অনিয়মই যেখানে নিয়মে পরিণত : দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়

0
448

টাইমস প্রতিবেদক:
অনিয়মই যেখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে, এমন একটি বিদ্যালয়ের নাম দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মাউশি’র অনুমোদন ছাড়া বিদ্যালয়ে স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দেয়া যাবেনা। তবে এডহক কমিটি নিয়ম বহির্ভূত এই কাজটি করেছে। তাও আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্মৃতিবিজড়িত স্থানটিতে। ৭০ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে চুকনগর দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাঠে স্থাপিত শহীদ মিনারে অভিমুখে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) এনিয়ে দৈনিক খুলনা টাইমসসহ কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ পায়। প্রকাশিত সংবাদটি যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আমির হোসেন মোল্ল্যা’র দৃষ্টি কাঁড়েন।
গতকাল শনিবার ঘটনাস্থ পরিদর্শনে আসেন চেয়ারম্যান। এসময় স্থানীয় প্রবীণ ব্যাক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাদের স্মৃতিপট তুলে ধরেন। তারা জানান, আনুমানিক বেলা এগারোটার দিকে জাতির পিতা নির্বাচনী সফরে যশোর হয়ে চুকনগর আসেন। তখন প্রায় ঘন্টাখানেক এই বিদ্যালয় মাঠে অবস্থান করেন এবং স্থানীয় জনসভা শেষ করে পাইকগাছার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
এরপর বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এডহক কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজসে নামমাত্র মূল্যে মাঠের বিশাল একটা অংশ ভাড়া দিয়ে মূলত: নিজেদের পকেট ভারী করছেন। যা এডহক কমিটির এখতিয়ার বর্হিভূত।
এসময় বোর্ড চেয়ারম্যান, বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম খতিয়ে দেখেন এবং চরম অসেন্তাষ প্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নানান বিষয়ে বর্তমান শিক্ষকদের অবহেলা ও অনিয়ম তার চোখে ধরা পড়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রতিদিন বোর্ডের ওয়েবসাইটের প্রশ্ন ব্যাংকে প্রশ্ন জমা রাখা। শিক্ষকের পাঠদান করা অংশটুকুর উপরই প্রত্যেহ প্রশ্ন তৈরি এবং বোর্ডের ওবেসাইটে তা আপলোড করতে হয়। সর্বশেষ এক মাস আগে ৪ সেপ্টেম্বর প্রশ্ন জমা হয় বলে বোর্ড চেয়ারম্যান জানান।
এসময় চেয়ারম্যান আরও বলেন, অনুরুপ প্রতিটা ক্লাসের ভিডিওচিত্রও জমা দিতে হয়। তবে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অধিকাংশই তা করেনি। তাই আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া বিদ্যালয়ের ডিজিটাল পাঠদান ব্যবস্থাপনা নিয়েও অসন্তুষ্ট হন চেয়ারম্যান।
যশোর বোর্ড চেয়ারম্যান এসময় স্থানীয়দের কাছে উদাত্ত আহবান জানান, দিব্যপল্লী স্কুল মাঠ ও সেখানে স্থাপিত শহীদ মিনার সংরক্ষণে সকলকে এগিয়ে আসার। জানান, তিনি নিজেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ’র সাথে আলোচনা করে এটা সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
একইসাথে পবিত্র এই স্থানকে আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন এবং ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিবেন বলেও জানান। তখন প্রতিবেদন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বলা বাহুল্য, বোর্ড চেয়ারম্যানকে বিদ্যালয়ের আয়-ব্যায়ের সঠিক হিসাব দেখাতে ব্যর্থ হয় সংশ্লিষ্টরা। দায়িত্বে অবহেলার জন্য স্ব স্ব শিক্ষককে শোকজ করার নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী অফিসাল ছবি পরিবর্তন কেন করা হয়নি তার জন্য কৈফয়েত জারি করেন। পরিশেষে তিনি কতিপয় ভাড়াটিয়ার সাথে কথা বলে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন।
উল্লেথ্য, সর্বপ্রথম মাঠের বিশাল অংশ দখল করা হয়। তারপর সেখানে ইটভাটা গড়ে ওঠে। ভাটায় মাটির প্রয়োজন পূরণে মাঠের একাংশ অস্তিত্ব হারায়। ক্রামন্বয়ে তা পুকুরে পরিণত হয়। পুকুরটিও নামমাত্র মূল্যে লিজ দেয়া। তবে বিদ্যালয়ের ফান্ডে এই অর্থ জমা হয় না। বরং লিজদাতা মেরামতের বাহানা তুলে প্রতিবছর সংস্কারের বিল ধরিয়ে দেন ম্যানেজিং কমিটিকে। পুকুরের দুপাশ ঘিরে দোকান ঘর করা। সেখানেও আছে কারচুপি। এছাড়া স্কুলের মাঠে স্থাপিত ইট ভাটা মূল স্থাপনার জায়গায় এখন ধান চাষ করা হচ্ছে। ভাটা প্রতিষ্ঠান মাঠ ছেড়ে দিলে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি তখন ওই অংশটুকু নতুন করে লীজ দেন। লীজদাতা সেখানে ধান চাষ করছে।
এভাবেই একের পর এক ঘটনায় ক্রমান্বয়ে দখলের সাথে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারসহ স্কুল মাঠটি।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবিএম শফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, যে মাঠে বঙ্গবন্ধু পদার্পণ করেছেন, যে শহীদ মিনারে দাড়িয়ে তিনি ভাষণ দিয়েছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও তা সংরক্ষের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরং দিনে দিনে মাঠটি দখল হচ্ছে।
এবার শহীদ মিনারকে আড়াল করে স্থাপনা নির্মাণ, স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তির উপর বিরোধীদের চূড়ান্ত ছুরিকাঘাত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট প্রতাপ কুমার রায়ও শহীদ মিনারকে আড়াল করার প্রতিবাদ করেন। এতে রোষানলে পড়েন তিনি। তাকে নানাভাবে হেনস্থা করার এবং মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান প্রতাপ কুমার রায়।
দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, স্কুল পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে রেজুলেশন করে দোকান নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুলের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ কাজ চলছে। মূলত: শহীদন মিনারকে সুরক্ষিত করতে রাস্তার পাশে দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। পরে দেয়াল থেকে দোকান করা হলে স্কুলের আয় বাড়বে, এমন চিস্তা নিয়ে স্থাপনা করা হচ্ছে, উৎকোচ বিনিময়ে নয়।
স্কুল পরিচালনার এডহক কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্কুলের আয় বৃদ্ধির জন্য কমিটির সভায় দোকান নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নির্মান কাজ শেষ হলে উন্মুক্তভাবে দোকান ভাড়া বা বরাদ্দ দেয়া হবে।
আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন শিক্ষা কমিটির সভাপতি এড. প্রতাপ কুমার রায় বলেন, জাতির পিতার স্মৃতি সম্বলিত