৪ বছরেই কপিলমুনির তালতলা-কাশিমনগর ৬ কিলোমিটার সড়ক দেবে গেছে

0
421

শেখ নাদীর শাহ্,কপিলমুনি॥
বিভিন্ন ইট ও টালী ভাটার মাটিবাহী ট্রাক-ট্রলি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপকরণবাহী ট্রাকের অবিরাম অবাধ চলাচলে ডেবে গেছে মাত্র ৪ বছর আগে নির্মিত খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির তালতলা-কাশিমনগর সড়কটি। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোপরেশন এজেন্সি (জাইকার) যৌথ অর্থায়নে ৫ কোটি ৫১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৬ শত ১৬ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৮৬০ মিটারের রাস্তাটি। ইতোমধ্যে সড়কের সমুদয় অংশে বড় বড় ফাঁটল ধরেছে। দেবে গেছে অন্তত অর্ধশতাধিক স্থান। বিভিন্ন অংশের পিচ উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় কোথাও কোথাও চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবুও থেমে নেই ট্রাক-ট্রলির অবাধ চলাচল।
বিভিন্ন সময় স্থানীয়,জাতীয় ও অনলাইন দৈনিকে ব্যাপক লেখালেখি হলেও এখন পর্যন্ত কতৃপক্ষ ট্রাক-ট্রলির চলাচল বন্ধে কার্যত কোন পদক্ষেপ কিংবা রাস্তাটির সংষ্কারে কোন প্রকার ভূমিকাই রাখেনি। এমন পরিস্থিতিতে চলতি ইট ভাটা মৌসুমের যেকোন সময় সড়কটি বিচ্ছিন্ন হয়ে বড় ঘরণের দূর্ঘটনার পাশাপাশি বন্ধ হতে পারে বিস্তির্ণ জনপদের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
খুলনার ডুমুরিয়া,পাইকগাছা ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সালতা নদীর ওপারে ডুমুরিয়ার মাগুরখালী আর এপারে পাইকগাছার তালতলা এলাকায় নব নির্মিত ব্রীজের একমাত্র এ্যাপ্রোচ সড়ক ভায়া তালতলা-কপিলমুনি ভায়া কাশিমনগর বটতলা ৫৮৬০ মিটার সড়কটি গত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোপরেশন এজেন্সি (জাইকার) যৌথ অর্থায়নে ৫ কোটি ৫১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৬ শত ১৬ টাকা ব্যয়ে নির্মিাণ করে।
তবে নির্মাণ পরবর্তী অদ্যবধি বিভিন্ন ইট,টালী ভাটা ব্রীজের অপর প্রান্ত ডুমুরিয়া এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপকরণবাহী ভারী ১০ চাকার ট্রাকের অবিরাম অব্যাহত চলাচলে গেল দু’বর্ষা মৌসুমে সড়কটির বিভিন্নস্থানে অন্তত ১ শ’রও বেশী স্থানে ১ থেকে দেড় কোথাও দু’ফুট পর্যন্ত দেবে রীতিমত বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নির্মাণের মাত্র ৪ বছরের মধ্যে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের মান,ইট ও টালী ভাটা কতৃপক্ষসহ বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবাধ সড়ক শাষনকেই দুষছেন। উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে বিস্তীর্ণ জনপদের লাখ লাখ মানুষের আশংকা,যেকোন সময় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্নর পাশাপাশি ঘটে যেতে পারে কোন প্রাণঘাতি দূর্ঘটনা।
জানাগেছে,সড়কটি নির্মাণের পর থেকে প্রতিদিন দু’উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের পাশাপাশি চলাচল করে আসছে ছোট ছোট যানবাহন। তবে সাম্প্রতিক বেহাল পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি দূর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণে।
এলাকাবাসী জানায়,সড়কটি নির্মাণের পর থেকে অদ্যবধি স্থানীয় বিভিন্ন ইট ও টালী ভাটার মাটি ও ইটবাহী ট্রাক-ট্রলি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপকরণবাহী ১০ চাকার ভারী ট্রাক চলাচল করছে। সড়কটি বাঁচাতে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে বিভিন্ন সময় ইট ও টালী ভাটার ট্রাক-ট্রলি বন্ধ থাকলেও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে তারা ফের ভারী যানবাহন চলাচল অব্যাহত রাখে। এতে রীতিমত ঝুঁকির পাশাপাশি সড়কের ভবিষ্যত নিয়ে বহুবিধ আশংকা জেঁকে বসেছে। প্রথম থেকেই সড়কে কোন তদারকি বা মনিটরিং না থাকায় সড়কটি মূলত অরক্ষিত হয়ে পড়ছে আশংকা করে পত্রিকান্তে ব্যাপক লেখালেখি হলেও স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ন্যুনতম টনক নড়েনি। এনিয়ে এক অজ্ঞাত কারণে উপজেলা প্রশাসনও নূন্যতম আগ্রহ দেখায়নি।
শুধু এখানেই শেষ নয়,অবাধ বেপরোয়া গতির যন্ত্র দানবের কারণে সড়কটিতে প্রায়ই ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটছে। ইতোপূর্বে জীবনহানির মত ঘটনাও ঘটেছে সড়কে।
স্থানীয়রা জানায়, ভাটা মালিকদের সাথে গোপন যোগসাজশে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসকল অবৈধ যান চলাচলে তাদের সুযোগ করে দেয়। আর এই সুযোগে ইট ও টালী ভাটার মালিকরা তাদের প্রধান কাঁচামাল মাটির যোগান পেতে সড়কের পাশের নাছিরপুর,কাবুলিয়া,তালতলা ও ফটিকমারি সরকারি খালের নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় সেখান থেকে মাটি কেটে নেয় অবাধে। চলতি বছর ইট ভাটা মৌসুমে এখনো খালের পানি না শুকানোয় ঐ সড়ক দিয়ে তারা ডুমুরিয়া এলাকা থেকে নদী-খালের মাটি কেটে ঐ সড়ক পথেই ভটায় নিচ্ছে।
এব্যপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, ভাটা মালিকদের খাস খাল থেকে মাটি কর্তন ও সড়কটি দিয়ে তা সরবরাহের ব্যাপারে বারংবার নিষেধ করলেও তারা কারো কোন কথায় কর্ণপাত করেননা।
যৌথ মালিকানায় পরিচালিত কাশিমনগর আরবিএস ইট ভাটার মালিক শেখ রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি দম্ভের সাথে এ প্রতিবেদককে বলেন,ভাটার সব নিয়ম-কানুন মেনে তারা ভাটা পরিচালনা করছেন। এছাড়া মাটি নিতে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন,এমনকি সকলকে ম্যানেজ করেই তারা ট্রলিযোগে রাস্তা দিয়ে খালের মাটি কেটে নিয়ে আসেন বলেও জানান।
স্বাধীনতা পরবর্তী বঞ্চিত জনপদের সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামীলীগের দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণ ও দু’উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষের যাতায়াতের জন্য একমাত্র রাস্তাটি নির্মাণ করলেও তার রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে মাত্র কয়েক বছরেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত সড়কটির বেহাল অবস্থার জন্য সড়ক শোষকদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের সরকারের সংশ্লিষ্ঠ উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।