অস্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

0
183

টাইমস ডেস্ক:
জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে শিগগিরই মানুষের দুর্ভোগ কমার কোনও লক্ষণ নেই। বৃষ্টির অজুহাতে গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহেও সব সবজির দাম বেড়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজারগুলোয় অভিযান চালানোর পরও এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। একইভাবে আলুর দাম নির্ধারণ করলেও তা কিনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। খাদ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সরু ও মাঝারি চালের দাম নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা বাজারে চালের দাম কমেনি। এখনও প্রতি কেজি ভালো মানের মোটা চাল ৪৮-৫০ টাকা, মাঝারি চাল ৫২-৫৪ টাকা এবং সরু চাল ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ী রাহাত আলী বলেন, পাইকারিতে তারা প্রতিকেজি আলু কিনেছেন ৪০-৪২ টাকা। অন্যান্য খরচ যোগ করে এক কেজি আলু ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। একইভাবে বেশি দামে চাল ও পেঁয়াজ কেনার কারণে তারা বেশি দামেই এই দু’টি পণ্য বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার স্বাভাবিক হতে আরও অন্তত মাস খানেক সময় লাগবে। বাজারের এই পরিস্থিতির জন্য তদারকি না থাকাকে দায়ী করেছেন তারা। এছাড়াও বৃষ্টি, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে জিনিপত্রের দাম বাড়তি। এ প্রসঙ্গে মানিকনগর এলাকার ব্যবসায়ী আজমত উল্লাহ বলেন, তদারকি ব্যবস্থা যদি ঠিক থাকতো তাহলে সরবরাহ বাড়তো। এখন সরবাহ কম, এ কারণে দাম বেশি। তবে বর্ষা, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে জিনিসপত্রের দাম চড়া। বিশেষ করে লাগামহীনভাবে চলছে রাজধানীর কাঁচাবাজার। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজি এখন ১০০ টাকার ওপরে বা কাছাকাছি। নতুন করে দাম বেড়েছে ডিম, আলু ও কাঁচা মরিচের। সরকার ৩০ টাকা আলুর দাম বেঁধে দিলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। হাতিরঝিল বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। দাম বেড়ে ডিমের ডজন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা পোয়া। ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না এমন সবজির মধ্যে রয়েছে, শিম, পাকা টমেটো, গাজর, বেগুন, বরবটি ও উচ্ছে। পাকা টমেটো ১২০-১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শসাও কিনতে লাগছে ১০০ টাকা। শিমের কেজি ১২০-১৪০ টাকা। উচ্ছে ১০০ টাকা কেজি, বরবটির কেজি ১২০ টাকা, বেগুন ১১০ টাকা। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ঝিঙা, কাঁকরোল, ধুন্দল, কচুর লতি। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। আমদানি করা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা। পটলের কেজি ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০ টাকা। ঝিঙা, কাঁকরোল, ধুন্দলের কেজি বিক্রি ৭০ টাকা। বাজারে নতুন আসা ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। এক হালি কাঁচাকলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, মুলা ও পেঁপের কেজি ৫০ টাকা। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, তার আয় মাসে ৩৫ হাজার টাকা। বাসায় মাত্র তিন জন সদস্য। গত দুই-তিন মাস ধরে তিনি ধার করে সংসার চালাচ্ছেন। তার আয় থেকে বাসা ভাড়া দেওয়ার পর যা থাকছে, তা দিয়ে শুধু সবজিও কিনেও মাস পার করতে পারছেন না। ৫০ টাকার নিচে কোনও সবজি নেই, এমন পরিস্থিতি এর আগে কখনও হয়নি। তিনি ইদানীং সবজি না কিনে ব্রয়লার মুরগি কেনেন। কারণ ২০০ টাকার সবজিতে দুই দিন যায় না। কিন্তু ২০০ টাকার ব্রয়লার মুরগি কিনলে ২ দিন যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, জুলাই থেকে সবজির দাম চড়া। গত দুই সপ্তাহে দাম আরও বেড়েছে। যেসব সবজি আগে প্রতি কেজি ৫০-৭০ টাকার মধ্যে ছিল, সেটা এখন ৮০-১০০ টাকা। সবজির দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান যাত্রাবাড়ী এলাকার সবজি ব্যবসায়ী রবিউল হক। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে পণ্য নষ্ট হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যেতে আরও কিছু দিন লাগবে। ফলে অন্যান্য বছর নভেম্বরের আগে সবজির দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও তার ধারণা এবার দাম মানুষের নাগালের বাইরেই থাকবে। আলুর দামও নির্ভর করছে নতুন মৌসুম ও সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর। ভোজ্যতেলের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, শীতে পামসহ সয়াবিন জমে যায়। যে কারণে শীতে ভোজ্য তেলের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। জানা গেছে, দেশে আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরুতে আগাম পেঁয়াজ উঠতে পারে। এর আগে আমদানি বাড়ানো ছাড়া পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। ডিসেম্বরে নতুন আলু উঠতে শুরু করবে। ফলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে আলু দাম কমে আসবে। নভেম্বরের শেষ দিকে অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে নতুন মৌসুমের চাল বাজারে আসতে শুরু করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে চালের দাম কমতে পারে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ আপতত কমছে না।