স্পোর্টস ডেস্ক:
উরুগুয়ে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মধ্যে অবস্থিত একটি দেশ। এটি দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ (সুরিনাম ক্ষুদ্রতম)। দেশটির সরকারি নাম পূর্ব উরুগুয়ে প্রজাতন্ত্র (জবঢ়úনষরপধ ঙৎরবহঃধষ ফবষ টৎঁমঁধু) রেপুব্লিকা ওরিয়েন্তাল্ দেল্ উরুয়াই। উপকূলীয় শহর মোন্তেবিদেও উরুগুয়ের রাজধানী ও প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
১৯শ শতকের শুরু পর্যন্ত উরুগুয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় স্পেনীয় সাম্রাজ্যের একটি অংশ ছিল। এরপর কিছুকাল এটি পর্তুগিজদের অধীনে ছিল। ১৮২৮ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। উরুগুয়ের সংস্কৃতিতে স্পেনীয় ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের বড় প্রভাব পড়েছে। এখানকার সরকারি ভাষা স্পেনীয় ভাষা।
উরুগুয়ের আয়তন ১,৭৬, ২২০ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা মোট ৩৪ লাখ। বাংলাদেশের থেকে আয়তনে ২০ শতাংশ বড় হলেও আদমশুমারিতে ৪৪ গুন পিছিয়ে। একদিকে আটলান্টিক মহাসাগরের জলরাশি ছোঁয়া আর অন্যপাশে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের মতো দুই বিশাল আয়তনের দেশের সীমানায় যেনো আনেকটা লুকিয়ে আছে বিশ্বমানচিত্রের এই ছোট্ট দেশটি।
উরুগুয়েতে নগরায়নের হার উচ্চ। প্রায় ৯০% জনগণ শহরে বাস করেন। ৪০%-এরও বেশি লোক রাজধানী মোন্তেবিদেওতে বাস করেন। উরুগুয়ের বেশির ভাগ লোক ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। পর্যটন শিল্প উরুগুয়ের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দেশটির ছবির মতো সুন্দর সমুদ্রসৈকতগুলি সারা বিশ্বের পর্যটকেরা বেড়াতে আসেন। কৃষিকাজ ও গবাদি পশু পালন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ। আয়োজক লাতিনেরই আরেক সুপার পাওয়ার ব্রাজিল। এর আগে তিনটি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো কাংখিত সাফল্য পায়নি ব্রাজিলিয়ানরা। অথচ, তাদের চেয়ে ফুটবল এতটা আপন নয় আর কোনো দেশের। সেই দেশটি নিজেদের দেশে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে- এ কথা যেন গেঁথে গিয়েছিল ব্রাজিলের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।
১৯৫০ বিশ্বকাপে সাধারণত কোনো সেমিফাইনাল, ফাইনাল ছিল না। প্রথমে গ্রুপ পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সেরা চারটি দলকে নিয়ে আরও একটি রাউন্ড রবিন লিগ। শেষ পর্বের লিগের সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী দলটিই চ্যাম্পিয়ন। কাকতালীয়ভাবে ব্রাজিল-উরুগুয়ের শেষ ম্যাচটিই পরিণত হয়েছিল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে। যেন, সত্যিকারার্থে ফাইনাল।
এই ম্যাচে ব্রাজিল ড্র করলেও চ্যাম্পিয়ন। উরুগুয়েকে জিততেই হবে। এমন পরিস্থিতিতে ব্রাজিল যেভাবে উড়ছিল, তাতে তারাই নিশ্চিত চ্যাম্পিয়ন- এটা ধরে নিয়েছিল সবাই। এমনকি ম্যাচের দিন দৈনিক ‘ও মুনডো’ ব্রাজিলের গোটা দলের ছবি ছাপিয়ে তার নিচে ক্যাপশন দিয়েছিল- ‘এরাই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’। আরেকটি জাতীয় উৎসব পালনের মহামঞ্চ হিসেবে প্রস্তুত ছিলো ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়াম মারাকানা; কিন্তু ১৯৫০ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে ২-১ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় উরুগুয়ে। সে সঙ্গে ইতিহাসের অন্যতম সেরা চমক উপহার দেয় তারা। শোকের সাগরে ভেসা যায় গোটা ব্রাজিল।
উরুগুয়ের চমক সেই বিশ্বকাপেই থেমে যায়। এরপর আর পারেনি তারা। অথচ, ব্রাজিলের জয়রথ চলছেই। উরুগুয়ে আর কোনো সোনালি প্রজন্ম উপহার দিতে পারেনি। ২০১০ সালে পেরেছিল। দিয়েগো ফোরলান, লুইস সুয়ারেজদের হাত ধরে সেবার উরুগুয়ে সেমিফাইনালও খেলেছিল। কিন্তু সেমিতেই শেষ হয় তাদের দৌড়।
মাঝে সেমিফাইনাল খেলেছিল আরও দুইবার। ১৯৫৪ এবং ১৯৭০ সালে। ২০১৪ সালে আবারও ব্রাজিলে খেলতে গিয়েছিল উরুগুইয়ানরা; কিন্তু কোনো চমক উপহার দিতে পারেনি। বিদায় নিয়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই। যদিও, সেবার দিয়েগো ফোরলান ছিলেন একেবারে নিষ্প্রভ। লুইস সুয়ারেজ কামড়কাণ্ডে অভিযুক্ত। বিশ্বকাপটা তাদের জন্য অনেকটা বিষাদময় হয়ে উঠেছিল।
১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের পর থেকেই লাতিন আমেরিকার জায়ান্টদের কাতারে নামা লিখে রাখে উরুগুয়ে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার পর আরেকটি সেমিফাইনাল খেলতে লা সেলেস্তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৪০ বছর। ২০১০ সালে দিয়েগো ফোরলান, লুইস সুয়ারেজদের কল্যাণে সেমিতে উঠেছিল তারা। এরপরের বছর কোপা আমেরিকার শিরোপাও জিতে নেয় উরুগুইয়ানরা।
দিয়েগো ফোরলান নেই, তবুও উরুগুয়ে এবারও আন্ডারডগ হিসেবে বিশ্বকাপ শুরু করবে এবং যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে তারা। দলের সেরা তারকা নিঃসন্দেহে লুইস সুয়ারেজ। তার সঙ্গে রয়েছেন এডিনসন কাভানির মত অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। এছাড়া স্ট্রাইকার ক্রিশ্চিয়ান স্টুয়ানি, মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান রদ্রিগেজ, গ্যাস্টন র্যামিরেজ, ডিফেন্ডার ম্যাক্সি পেরেরা, দিয়েগো গোডিন, হোসে মারিয়া জিমেনেজরা রয়েছেন এবারও অস্কার তাবারেজের দলে।
এ গ্রুপে উরুগুয়ে রয়েছে রাশিয়া সৌদি আরব এবং মিসরের সঙ্গে। নিশ্চিতভাবেই গ্রুপটা সমশক্তির দলের কারণে বেশ শক্তিশালী এবং উরুগুয়ের সামনে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে সহজে পরের রাউন্ডে চলে যাওয়ার।