অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

0
365

দৈনন্দিন রান্নার অন্যতম প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ পেঁয়াজ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে চলছে অস্থিরতা। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাম কমার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা আটকে আছে সান্ত¡নার পর্যায়েই। আদতে পেঁয়াজ সংকটের কোনও সমাধান হয়নি।
কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটি নামে একটি সংগঠনের মতে, গত ২ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে মোট ২৪ বার পেঁয়াজের দাম ওঠা-নামা করেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটি এখন দরিদ্র মানুষের কাছে রীতিমতো দুর্লভ বস্তু। এসময়ের মধ্যে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর কারণে ভোক্তার ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পেঁয়াজের এই সিন্ডিকেট প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। তারা যে পরিমাণ অর্থ হাতিয়েছে, তা দিয়ে আরেকটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। গত ১ জুলাই পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ টাকা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মাত্র একদিনের (২ জুলাই) ব্যবধানে পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি বেড়ে যায় ১৫ টাকা। এরপর থেকে নানা অজুহাতে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। বিক্রেতাদের অজুহাতের মধ্যে ছিলে আমদানি-খরচ বৃদ্ধি ও সরবরাহ কমে যাওয়া। গত চার মাসে মোট ২৪ বার পেঁয়াজের দাম ওঠা-নামা করেছে।
বলা হচ্ছে, দেশের ১৮ কোটি ভোক্তা কিছু সিন্ডিকেটের কাছে বন্দি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে ১৩ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট শনাক্ত হয়েছে। চার মাস সময়ের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী অন্তত পাঁচবার স্বীকার করেছেন যে, সিন্ডিকেটের কারণেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, তিনি এটা স্বীকার করলেও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যা ভোক্তাদের হতাশ, ব্যথিত ও ক্ষুদ্ধ করেছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে শুধু ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারে নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের বিষয়ে যে সুনাম তৈরি হয়েছে, এ সিন্ডিকেটের কারণে তা ম্লান হচ্ছে।
বিভিন্ন দেশ থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসছ, যার ক্রয়মূল্য কেজিপ্রতি ২৬ থেকে ৪২ টাকা, গড়ে ৩৪ টাকা। সে হিসাবে যে পরিমাণ বিদেশি পেঁয়াজ আসছে, তার বিক্রয় মূল্য ৫০ টাকার বেশি হওয়া অস্বাভাবিক। অথচ সম্প্রতি খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। ক্ষেত্র বিশেষে সেটা ১৫০ টাকাও ছাড়িয়েছে কোথাও কোথাও। দেশের ইতিহাসে পেঁয়াজের এটাই সর্বোচ্চ দাম। এ কারণে নিত্যপণ্যটি এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় বাইরে চলে গেছে আর দরিদ্র মানুষের কাছে তা রীতিমতো দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
জনগণের ভোগান্তি নিরসনে ও সিন্ডিকেট থেকে ভোক্তাকে রক্ষা এবং সুনাম রক্ষায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মতো মূল্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করা, পেঁয়াজ ছাড়াও যেকোনো পণ্যে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হলে সরকার থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ মূল্য ঘোষণা করা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে অংশীজনদের নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরে একটি সেল গঠন ও সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।