২০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল নির্মাণ

0
300

পাইকগাছা প্রতিনিধি:
সুন্দরবন উপক‚লীয় পাইকগাছার কপিলমুনিবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা পূরণে কপিলমুনি হাসপাতালটি ২০ শয্যায় উন্নিতর পাশাপাশি এর আধুনিক কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজের টেন্ডার হচ্ছে চলতি মাসেই। জনদাবির প্রেক্ষিতে স্বনামে কপিলমুনি ভরত চন্দ্র হাসপাতাল নামে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে বলে জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, কার্যাদেশ প্রাপ্তির ১৮ মাসের মধ্যে নতুন ভবনের কাজ সমাপ্তির নির্দেশনাসহ চলতি মাসে টেন্ডার আহবান করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
উপক‚লীয় বিস্তীর্ণ জনপদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির আধুনিক চিকিৎসার কথা বিবেচনায় নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলতি বছরেই এর নির্মান কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। প্রায় ৩ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত কপিলমুনি হাসপাতালটি একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রূপদানের অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালের মূল পাঁচতলা ভবনের ২য় তলা পর্যন্ত নির্মানে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে চলতি মাসেই যার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে।
মন্ত্রনালয় হতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আপাতত ২০ শয্যার কপিলমুনি হাসপাতাল ভবনটি হবে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন। থাকছে অপারেশন থিয়েটার। প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে হাসপাতালটি ভবিষ্যতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা যাবে বলে অন্য একটি সূত্র জানায়।
প্রসঙ্গত, ১৯১৫ সালের ৭ এপ্রিল আধুনিক কপিলমুনির প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ২০ শয্যা বিশিষ্ট যাদব চন্দ্র চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী ও ভরত চন্দ্র হাসপাতাল হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন জেলা পরিষদ, হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতার প্রদেয় অর্থের লভ্যাংশ দ্বারা পরিচালিত হত। ভৌগলিক অবস্থান বিন্যাসে খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর সীমানার প্রায় ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কপিলমুনি হাসপাতালটি লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য স্যার পি সি রায় এর অনুপ্রেরণায় বিনোদ বিহারী সাধু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য বাণিজ্যিক কেন্দ্র, টেকনিক্যাল স্কুল, ধর্মীয় উপসানালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে হাসপাতাল নির্মানে তৎকালীন সময়ে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ এক্স-রে মেশিন স্থাপন করেন। তৎকালীন খুলনা সদর হাসপাতালেও উন্নত চিকিৎসার জন্য কোন এক্স-রে মেশিন ছিলনা। উর্দ্ধতন কর্মকর্তার বিশেষ অনুরোধে কপিলমুনি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি সদর হাসপাতালে নিজ খরচে ভবন নির্মানসহ প্রতিস্থাপন করা হয়, যা আজও দৃশ্যমান। অথচ প্রাচীনতম এ হাসপাতালে চিকিৎসার মানের কোন পরিবর্তন আসেনি।
কপিলমুনি হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জনবল এবং অবকাঠামো উন্নয়ন আন্দোলনের প্রবীন ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব এরফান আলী মোড়ল ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শেখ নেছার আলী জানান, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রাচীণ জনপদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির চিকিৎসা প্রদানে প্রয়োজনীয় জনবল এবং অবকাঠামোগত অবস্থা কপিলমুনি হাসপাতালের নেই। সে কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে সংসদ সদস্যের সুপারিশ সম্বলিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের স্বাক্ষরিত এসংক্রান্ত একটি আবেদনপত্র জমা দেয়া হয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ খুলনার দু’জন কৃতি সন্তান সাবেক স্বাস্থ্য ও বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নের সংবাদ পেয়ে তারা খুশী। এসময় তারা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
দক্ষিণ খুলনার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বেলাভূমি প্রাচীন জনপদ কপিলমুনিতে স্থাপিত হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নিতকরণে এলাকার সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি ছিল। সর্বশেষ চলতি সরকারের তৃতীয় দফার শাসনামলে এর বাস্তবায়নে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন জনপদের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য, কপিলমুনি হাসপাতালটি প্রায় তিন একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে একতলা বিশিষ্ট বহি:বিভাগ, দ্বিতল বিশিষ্ট আন্তঃ বিভাগ, পুকুর ২ টি, বেড সংখ্যা ১০টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার -৬টি, অক্সিজেন ফ্লোমিটার ২টি, আবাসিক ভবন (সবগুলি পরিত্যাক্ত) এবং জনবল কাঠামো, ডাক্তার ২ জন, নার্স (পদ ৪টি) শূন্য ১টি, ফার্মসিষ্ট, অফিস সহকারী ২জন এবং রয়েছে ২জন পরিদর্শন কর্মী। আয়া, বাবুর্চি, নাইটগার্ড, ওয়ার্ডবয় ও ফ্লোর ক্লিনার শূণ্য। হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স, অপারেশন থিয়েটার, লেবার রুম ও লেবার ওয়ার্ড নাই।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কওছার আলী জোয়ার্দ্দার জানান, রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ২০ শয্যা বিশিষ্ট যাদব চন্দ্র চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী ও ভরত চন্দ্র হাসপাতাল হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তার নাম পরিবর্তনপূর্বক ১০ শয্যায় নামিয়ে আনা হয়। সর্বশেষ হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এর কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে অর্থ বরাদ্দে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দ্রæত নির্মান কাজ বাস্তবায়নের দাবি জানান।