বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ ইং | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) | ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী

বাড়ি সারাবাংলা খুলনা অপেক্ষার পালা শেষ, পাইকগাছার ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য প্রথম দফায় ২২০ টি...

অপেক্ষার পালা শেষ, পাইকগাছার ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য প্রথম দফায় ২২০ টি ঘর প্রস্তুত

0
218

শেখ নাদীর শাহ্ ::


অপেক্ষার পালা শেষ। রাত পোহালেই পাইকগাছার তালিকাভূক্ত গৃহহীন ২২০ টি পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত ঘরগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরন কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

“মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সকল ভূমি ও গৃহহীণ মানুষকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনতে সরকারের কর্মসূচির অংশ হিসাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রথম ধাপে খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় ২২০ টি গৃহহীন মানুষের ঘর তৈরি করেছে। ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০ টায় ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য জমি ও বাড়ি বিতরনের এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এখন চলছে সর্বশেষ প্রস্তুতি।

জানাগেছে, এদিন প্রধানমন্ত্রী একযোগে দেশব্যাপী ৬৬,১৮৯ টি ঘর বিতরনের মধ্য দিয়ে মহতি এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

সূত্র জানায়, বিভাগের সর্বোচ্চ খুলনার পাইকগাছায় ৫১৭ টি ঘরের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় যার ২২০টি ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি ২৯৭ টি ঘর প্রস্তুত হবে দ্বিতীয় ধাপে। এলক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আরাফাতুল আলমের সার্বিক তত্তাবধায়নে সরকারি জমি চিহ্নিত ও তা পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে শুরুতেই। এলক্ষে তারা প্রথম থেকেই সার্ভেয়ারদের সাথে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন উপজেলার এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত তারা প্রায় ১০ একর সরকারি সম্পত্তির অবৈধ দখলমুক্ত করতে পেরেছেন।

সর্বশেষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হত বুধবার (২০ জানুয়ারি) উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের গড়ের আবাদ এলাকায় ১ একর সরকারি জায়গা পুনরুদ্ধার করেন।

এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন, কানুনগো মোজাম্মেল হোসেন, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এনামুল হক, পেশকার প্রতুল জোয়াদ্দার। উদ্ধারকৃত এ জমি দ্বিতীয় দফার গৃহ নির্মাণ কাজে লাগানো হবে বলে এসিল্যান্ড আরাফাতুল আলম জানান।

এদিকে উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার একর জমি একসনা বন্দোবস্ত যোগ্য কৃষি খাস জমি রয়েছে। গত প্রায় ৭ বছর যাবৎ যার একসনা বন্দোবস্ত কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে সরকার ভূমিহীনদের মধ্যে একসনা বন্দোবস্ত দিয়ে আবাদযোগ্য জমির (ধান চাষে) একর প্রতি ৫ শ’ টাকা আর মাছ চাষে ১ হাজার ৫ শ’টাকা করে রাজস্ব আদায় পূর্বক প্রতি বছর প্রায় অর্ধকোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিতর পাশাপাশি দীর্ঘ দিন তদারকি না থাকায় সরকারি ঐ সম্পত্তি প্রভাবশালী কিংবা পূর্বতন বন্দোবস্ত গ্রহীতাদের দখলে চলে যায়। অনেক এলাকায় সরকারি ঐসকল সম্পত্তির নক্সা মুছে একসাথে রাখা হয় মালিকানাধীন সম্পত্তির সাথে।

অনেক এলাকায় বন্দোবস্ত বিহীন সরকারি সম্পত্তি রাখা হয় ব্যক্তি দখলে। এমনকি ইতোপূর্বে আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের ঘরের পাশাপাশি খাস জমির কাগজ-পত্র বুঝে দিলেও দখল পাননি অনেক পরিবার। মামলার খড়গও বহন করছেন অনেক পরিবার। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে একাধিক এনজিও বিদেশী অর্থায়নে খাস জমির সুষ্ঠ বন্টনে কাজ করছেন অনেকটা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে। তবে নতুন করে বন্দোবস্ত কার্যক্রম শুরু হলে তার দখল নিয়ে সংঘর্ষ এড়াতে সরকারের সংশ্লিষ্ট আশ্রয়ন প্রকল্প নানাবিধ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে মুজিব বর্ষের ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে সম্ভাব্য ঝামেলা এড়াতে দখলদারদের অনেকেই নিশ্চুপ রয়েছেন।

এর আগে উপজেলা ভূমি অফিস জানায়, পাইকগাছায় প্রায় ৩ হাজার একর একসনা বন্দোবস্ত যোগ্য কৃষি খাস জমির প্রায় ২ হাজার একর বন্দোবস্ত দেয়া হয় গরীব, দুস্থ্য, অসহায় ও ভূমিহীনদের মাঝে। তবে আকষ্মিক ২০১২-১৩ অর্থ বছরের পর বন্দোবস্ত ও নবায়ন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।

এতে গত প্রায় অর্ধ যুগে ২ হাজার একর খাস জমি ব্যক্তি দখলে থাকলেও নবায়ন বন্ধ থাকায় তার রাজস্ব হারায় সরকার। পাশাপাশি নতুন বন্দোবস্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আরো প্রায় ১ হাজার একর খাস জমির অলিখিত নিয়ন্ত্রণ হারায় সরকার। এক কথায় সরকারি জমি কাগজে থাকলেও দখলে ছিলনা। সর্বশেষ মুজিব বর্ষের আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসনের কঠোর তত্ত্বাবধানে ক্রমান্বয়ে সরকারের দীর্ঘদিনের বে-দখলীয় সম্পত্তির দখল ফিরে আসছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আরাফাতুল আলম বলেন, ইতোমধ্যে পাইকগাছা উপজেলায় প্রথম দফায় বরাদ্দকৃত ২২০ টি ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি ২৯৭ টি ঘরের জন্য সরকারি বাসযোগ্য জায়গা চিহ্নিতপূর্বক অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে সেখানে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করা হবে।

এ প্রসঙ্গে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপজেলায় মোট ৫১৭ টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর বরাদ্দ হয়েছে। ইতোমধ্যে বাসযোগ্য সরকারি জমি চিহ্নিতপূর্বক ঐসকল এলাকায় প্রথম দফার ২২০টি ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২৩ জানুয়ারি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একযোগে ঘরগুলি উদ্বোধন করবেন।

সর্বশেষ বঙ্গবন্ধর স্বপ্ন পূরণে সরকারের যুগান্তকারী প্রকল্পের হাত ধরে উপজেলার সর্বস্তরের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষেরা স্বপ্ন দেখছেন নতুন ঘরের। যারা এতদিন পথে-প্রান্তরে,পরের জমিতে খুপড়ি কিংবা ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তারা এখন প্রকল্পের উপর ভর করে নতুন ঘরের গন্ধ ও অনুভুতি খুঁজছেন।

.td-all-devices img{ height: 165px; }