মংলা প্রতিনিধি:
মংলা বন্দরের জেটি ইয়ার্ডের সেড থেকে চুরি হওয়া দুই কোটি টাকা মুল্যের বিলাশ বহুল প্রাডো গাড়িটি ঢাকার বারিধারা থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। গতকাল ৯ জুন শনিবার ভোর রাতে র্যাব-১ এর একটি টিম এ গাড়িটি উদ্ধার করলেও এর সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি তারা। তবে গাড়ী পাচার সিন্ডিগেটে’র সদস্য মোঃ করিম শেখকে গত ৭ জুন রাতে বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট এলাকা থেকে আটক করে র্যাব-৬ এর সদস্যরা। তারই দেয়া তথ্যমতে শনিবার ভোররাতে ঢাকার বাড়িধারা একটি গ্যারেজ থেকে র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা নিরালশ চেষ্টা চালিয়ে গাড়ীটি উদ্ধার করে। তবে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের ধরতে জোর তৎপর চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
বন্দর সুত্রে জানা যায়, গত ৪ জুন রোববার বিকেলে বন্দর কর্তৃপক্ষের জেটির অভ্যন্তরের ৫নং সেডে থাকা একটি প্রাডো জীপ গাড়ী ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় জনৈক এক ব্যক্তি। এরপর ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা কাগজপত্র মিলিয়ে দেখেন ভূয়া ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরিকৃত কাগজপত্র জেটির মুল গেইটে জমা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সোমবার বিকালে বিষয়টি জানাজানি হলে মঙ্গলবার এ ঘটনায় ট্রাফিক অফিসার মিজানুর রহমান মংলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ওই সময়ই বন্দর জেটি গেইটে ও ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব থাকা ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর মোহাম্মদ আলী ও সিনিয়র আউটডোর অ্যাসিস্টেন্ট মোঃ তোফাজ্জেল দুই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব অবহেলায়র দায়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের এক কর্মকর্তা জানায়, বন্দরের জেটি ইয়ার্ড থেকে শুধু গাড়ী নয় এর আগে অনেক মালামাল পাচার ও চুরি হয়েছে। এখনও ১ থেকে ৫নং জেটি ইয়ার্ডের সেডে অনেক মালামাল পড়ে আছে বেশ কয়েক বছর ধরে। যার মালিকও খুজে পাওয়া যায়না, যার ফলে জেটিতে থাকা চোর গ্রæপটি প্রতিনিয়ত চুরি করছে। এর আগেও একই কায়দায় প্রতারক চক্র একটি বিএমডবিøউ গাড়ী ও ২টি কন্টেইনার ভেঙ্গে প্রায় কোটি টাকার কাপড় চুরির ঘটনা ঘটেছে। যার মামলার আসামী বন্দর জেটির ড্রেইভার ছোবাহান ও তার সহযোগী আব্দুর রহিম এখনও বহালতবিয়তে চাকরী করছে। কিন্ত কোন বিচার না হওয়ায় চোর ও পাচারকারীরা অনেক সাহস পেয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে জেটির অভ্যন্তর থেকে অসৎ উদ্দেশ্যে অনুমতিবিহীনভাবে একটি কন্টেইনার বাহিরে নিয়ে আসেন তড়িৎ ও যান্ত্রিক বিভাগের অপারেটর মিজানুর রহমান। এতে তিনি ধরা পড়ে যাওয়ায় ভুল স্বীকার করে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় অপারেটর মিজান। এছাড়াও বন্দর চেয়াম্যান বন্দরের কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্রæত জরুরী বৈঠক করেন তার সভাকক্ষে। বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা থেকে গাড়ী পাচার হওয়ার বিষয়টি ভাবীয়ে তুলেন বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে। এ গাড়ী উদ্ধার ও পাচারের সাথে জরিতদের ধরতে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (তড়িৎ ও যান্ত্রিক) লেঃ কর্ণেল মিজানুর রহমান শাহ চৌধুরীকে প্রধান করে মঙ্গলবার দুপুরে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মাংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সোহাগ মাহমুদ এঘটনার সত্যতা স্বিকার করে বলেন, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গাড়িটি উদ্ধার করেছে। গত ৪জুন সোমবার বিকালে বন্দর জেটির ৫নং গাড়ী শেড থেকে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ল্যান্ড ত্রুজার প্রাডো ২০১৮ মডেলের এ গাড়ির চেচিস নং- পিআরজে-১৫০০০০৮৩৬৫৪, চুরি করে নিয়ে যায় একটি প্রতারক চক্র। এর পরই এ ঘটনায় মংলা থানায় অজ্ঞত নামা কয়েকজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গাড়িটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার ‘অটো মিউজিয়াম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান জানান, মংলা বন্দরের সুনাম নষ্ট হবে এমন কোনো কাজ কর্তৃপক্ষ হতে দেবে না। বন্দর থেকে যে গাড়িটি চুরি হয়েছে তার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় গাড়ি রাখার শেড ইনচার্জ (ট্রফিক পরিদর্শক) মিয়া মহাম্মদ আলী, সিনিয়র আউটরডার অ্যাসিস্টেন্ট তোফাজ্জেল হোসেন মিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।