলতি অর্থ বছরে কিছুটা উৎপাদন বৃদ্ধির আশা থাকলেও চাষিরা বলছেন ভিন্নকথা। মৌসুমের শুরুতেই আকস্মিক বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ায় গাছের প্রায় বেশিরভাগ মুকুল ঝরে পড়ায় স্বাভাবিক উৎপাদনে ছন্দপতন ঘটার আশংকা করছেন তারা। সর্বশেষ আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় লক্ষমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।