২০ শয্যায় উন্নীত হচ্ছে পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি ভরত চন্দ্র হাসপাতাল

0
218

পাইকগাছা প্রতিনিধি:
চলতি সরকারের তৃতীয় বারের শাষনামলের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় অবশেষে পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী ১০ শয্যার কপিলমুনি হাসপাতাল ২০ শয্যায় উন্নীত হয়ে নামকরণ হচ্ছে ভরত চন্দ্র হাসপাতাল। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এলক্ষে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) আরাফাতুল আলমের তত্বাবধানে হাসপাতালের সীমাণা জরিপ কাজ শেষ করেছেন।
বিশ্বস্থ একাধিক সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সরকার ৫ তলা ফাউন্ডেশনে হাসপাতালের দ্বিতল ভবনের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।
দক্ষিণের উপকূলীয় বিস্তীর্ণ জনপদের লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কথা বিবেচনা করে আধুনিক কপিলমুনির প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ১৯১৫ সালের ৭ এপ্রিল নিজস্ব ২ একর সম্পত্তির উপর নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ২০ শয্যা বিশিষ্ট যাদব চন্দ্র চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী ও ভরত চন্দ্র হাসপাতাল।
প্রথমত তৎকালীন জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠাতার প্রদেয় অর্থের লভ্যাংশ দ্বারা পরিচালিত হত হাসপাতালটি। পরে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৫ সালে হাসপাতালটি সরকারিকরণ হলেও ২০ শয্যার স্থলে ১০শয্যায় নামিয়ে আনা হয়।
জাগ্রত পীর হযরত জাফর আউলিয়া, মহাভারতীয় যুগের কপিলেশ্বর মুনি, বৌদ্ধ যুগের বাগনাথ মহন্ত’র স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ তীরবর্তী দক্ষিণ খুলনার সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি (বিনোদ গঞ্জ) প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্মীয়,অর্থনৈতিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে কপিলমুনির শ্রীব্রদ্ধির পাশাপাশি জনপদের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে মডেল হিসেবে সেই ব্রিটিশ শাষনামলে দেশব্যাপী রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।
সুন্দরবনাঞ্চলীয় জনপদে সভ্যতা সৃষ্টির পর বিভিন্ন ধর্ম প্রচারক,মনিষীর পর মূলত রায় সাহেবের অসাম্প্রদায়িক চেতনার উপর ভর করে এখনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান।
ভৌগলিক অবস্থান বিন্যাসে খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর সীমানা প্রায় ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত কপিলমুনি হাসপাতালটি ব্যাসার্ধের মধ্যে সেই স্মরণাতীত কাল থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিত করে আসছে।
জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য স্যার পি.সি.রায়’র অনুপ্রেরণায় বিনোদ বিহারী সাধু শুধু হাসপাতালই নয়, শিক্ষা প্রসারে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির, অমৃতময়ী টেকনিক্যাল স্কুল, পানীয় জলের সংকট মোচনে সহচরী সরোবর, খেলা-ধুলার উন্নয়নে পাবলিক স্টেডিয়াম, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংক’র পাশাপাশি বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনির শ্রীবৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠা করেন (বিনোদ গঞ্জ)। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বেদ মন্দির, কপিলেশ্বরী কালী মন্দিরসহ উপসানালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। আজো জনপদের সাধারণ মানুষ কৃতজ্ঞ চিত্তে তাঁকে স্মরণ করে।
শুধু এখানেই শেষ নয়। স্বাস্থ্য-সেবায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন সময়ে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পাশাপাশি হাসপাতালটিতে স্থাপন করেন, এক্স-রে মেশিন।
সূত্র জানায়, সেসময় খুলনা সদর হাসপাতালের উন্নত চিকিৎসার জন্য কোন এক্স-রে মেশিন না থাকায় তৎকালীন জেলা বোর্ডের প্রেসিডেন্টসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তার বিশেষ অনুরোধে কপিলমুনি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি সদর হাসপাতালে নিজ খরচে ভবন নির্মান সহ প্রতিস্থাপন করা হয়, যা আজও দৃশ্যমান।
উপজেলার কপিলমুনির নাছিরপুর গ্রামের শেখ নেছার আলী,সহচরী বিদ্যা মন্দিরের সাবেক প্রধান শিক্ষক হরেকৃষ্ণ দাশ, মেহেরেুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার শম্পা, কিন্টার গার্ডেনের প্রধান শিক্ষক মুজিবর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার, পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনন্দ মোহন বিশ্বাস, সাংবাদিক এস,এম,মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজসহ জনপদের বিশিষ্ঠ জনরা জানান, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বর্ধিষ্ণু জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় জনবল এবং অবকাঠামোগত অবস্থা কপিলমুনি হাসপাতালের নেই। এলাকার প্রবীন ব্যক্তিত্ব ও সমাজ সেবক আলহাজ্ব এরফান আলী মোড়ল জানান, হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ বাহার, সাবেক উপাধ্যক্ষ আফসার আলী জানান, বৃহত্তর খুলনার ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ও বাহক হিসেবে প্রাচীণ জনপদ কপিলমুনির নাম অগ্রগণ্য। বিভিন্ন সময়ে জনপদে জন্ম গ্রহন করেছেন, বরেণ্য ব্যক্তিরা।
এসময় তারা আরো জানান, বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে জনপদের সচেতন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আধুনিকায়নের আন্দোলন করে আসছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মিডিয়ার স্থানীয় প্রতিনিধিদের কথাও কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন তারা। এরআগে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য এড. শেখ মোঃ নূরুল হক স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর কপিলমুনি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা উন্নীত করনে একটি ডিও দিয়েছিলেন, যার স্মারক নং-বাজাসস/১০৪/খুলনা-৬/২০১৮-১০৯১ নং স্মারকে তিনি ঐতিহাসিক বর্ধিষ্ণু জনপদ কপিলমুনি হাসপাতালের অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি শয্যা সংখ্যা কমপক্ষে ২০ শয্যায় উন্নিত করণ এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি এবং সময়ের দাবিও বটে বলে উল্লেখ করেন।
এরপর থেকে জনপদের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষরা মূলত যার যার অবস্থান থেকে হাসপাতালটির আধুনিকায়নে নিরব আন্দোলন গড়ে তোলেন। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এপ্রতিনিধিকে জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি কপিলমুনি হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠাতার মূল নাম করণ ভরত চন্দ্র হাসপাতাল নামে ৩১ শয্যায় উন্নিত হচ্ছে। এর পরি প্রেক্ষিতে ১৬ জানুয়ারী উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না,উপজেলা সহকারী কমিশনার আরাফাতুল আলমের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের জরিপকাজ সম্পন্ন করেন। তবে সর্বশেষ সূত্র জানায়, ৩১ শয্যা নয়,আপাতত ২০ শয্যায় ফিরে যাচ্ছে কপিলমুনি হাসপাতাল। তবে এর নাম করণের জটিলতা নিরসনে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা হয়নি।