সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু আতঙ্ক ॥ আক্রান্ত ৯ ॥ সচেতনতায় র‌্যালি

0
348

মেহেদী আলী সুজয়, সাতক্ষীরা :
ডেঙ্গু আতঙ্কে সাতক্ষীরা বাসী। ২২ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯ জন রুগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে। তারা সাতক্ষীরা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিচ্ছেন। তবে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ পালনসহ নানা জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করা হয়েছে।
ডেঙ্গু আক্রান্তরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার দরগাপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাবুর আলীর ছেলে হামিদুল ইসলাম (৩৫)। তিনি সর্ব প্রথম গত ২২ জুলাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। এর পর পর্যায়ক্রমে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তারা হলেন, দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া এলাকার মাহাবুবার রহমানের ছেলে মেহেদি হাসান (২৮), সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চুপড়িয়া মাধবকাটি গ্রামের মৃত মালেক সরদারের ছেলে দিনমজুর আব্দুর রকিব ( ৫০), একই উপজেলার থানাঘাটা গ্রামের মীর ইদ্রিস আলীর ছেলে কলেজ ছাত্র মীর শামিম নাহিদ (১৮), তালা উপজেলার আঠারই গ্রামের কলেজ ছাত্রী সারবিনা দীবা (১৯), কলারোয়া উপজেলার হঠাৎগঞ্জ গ্রামের আব্দুল মাজেদের স্ত্রী শাকিলা পারভীন (৩২), এছাড়া একজন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন এবং অপর একজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। তবে তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৭ জন ঢাকা থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরায় এসেছেন। বাকী দুই জন দিনমজুর রকিব ও গৃহবধু শাকিলা তাদের স্ব স্ব এলাকা থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, সাতক্ষীরায় এ পর্যন্ত ৯ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অনেকেই আতঙ্কিত। যেকোন সময় যে কেউ এই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এ ব্যাপারে জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি এড. ফাহিমুল হক কিসলু জানান, এখনই সমস্ত নাগরিককে সচেতন করতে হবে এবং যেকোন মূল্যে প্রত্যেক স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামুলক কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এখনই ডেঙ্গু শুরু হয়েছে তা অতি দ্রুত নির্মুল করতে না পারলে এর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ফলে প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। তা না হলে এর প্রাদুর্ভাব আরও বিস্তার হতে পারে। তবে, মশক নিধনে বাজেট থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তেমন কোন ভুমিকা পালন করেননা বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার জয়ন্ত কুমার সরকার জেলায় ৯ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এর মধ্যে একজন মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাকী ৬ জন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া একজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে এবং অপর একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ইতিমধ্যে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে চিকিৎসক ও শিক্ষকরা সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করেছে। তিনি আরো জানান, আগামীকাল সোমবার থেকে সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্ণার নামে একটি মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা হবে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আসাদুজ্জামান জানান, গাঁয়ে ব্যাথা ও জ্বর হলে আতঙ্কের কিছু নেই। সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নেবার কথা বলেন তিনি। একই সাথে তিনি পানি ও পানি জাতীয় খাদ্য ( ডাব, শরবত, পেঁপে) বেশী খাবার পরামর্শও দেন। এছাড়া বাড়ির আঙিনায় বদ্ধ ময়লা পানি পরিষ্কারসহ বাড়িতে সবাইকে মশারি টানিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেন। এছাড়া স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ফুলহাতা শার্ট পরে স্কুল-কলেজে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপরে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ইতোমধ্যে জনসচেতনা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ে যেসমস্ত কর্মী আছে আমরা তাদেরকেও সচেতনতামূলক প্রচারে নির্দেশ দিয়েছি। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সব ধরণের প্রচারণা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করা, ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা, বসত বাড়ির আশপাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং কাজ চলছে।